শেষ পর্যন্ত বাংলা ছবির মহানায়কের স্মরণ-সন্ধ্যাটি ‘কাব্যে উপেক্ষিত’দের জন্য উৎসর্গীকৃত হল। রুপোলি পর্দায় বা নেপথ্যে বিশেষ অবদান রাখলেও টালিগঞ্জের অনেক শিল্পী, কলাকুশলীই এখন বিস্মৃত। মঙ্গলবার সায়েন্স সিটিতে রাজ্য সরকারের চলচ্চিত্র পুরস্কারের অনুষ্ঠানে এমন অনেকেই বহু বছর বাদে পাদপ্রদীপের আলোয় এলেন।
উত্তমকুমারের তিরোধান দিবস উপলক্ষে এ বারই প্রথম আয়োজিত হয়েছিল এই পুরস্কার-সন্ধ্যা। এই দিনটিতে প্রতি বছরই চলচ্চিত্রে কৃতীদের সম্মাননার পরম্পরা অটুট থাকবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশে-বিদেশে বরেণ্য বাংলা ছবির নামী অভিনেতা-পরিচালকেরা অনুষ্ঠানে থাকবেন, সে তো জানা কথাই। কিন্তু আম-দর্শকের স্মৃতিতে ধূসর হয়ে যাওয়া শিল্পী-কলাকুশলীদেরও এক মঞ্চে সম্মানিত হতে দেখা যাবে, ভাবেননি অনেকেই।
|
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার, সায়েন্স সিটিতে। |
জীবনের উপান্তে পৌঁছনো ওই উপেক্ষিত কৃতীদের কেউ কেউ রাজ্য সরকারের ডাকে অশক্ত শরীরে এসেছিলেন। একদা উত্তমকুমারের নায়িকা দীপ্তি রায় যেমন হুইলচেয়ারে বসে এলেও পুরস্কার নিতে মঞ্চে উঠতে পারেননি। তাঁকে সম্মান-অর্ঘ্য দিতে মুখ্যমন্ত্রী সটান মঞ্চ থেকে দর্শকাসনে নেমে এলেন। সঙ্গীত-পরিচালক অজয় দাসও অসুস্থ, প্রায় বাকশক্তি-রহিত। তাঁকে পুরস্কার দিতেও মমতা নিজে মঞ্চ থেকে নেমে এলেন। প্রবীণদের মধ্যে কয়েক জন সহায়-সম্বলহীন। এমন পাঁচ জনের জন্য মাসিক পাঁচ হাজার টাকা পেনশনও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। দীপ্তিদেবী, অজয়বাবু ছাড়া এঁদের মধ্যে রয়েছেন, সপ্তপদীর চিত্রগ্রাহক কানাই দে, কলকাতা-মুম্বইয়ের শিল্প-নির্দেশক কার্তিক বসু ও সঙ্গীত-পরিচালক তথা সলিল চৌধুরীর গুরুত্বপূর্ণ সহকারী অনল চট্টোপাধ্যায়। মমতার কথায়, “এ হল শিল্পীদের সম্মান জানানোর ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।”
পুরস্কার-প্রাপকদের মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ উপস্থিতি অবশ্যই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও মিঠুন চক্রবর্তীর। দাদাসাহেব ফালকে-প্রাপক সৌমিত্রকে এ বার সারা জীবনের অবদানের জন্য চলচ্চিত্র-পুরস্কার দিল রাজ্য সরকার। পূর্বতন বাম সরকারের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত সৌমিত্রবাবু এ দিন রাজ্যে চলচ্চিত্রের জন্য পুরস্কার চালু করায় মমতার সরকারের প্রশংসা করেছেন। তবে আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, “মৃণাল সেনকে দেখতে পেলে খুশি হতাম। হয়তো ওঁর শরীর খারাপ।” বর্ষীয়ান মৃণালবাবুও ‘বাম-ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত। হরনাথ চক্রবর্তী, তাপস পালেরা তখনই মৃণালবাবু অসুস্থ বলে বোঝাতে চেষ্টা করেন। প্রয়াত সিপিএম নেতা সুভাষ চক্রবর্তীর ‘ঘনিষ্ঠ’ মিঠুন পেয়েছেন মহানায়ক-সম্মান। মিঠুন ও মমতা দু’জনেই পরস্পরকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন। আর এক পুরস্কার-প্রাপক অপর্ণা সেনের সঙ্গে যোগাযোগে দেরি নিয়ে মমতা দুঃখপ্রকাশ করেন। |
সারা জীবনের অবদানের স্বীকৃতি-প্রাপ্ত সৌমিত্র, সুপ্রিয়াদেবী ও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কে দু’লক্ষ টাকার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। মহানায়ক সম্মান-প্রাপ্ত মিঠুনও সমমূল্যের পুরস্কার পেয়েছেন। ৪৩ জন পুরস্কার-প্রাপকের মধ্যে বাকিরা পেয়েছেন এক লক্ষ টাকার পুরস্কার।
কার্ডে বা সরকারি বিজ্ঞাপনে নাম থাকলেও শু্যটিংয়ে আটকে পড়ায় এ দিনের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন প্রসেনজিৎ। যদিও এসেছিলেন তাঁর বাবা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
|