কলকাতা বিমানবন্দর পরিচালনার জন্য বিদেশের এক পেশাদার বিমানবন্দরের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সরকারি ক্ষেত্রে যে পেশাদারিত্বের সঙ্গে বিমানবন্দর পরিচালনা করা হচ্ছে, তা যে যথেষ্ট নয়, তা অনুধাবন করেই কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত। সম্প্রতি কলকাতায় এসে এ কথা জানিয়ে গেলেন বিমানবন্দর পরিচালক সংস্থার চেয়ারম্যান বেদপ্রকাশ অগ্রবাল।
বিমানবন্দর পরিচালনার ক্ষেত্রে এই যৌথ উদ্যোগের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছিল বিশ্বের তিনটি প্রথম সারির বিমানবন্দরের সঙ্গে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচিয়ন, সুইৎজারল্যান্ডের জুরিখ এবং সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি। এদের মধ্যে চাঙ্গিকেই বেছে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেদপ্রকাশ। চাঙ্গি ও ভারত, এই দুই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে চুক্তিপত্রের বিভিন্ন শর্তাবলি নিয়ে আলোচনা চলছে। বেদপ্রকাশ বলেন, “চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হলে কলকাতার অফিসারেরা সিঙ্গাপুরে প্রশিক্ষণ নেবেন। অন্য দিকে, সিঙ্গাপুর থেকে অফিসারেরা কলকাতায় এসে পরিচালনার কাজে সাহায্য করবেন। কোনও আর্থিক সমঝোতা নয়, শুধু পেশাদারিত্বের সঙ্গে বিমানবন্দর পরিচালনার ক্ষেত্রে এই যৌথ উদ্যোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দর তৈরির ক্ষেত্রে পরামর্শদাতার কাজ করে চাঙ্গি। ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই প্রথম অণ্ডাল বিমানবন্দর তৈরির ক্ষেত্রে চাঙ্গির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে ‘বেঙ্গল এরোট্রপলিস লিমিটেড’। ওই প্রকল্পের সঙ্গে অবশ্য চাঙ্গি-র আর্থিক সম্পর্ক রয়েছে। অণ্ডালের বিমানবন্দরটি তৈরির কাজ চলছে। বেদপ্রকাশ বলেন, “চাঙ্গি ও আমাদের মধ্যে যৌথ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বিশ্বের অন্য দেশের বিমানবন্দরের ক্ষেত্রেও আমরা যৌথ ভাবে পরামর্শদাতার কাজ করতে পারি।” |
সম্প্রতি বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহের সঙ্গে বৈঠক করে যোজনা কমিশন। সেখানে কলকাতা ও চেন্নাই বিমানবন্দরকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। দেশের চার বেসরকারি বিমানবন্দরের (দিল্লি-মুম্বই-বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদ) নিরিখে সরকার-নিয়ন্ত্রিত কলকাতা ও চেন্নাই যে পরিচালনার ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব দেখাতে পারছে না, তোলা হয় সেই প্রসঙ্গ। কিন্তু প্রস্তাবে সায় দেননি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তাঁদের যুক্তি, বিদেশি বিমানবন্দরের সাহায্য নিয়ে তাঁরাই যদি দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে পারেন, তা হলে বিমানবন্দর কেন বেসরকারি হাতে তুলে দিতে হবে? এ ছাড়া, বেসরকারি বিমানবন্দরগুলির বিরুদ্ধে যাত্রীদের উপরে অত্যধিক পরিষেবা-কর চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দিল্লি বিমানবন্দরের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিতর্কের মধ্যে কলকাতা ও চেন্নাইকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বেশি চাপ দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই সরকার।
২৩০০ কোটি টাকা খরচ করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক মানের নতুন টার্মিনাল তৈরি করছেন কলকাতায়। চেন্নাইয়ে এর খরচ পড়েছে ২১০০ কোটি টাকা। বেদপ্রকাশ বলেন, “চেন্নাইয়ের কাজ শেষ। ১৫ অগস্টের পরে যে কোনও দিন উদ্বোধন করা হবে। কলকাতার কাজও দ্রুত এগোচ্ছে। আশা করি, পুজোর সময়ে কলকাতাতেও চালু করে দেওয়া যাবে নতুন টার্মিনাল।”
তবে চেন্নাইয়ের ক্ষেত্রে কেন পেশাদার বিমানবন্দরের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা হচ্ছে না? বেদপ্রকাশের মতে, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার প্রবেশপথ হিসেবে কলকাতার গুরুত্ব চেন্নাইয়ের থেকে অনেক বেশি। মাত্র ৩০ বছর আগেও বহু বিদেশি বিমান সংস্থা নিয়মিত উড়ান চালাত কলকাতা থেকে। সেই বিমান সংস্থাগুলিকে ফিরিয়ে আনতে গেলে আরও পেশাদার হতে হবে কলকাতা বিমানবন্দরকে। |