পরনে জি-স্যুট। মাথায় হেলমেট।
সুখোই ৩০-এর ককপিটে বসবেন কি সামরিক বাহিনীর সুপ্রিম কম্যান্ডার? তাঁকে নিয়ে শব্দের গতিতে উড়বে যুদ্ধবিমান! নাকি রাজস্থানের মরুভূমিতে ধুলো উড়িয়ে ছুটবে টি ৯০ ট্যাঙ্ক? কিংবা পারমাণবিক ডুবোজাহাজ আইএনএস অরিহন্ত-এ চেপে আরব সাগরের গভীরে পৌঁছে যাবেন তিনি!
কোনটা?
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে তো বটেই! সেনা, বায়ুসেনা এবং নৌসেনার সদর দফতরেও এখন এই নিয়েই জোর জল্পনা।
আগামিকাল রাষ্ট্রপতি পদে শপথ নেবেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতি হিসেবে সামরিক বাহিনীর সুপ্রিম কম্যান্ডারও হবেন তিনিই। আর ঠিক এই জায়গাটাতেই পোড় খাওয়া রাজনীতিকের জন্য অপেক্ষা করছে ‘শক্ত চ্যালেঞ্জ’। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তারা মজা করে বলছেন, ‘‘প্রণববাবুর দুই পূর্বসূরিই তাঁকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়ে গিয়েছেন!”
পূর্বসূরি অর্থাৎ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম এবং প্রতিভা পাটিল। সামরিক বাহিনীর সুপ্রিম কম্যান্ডার হিসেবে দু’জনেই এমন ‘রেকর্ড’ তৈরি করেছেন, যা তার আগে আর কোনও ভারতীয় রাষ্ট্রপতি কল্পনাও করেননি। কালাম বরাবরই অন্য ধরনের মানুষ। তিনি যখন সিন্ধুরক্ষক ডুবোজাহাজে বসে বঙ্গোপসাগরের গভীরে নেমে গিয়েছিলেন, কেউই খুব একটা অবাক হননি। কিন্তু তাই বলে প্রায় ৭৫ বছর বয়সে সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমানেও যে চড়ে বসবেন তিনি, এটা কারও ধারণায় ছিল না। কালাম সেটাও সম্ভব করে ছেড়েছিলেন! |
আবার এ হেন কালামকেও হার মানিয়ে দিয়েছেন প্রতিভা পাটিল। প্রথমত তিনি মহিলা। সব সময়ই মাথায় ঘোমটা দিয়ে শাড়ি পরে থাকেন। সেই প্রতিভাই বছর তিনেক আগে সুখোইয়ের ককপিটে উঠে বসেছিলেন। উইং কম্যান্ডার এস সাজ্জন ৭৪ বছরের ‘সহযাত্রী’-কে নিয়ে শব্দের থেকে একটু কম গতিবেগেই সুখোই উড়িয়েছিলেন সে বার। কিন্তু বিমান থেকে নেমে অভিজ্ঞ পাইলটকে অবাক করে দিয়ে প্রতিভা বলেন, “একেবারে ‘আউট অফ দ্য ওয়র্ল্ড’ অভিজ্ঞতা। পরের বার শব্দের থেকেও বেশি দ্রুত বেগে উড়তে চাই।” সেটাই শেষ নয়। গত বছর রাজস্থানের মরুভূমিতে চলছিল যুদ্ধ মহড়া ‘অপারেশন সুদর্শন চক্র’। তৎকালীন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহকে সঙ্গে নিয়ে কালো সামরিক উর্দিতে একেবারে টি-৯০ ট্যাঙ্কের মাথায় উঠে বসেন প্রতিভা। এ বার প্রণববাবুর সামনেও তাই নতুন কিছু করে দেখানোর ‘চ্যালেঞ্জ’।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, তিন সামরিক বাহিনীর ‘সুপ্রিম কম্যান্ডার’-এর পদটি যে অনেকটাই আলঙ্কারিক, তাতে সন্দেহ নেই। তা সত্ত্বেও খোদ রাষ্ট্রপতিকে এই ধরনের ভূমিকায় দেখা গেলে সামরিক বাহিনীর অফিসার বা জওয়ানরা খুবই উৎসাহ পান। সেই কারণেই রাষ্ট্রপতি বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা জম্মু-কাশ্মীর বা অরুণাচল প্রদেশের সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে থাকেন। প্রত্যন্ত এলাকায় জওয়ানদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনেন। পাশাপাশি সত্তরোর্ধ্ব কেউ যুদ্ধবিমানে ওড়ার ধকল নেওয়ার সাহস দেখালে সাধারণ মানুষের সামনেও সেটা উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রণববাবুর বয়স এখন ৭৭ বছর। তবে শারীরিক ভাবে তিনি যথেষ্টই সুস্থ। প্রতিভা পাটিল জানিয়েছিলেন, রোজ সকালের যোগব্যায়াম আর ট্রেডমিলই তাঁকে সুস্থ রেখেছে। প্রণবও প্রতিদিন বাড়ির উঠোনে তিনি বেশ কিছুটা সময় হাঁটেন। প্রথম ইউপিএ সরকারে একটা বড় সময় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। তখন অবশ্য তাঁকে এই ধরনের ‘অ্যাডভেঞ্চার’ করতে দেখা যায়নি। এ বার রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি কালাম-প্রতিভার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন কি না, তাই নিয়েই জল্পনা।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রণব দেশের প্রথম পারমাণবিক ডুবোজাহাজ আইএনএস অরিহন্ত-এ যেতে পারেন। সেটা পছন্দ না হলে রাশিয়া থেকে গর্শকভ যুদ্ধজাহাজ আসতেও বেশি দেরি নেই। আর যুদ্ধবিমান হিসেবে সুখোই তো আছেই। দু’এক বছরের মধ্যে ফ্রান্স থেকে দাসল্ট রাফালে-র অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানও চলে আসবে। এ ছাড়া বোয়িং সি-১৭ গ্লোবমাস্টার বা সি-১৩০ জে সুপার হারকিউলিসের মতো বায়ুসেনার ভারি পণ্যবাহী বিমানও পরখ করে দেখতে পারেন তিনি।
সুতরাং আয়োজনের অভাব নেই। কোনটা বেছে নেবেন, সবটাই ‘সুপ্রিম কম্যান্ডার’-এর ইচ্ছা! |