জমি জট
‘সদিচ্ছা’ নিয়ে সংশয়, কাজ ব্যাহত নিউ টাউন উপনগরীর
সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের জমি ফেরানোর প্রতিশ্রুতি রক্ষায় মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন যিনি, সেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে একই প্রতিশ্রুতি পূরণে ‘অনীহা’র অভিযোগ তুলছেন নিউটাউনের ‘অনিচ্ছুক’ জমিদাতাদের একাংশ। যার জেরে সেখানে উপনগরীর কাজে ব্যাঘাতও ঘটছে।
সিঙ্গুরে টাটার প্রকল্পে ‘জবরদস্তি’ অধিগ্রহণের অভিযোগ তুলে ‘অনিচ্ছুক’দের ৪০০ একর ফেরতের দাবিতে তদানীন্তন বিরোধী নেত্রী মমতা যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তার সূত্র ধরে মমতার নতুন সরকার সিঙ্গুরের অধিগৃহীত জমি ফেরাতে আইন বানায়। আইনটি আপাতত আদালতের বিচার্য হলেও তৃণমূলনেত্রী তাঁর সিঙ্গুর-প্রতিশ্রুতি রক্ষায় অবিচল। কিন্তু অধিগৃহীত জমি প্রত্যর্পণ-প্রক্রিয়ার প্রাথমিক যে কাজ, নিউটাউনের ক্ষেত্রে সেই ‘আইন’ তৈরির কোনও উদ্যোগ এখনও চোখে পড়ছে না কেন, মমতার রাজারহাট অভিযানের পুরোভাগে থাকা চাষিদের অনেকের মুখে এখন সেই প্রশ্ন। ক্ষুব্ধও একটা অংশ।
সেই ‘ক্ষোভের’ আঁচে উপনগরীর অ্যাকশন এরিয়া-২ ও ৩-এ নানা জায়গায় কাজ থমকে গিয়েছে। যেমন, চিনার পার্কমুখী বাঁ দিকের সার্ভিস রোড নির্মাণ। মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনামাফিক জলাশয় সৌর্ন্দযায়নেও বাধা পড়েছিল। কাজ বন্ধ পাথরঘাটা ও রাজারহাট বিষ্ণুপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে। ইউনিটেক, সাপুরজি-পালোনজি’র প্রকল্প এবং স্টক এক্সচেঞ্জের নির্মাণেও বাধা আসছে। পরিকাঠামোয় বিঘ্নের দরুণ ২০০৬-এ অ্যাকশন এরিয়া ৩-এ বিলি হওয়া ১০০টি প্লট ছ’বছর পরেও মালিকদের হাতে দেওয়া যায়নি।
রাজারহাটের কদমপুকুর মৌজায় আটকে রয়েছে রাস্তার কাজ। —নিজস্ব চিত্র
রাজারহাটের নিউটাউনে উপনগরী গড়তে প্রায় ৬৮০০ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল বাম সরকার। সেখানে পরিকাঠামোর সঙ্গে অফিস-আবাসন তৈরি হতে থাকে। ইতিমধ্যে, গত বিধানসভা ভোটের মুখে তদানীন্তন বিরোধী নেত্রী জবরদস্তি জমি অধিগ্রহণের অভিযোগ তোলেন। ২০১০-এর ১৩ নভেম্বর বেশ কিছু ফাইল নিয়ে চিনার পার্কের মঞ্চে উঠে তৃণমূল নেত্রী জানিয়েছিলেন, সে সব নিউটাউনের ‘জমি কেলেঙ্কারি’র নথি। ঘোষণা করেছিলেন, তদন্তে এক ইঞ্চি জমি ছাড়া হবে না। বাম সরকারের প্রতি তাঁর কটাক্ষ ছিল, “লজ্জা থাকলে ওই জমি উন্নয়ন করে অন্তত ১০% ফিরিয়ে দিন।” সে দিন মমতার সঙ্গে দীর্ঘ পথ হেঁটেছিলেন কয়েক হাজার ‘অনিচ্ছুক’ চাষি। পরে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে তৃণমূলের বিভিন্ন প্রার্থী-নেতারা তাঁদের জমি ফেরতের সঙ্গে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতিও দিয়ে আসেন।
তবে নয়া সরকার গঠনের ১৪ মাস পরে রেকজোয়ানি মৌজার আশরাফুল ইসলাম কিংবা আটঘরার মহম্মদ সাবির আলির মতো অনেক অনিচ্ছুকই সরকারের ‘সদিচ্ছা’ নিয়ে সংশয়ে। অ্যাকশন এরিয়া ২-এ আশরাফুলের এক বিঘে পাঁচ কাঠা জমি ২০০২-এ অধিগ্রহণ করা হয়। প্রতিবাদী আশরাফুল চেক নেননি। পরে ওখানে মাটি কেটে জলাভূমি তৈরি শুরু হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, “হিডকো অফিস থেকে বলা হল, আগে তদন্ত হোক, পরে সব কিছু। তা হলে তদন্ত না-সেরে জলাভূমি হচ্ছে কেন?” সাবির আলি জানাচ্ছেন, “১৯৯৬-এ অধিগ্রহণের নোটিস দিয়ে আটঘরা আর নোয়াপাড়া মৌজার পাঁচ বিঘের দাম দেওয়া হল ১৫ হাজার টাকা। অথচ তখন বাজারদর কাঠাপিছু ৩৫ হাজার! মামলা করেছিলাম। এখনও চলছে। বাড়তি টাকাও মিলল না!”
পাথরঘাটার বাবলু মণ্ডলের দাবি, “আমার ভিটের আশপাশে নেওয়া অনেকটা জমিতে কাজ হয়নি। সেগুলো অন্তত ফেরত দিক।” রেকজোয়ানির আবদুল মোহিতের আক্ষেপ, “১২ কাঠা চাষের জমি গেলেও চেক নিইনি তা ফেরত পাওয়ার আশায়। কোথায় কী!”
রেকজোয়ানি, ঘুনি, যাত্রাগাছি, পাথরঘাটা নিউটাউনে বহু জায়গায় এখন এই প্রশ্ন। সংশয় তৃণমূল সমর্থক চাষিদের একাংশের মধ্যেও। যদিও রাজারহাটের তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের দাবি, “স্থানীয় চাষি বা তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভের তথ্য ঠিক নয়। বিতর্কিত জমিতে সরকার কোনও নির্মাণ করেনি। অনিচ্ছুকদের জমিতেও হাত দেয়নি।”
সরকারি-সূত্রের খবর: মূলত তিনটে কারণে নিউটাউনের মোট জমিদাতার প্রায় ২০% ক্ষতিপূরণের চেক নেননি। এক দলের হাতে জমি-মালিকানার তথ্য-প্রমাণ নেই। কিছু জমি ঘিরে পারিবারিক বিরোধ রয়েছে। বাকিদের আপত্তি জমি দিতে কিংবা দাম নিয়ে। বস্তুত নিউটাউনের অধিগৃহীত জমির ‘মূল্য’ নিয়ে হাজার আড়াই মামলা হয়েছে। ঘরোয়া কথাবার্তায় প্রশাসনের একাধিক কর্তার বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নতুন অধিগ্রহণ বন্ধ থাকলেও জমি ফেরত কিংবা বাড়তি ক্ষতিপূরণের দাবিতে বহু চিঠি ও স্মারকলিপি জমা পড়েছে।”
এ দিকে অধিগৃহীত জমি ফেরাতে গেলে সিঙ্গুরের মতো আলাদা আইন করতে হবে। যদিও তেমন উদ্যোগের আভাস নেই। নিউটাউনের ‘জমি-কেলেঙ্কারির’ তদন্তে গঠিত বিচারবিভাগীয় কমিশনের কাজেও অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। সরকারি কমিটি অবশ্য জেলা কালেক্টরেট মারফত ‘অনিচ্ছুক’দের অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি ‘বিবেচনা’ করছে। কিন্তু যেখানে জমির দাম ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে এত মামলা বিচারাধীন, সেখানে সরকারি প্রয়াসের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনেই।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.