খুশিতে বাঁচুন
বর্ষায় চনমনে
মেঘের ঘনঘটা অনেকের মনে বিমর্ষ ভাব আনে। আসে অবসাদ। বাড়ে পেটের বেয়াড়াপানাও। এতেও মন খারাপ হয়। অবসাদ আর পেটের সমস্যা কাটিয়ে বর্ষায় ভাল থাকার থাকার পাসওয়ার্ড হল শরীরচর্চা। আগে কয়েকটি বিষয় জেনে রাখুন।
বিশেষজ্ঞদের মতে রাগ, ভয়, হতাশা, উদ্বেগে সিমপ্যাথেটিক নার্ভ উত্তেজিত হয়। ফলে পরিপাক ক্রিয়া শ্লথ হয়ে যায়। এর জন্য দরকার প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভকে উদ্দীপ্ত করা। হাল্কা কার্ডিওভাসকুলার ওয়ার্কআউট (হাঁটা/জগিং), বিশেষ কিছু যোগাসনে এই প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভকে উদ্দীপ্ত করা সম্ভব। ফলে বিমর্ষ ভাব দূর হয়। পরিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক গতি পায়।
অল্টারনেট হাই-নি
হাল্কা বা মাঝারি তীব্রতার ওয়ার্কআউট করতে হবে। অতি তীব্র ওয়ার্কআউট অন্তত প্রথম তিন সপ্তাহ করবেন না। কিন্তু হাল্কা, মাঝারি বা তীব্র বুঝবেন কী ভাবে? ধরুন জগিং করছেন। মিনিট কয়েক পরে কারও সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করুন। একেবারে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারলে ওয়ার্কআউট হাল্কা তীব্রতার। সামান্য কষ্ট হলে মাঝারি মাপের। যদি কথাই বলতে না পারেন যেন হাঁফ ধরে যাচ্ছে, তা হলে সেটা অতি তীব্র। এ ভাবে তীব্রতা মাপাকে বলে ‘টক টেস্ট’।
হাল্কা থেকে মাঝারি তীব্রতার দু’টি কার্ডিওভাসকুলার ওয়ার্কআউটের নমুনা দিই।
হেঁটে অল্টারনেট হাই-নি: গোড়ায় একটু গা-গরম করে নিন। তার পরে ঘরে বা মাঠে পর পর ছ’টি বোতল অথবা মার্কার একই সরলরেখায় সাজান। প্রতিটি বোতলের মাঝে এক পা ব্যবধান থাকবে (হাঁটার সময় যে ভাবে পা ফেলি)। প্রতিটি বোতলকে হার্ডল মনে করুন। এ বার ৯০ ডিগ্রির বেশি হাঁটু ভেঙে পা প্রায় পেটের কাছে তুলে হেঁটে এগিয়ে যান। শেষ বোতলে পৌঁছেই আবার ঘুরে শুরু করুন। এ ভাবে মোট এক মিনিট করুন। তার পরে এক মিনিট বিশ্রাম। ৬-৮ বার রিপিট করুন।
জগিং আর সুইং
জগিং আর সুইং: ফুটবল বা হাল্কা বল নিন। দশ-পা দূরত্বে বোতল অথবা মার্কার রাখুন। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জগিং করে পৌঁছন। পৌঁছেই হাতে ধরা বলটা কোমরের ডান দিক থেকে আড়াআড়ি কাঁধের সমান উচ্চতায় ঘোরান। অনেকটা ডান হাতি ব্যাটসম্যানের ছক্কা মারার মতো। পর পর চার বার। এর পরে জগিং করে আবার প্রথম জায়গায় ফিরে আসুন। এ বারে বাঁদিক থেকে ডান দিকে চার বার সুইং। দু’প্রান্তে সুইং আর জগিং চলুক এক মিনিটের মতো। এক মিনিট বিশ্রাম নিয়ে ৬-৮ বার রিপিট করুন।
সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন হাল্কা থেকে মাঝারি তীব্রতার কার্ডিও করুন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ রকম হাল্কা কার্ডিও ড্রিল করলে মস্তিষ্কে সেরোটনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। অবসাদ, হতাশা কাটিয়ে মন প্রফুল্ল হয়। এ রকম ওয়ার্কআউটে খাদ্য সহজে বৃহদন্ত্রের দিকে এগিয়ে যায়। বাওয়েল মুভমেন্টও শুরু হয়।
হার্ট ওপেনার
বর্ষায় পেটের সমস্যা মেটাতে যোগাসন ভাল কাজ দেয়। কয়েকটি আসনের হদিস দিচ্ছি। আসনগুলি করার আগে হাঁটাহাঁটি করে পেশিতে রক্তের সঞ্চালন বাড়ান। যাঁদের নমনীয়তা কম তাঁদের স্ট্রেচিং করা ভাল। নমনীয়তায় সমস্যা থাকলে বালিশ বা চেয়ারের সাহায্য নিতেই পারেন। এ রকম সাপোর্ট আপনার পসচারের ত্রুটি-বিচ্যুতি সামলে দেবে। সপ্তাহে পাঁচ-ছ’ দিন আসনগুলি স্বচ্ছন্দে করতে পারেন।
বসে থেকে হার্ট ওপেনার: বজ্রাসনে বসে দু’হাতে পিছন দিকে ভর দিয়ে অনেকটা আর্চ করার ভঙ্গিতে বুক আর মাথা পিছনে হেলিয়ে দিন। যাঁদের মেরুদণ্ড অতটা নমনীয় নয় তাঁরা পিঠের নীচে বালিশ দিয়ে সাপোর্ট দিন। নিঃশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ৩০ সেকেন্ড থাকুন। এর পরে ৩০ সেকেন্ড শবাসন করুন। ৩-৪ বার রিপিট করুন।
স্কোয়াট অ্যান্ড টুইস্ট
স্কোয়াট অ্যান্ড টুইস্ট: ৯০ ডিগ্রি স্কোয়াট করুন। পায়ের পাতা বাইরের দিকে থাকবে। যাঁদের এ ভাবে অসুবিধা হবে তাঁরা চেয়ারের সাপোর্ট নিতে পারেন। একটি হাত হাঁটুতে রেখে অন্য হাত আড়াআড়ি ভাবে প্রসারিত করুন।
এ ভাবে ৩০ সেকেন্ড ধরে থাকুন। এর পরে ৩০ সেকেন্ড শবাসন করুন। দু’দিকে দু’বার করে করুন।

স্পাইনাল ট্যুইস্ট
বসে স্পাইনাল ট্যুইস্ট: দু’পা সামনে সোজা রেখে বসুন।
এ বার একটি হাঁটু ভাঁজ করে জাপটে ধরার মতো বুকে জড়িয়ে ধরুন।
৩০ সেকেন্ড এ ভাবে ধরে রাখুন। এর পরে ৩০ সেকেন্ড
শবাসন করুন। দু’পায়ে দু’বার করুন।
শলভাসন: উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। দু’হাতের তালু একেবারে তলপেটের নীচে আনুন। তালু থাকবে মাটির দিকে মুখ করে। এ বার দু’পা একদম সোজা রেখে সাধ্যমতো উঁচুতে তুলুন। পা তুলতে না পারলে বালিশের সাপোর্ট নিন। ৩০ সেকেন্ড ধরে থাকুন। আগের মতো শবাসন করুন। ৩-৪ বার রিপিট করুন।
শলভাসন

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.