রাষ্ট্রপতি হলেন জঙ্গিপুরের ঘরের মানুষই
সুন দিয়ে লালতের শাক কি মিলবে রাইসিনা হিলসে?
পোস্ত বড়া, পাবদা মাছ, কাটা রুই—মধ্যাহ্ন আহারের এই মেনুতেই স্বচ্ছন্দ ছিলেন যে মানুষটি, তিনি নিশ্চয়ই রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও তেমনটিই থাকবেন। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সাংসদ এলাকা জঙ্গিপুরের মানুষ এমনই ভাবছেন। তাঁরা জানেন, প্রখর গরমে ভোটের প্রচারে বেরিয়ে প্রবীণ মানুষটির সারা দিন খাওয়া বলতে ছিল মুড়ি আর লাল চা। প্রচণ্ড পরিশ্রমের পরে ফিরে এসে ওই বয়সেও সারা ভারতের নানা নেতার সঙ্গে কথা বলতে হত ফোনে। তখন অবশ্য ঘরে কেউ থাকতে পারতেন না। কিন্তু তা ছাড়া, অভিজাত স্বভাবের মানুষটি যে একেবারেই ঘরোয়া, তার প্রমাণ বারবার মিলেছে।
এই শহর কাছ থেকে প্রণববাবুকে দেখেছে তাঁর প্রবীণ বয়সে। তত দিনে তিনি বিখ্যাত লোক। তাই প্রথম দিকে যে আড়ষ্টতা ছিল, তা কিন্তু তাঁর গুণেই কেটে যায় তাড়াতাড়ি। ২০০৪ সালে সংসদীয় নির্বাচনে লড়তে এসে প্রণববাবু উঠেছিলেন শহরে মুক্তিপ্রসাদ ধরের বাড়িতে। তখনই জানা গেল, তাঁর প্রিয় খাবার পোস্তর বড়া। যে ঘরে তিনি থাকবেন, সেই ঘরে রাখা হয়েছিল কিছু দেবদেবীর ছবি। সে সব এখনও সাজানো রয়েছে। ওই বাড়ির দুই পুত্রবধূ ঝর্না ধর ও লুনা ধরের উপরেই প্রধানত দায়িত্ব পড়েছিল প্রণববাবুর খাওয়া-দাওয়া থেকে থাকার ব্যবস্থার। সাত সকালেই ঘুম থেকে উঠে পড়তেন ঝর্না। বললেন, “তবে আমাদেরও আগে উঠতেন তিনি। সাধারণত ভোর পাঁচটায় উঠতেন। তারপরে ঘরের সামনের এক চিলতে বারান্দায় ঘণ্টা খানেক পায়চারি করতেন। চা নিয়ে গেলে ঘরের সোফায় বসে তাতে চুমুক দিতেন। লাল চা। তবে এক কাপে হত না। তাই টি পটে চা দিতাম। সঙ্গে দু’টো বিস্কুট।” তারপরেই খবরের কাগজ পড়ে স্নান করতে যেতেন। তারপরে পুজো। তখন কেউ বিরক্ত করলে প্রচণ্ড রেগে যেতেন। তারপরে সামান্য জলখাবার। ধর বাড়ির ছেলে রঞ্জু বলেন, “এক দিন দাদা সারা সকাল ঘুরে এসে চাপা গলায় বলেছিলেন, খুব খিদে পেলেও কিছু খাওয়া হয়নি। সবার সামনে খিদে পেয়েছে বলার মতো লোক তো ছিলেন না। তাই তারপর থেকে বেরোনোর সময়ে হাতে একটা করে কাজুর প্যাকেট গুঁজে দিতাম।”
সেই রঞ্জু ক্যানসারে আক্রান্ত শুনে তারপরে শত কাজের মধ্যেও ছুটে গিয়েছিলেন তাঁকে দেখতে। মিনিট ৪০ ছিলেন নিজের সেই পুরনো ঘরেই। সবই এক রকমই রয়েছে দেখে খুব খুশিও হয়েছিলেন। এখনও তাঁর সেই আলনাটি সে ভাবেই রয়েছে।
লুনা বলেন, “খাওয়ার সময় বলে তো কিছু ছিল না। বাড়িতে থাকলে দেড়টার মধ্যে খাওয়া শেষ। আর বাইরে গেলে আড়াইটে, তিনটে বেজে যেত।” তাঁর কথায়, “প্রথম দিনের কথা মনে রয়েছে। লাল শাক, আলু পটোল আর মটোরের ডাল, পোস্তর বড়ার সঙ্গে ছিল মাংস। মাংসর বাটিটা সরিয়ে রেখে বললেন, ‘রেখে দে, রাতে খাব।’ তৃপ্তি করে শুধু নিরামিষ খেয়েই উঠে গেলেন।” তখন নানা গল্পও হত। এক দিন তেমন গল্পের মধ্যেই জিজ্ঞাসা করেছিলেন, লালতের শাক পাওয়া যায় কি না! বিউলির ডাল যে পছন্দ করেন, তা-ও জানিয়েছিলেন নিজে থেকেই।
পরে শহরে নিজের বাড়িই করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। শহরের দেউলিতে ৪ বিঘা জমির উপরে সেই মতো বাড়িও উঠেছে। সামনে একটি বড় জলাশয়। বাড়িতে বিরাট ৮টি ঘর। দু’টি তলায় দু’টি রান্নাঘর। এক তলার ডান দিকে ঠাকুর ঘর। এখন অপেক্ষা গৃহপ্রবেশের।

ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.