ইলিশের ডিম সংগ্রহ করে নদীর মধ্যে সুরক্ষিত ঘেরা জায়গায় সেই ডিম ফোটানো হবে। ইলিশের বাচ্চা সেখানে কিছুটা বড় করে নিয়ে নদীর স্রোতে ছেড়ে দেওয়া হবে। ইলিশ সংরক্ষণে এতটাই ভাবছেন বাংলাদেশের মৎস্য বিজ্ঞানীরা। কেবল বাংলাদেশে নয়, পশ্চিমবঙ্গেও ইলিশের প্রজনন একেবারেই সুরক্ষিত নয়। যথেচ্ছ মাছ ধরা এবং নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় ডিম পাড়ার জায়গা এবং ইলিশের বাচ্চার বড় হওয়ার প্রক্রিয়া আর সুনিশ্চিত নয়। ইলিশের ডিম পাড়া এবং ছোট ইলিশকে একটু বড় করে সমুদ্রে পৌঁছে দেওয়া নিশ্চিত করতে না পারলে আগামী দিনে বাঙালি আর ইলিশ পাবে না। এই কথা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিভাগের চেয়ারম্যান দেওয়ান আলি আহসান বলেন, “ছোট ইলিশ ধরা বন্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু সে উদ্যোগ সর্বতো ভাবে সফল করা যাচ্ছে না। তাই ইলিশের ডিম কোনও সংরক্ষিত জায়গায় আলাদা করে ফোটানো যায় কি না, তা নিয়েও ভাবনা চিন্তা শুরু হয়েছে।” |
ইলিশ বাঁচাতে দুই দেশের যৌথ গবেষণাও হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজার্ভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) নামে একটি আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংগঠনের উদ্যোগেই ইলিশ নিয়ে দুই দেশের যৌথ গবেষণা হয়েছে। ওই গবেষণায় সামিল হয়েছেন সেন্ট্র্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ ইনস্টিটিউটের নদী মৎস্য বিভাগের প্রধান উৎপল ভৌমিক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধিকর্তা সুগত হাজরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিভাগের চেয়ারম্যান দেওয়ান আলি আহসান এবং প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক নাইমুল নাসির। আইইউসিএন-এর পক্ষে আহমেদ কাজিমুদ্দিন বলেন, “ব্যাপক সমীক্ষা এবং গবেষণার মধ্যে দিয়ে ইলিশ সংরক্ষণে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগ শুরু হোক। সেই লক্ষ্যেই গবেষক এবং রাজনীতিকদের মধ্যে মত বিনিময়ের এই আয়োজন করা হয়েছে।” তাঁর আশা ইলিশ সংরক্ষণে গবেষণার ফলাফল এবং সুপারিশগুলো কার্যকর করতে রাজনৈতিক উদ্যোগও শুরু হবে।
ইলিশ সংরক্ষণে ভারত ও বাংলাদেশের মৎস্য বিজ্ঞানী, গবেষক এবং রাজনীতিকরা মঙ্গলবার মতামত ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। সেখানে দুই দেশ একযোগে কাজ করার ব্যাপারে গবেষক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ঐকমত্যে পৌঁছন। ইতিমধ্যেই ইলিশ নিয়ে দুই দেশের গবেষকেরা যৌথ সমীক্ষা এবং গবেষণার কাজ শুরু করেছেন। এখন বঙ্গ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এই মাছ বাঁচাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার মর্যাদা দিয়ে সরকারি উদ্যোগ শুরু হওয়া বাকি।
এ দিনের দুই দেশীয় আলোচনাচক্রে এই কথাই জানিয়ে এলেন রাজ্যের মৎস্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুব্রত সাহা। তাঁর কথায়, “আমাদের দেশের ‘প্রায় বিপন্ন’ ইলিশ বাঁচাতে হলে ভারত এবং বাংলাদেশকে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। ইলিশ আমাদের দুই দেশের বাঙালির সংস্কৃতির অঙ্গ। এই মাছকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না।” বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মৎস্য মন্ত্রক সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশের সাংসদ মকবুল হোসেন এবং জাফর ইকবাল সিদ্দিক যোগ দিয়েছিলেন এ দিনের আলোচনা সভায়। মকবুল হোসেন বলেন, “ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে পারে ইলিশ। ইলিশ সংরক্ষণে এবং উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।” ওই সাংসদ আরও একটু এগিয়ে সুব্রতবাবুকে বলেন, “চলুন একসঙ্গে কাজ শুরু করি।” জাফর ইকবাল বলেন, “ইলিশ বাঁচাতে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে যে সব ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে, পশ্চিমবঙ্গ সেগুলো অনুসরণ করে উৎপাদন বাড়তে পারে।” তবে ইলিশ বাঁচাতে যে কোনও কাজই দুই দেশকে একসঙ্গে করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
দুই দেশের অধ্যাপক গবেষকেরাও এ দিন যৌথ উদ্যোগের ওপর জোর দেন। দেওয়ান আলি আহসান বলেন, “গঙ্গা আর পদ্মায় একই জাতের ইলিশ পাওয়া যায়। সে ইলিশের সংরক্ষণে তাই দুই দেশকে কাজ করতে হবে একসঙ্গে।” |