তরাই-ডুয়ার্সে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
ধসে দুর্ভোগ পাহাড়ে
বৃষ্টি থামায় তরাই ও ডুয়ার্সে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও পাহাড়ে ধস নামার বিরাম নেই। মঙ্গলবার সকালে সিকিমগামী ৩১ (এ) জাতীয় সড়কের তারখোলার কাছে দশ মাইলে ধস নেমে বন্ধ হয়ে যান চলাচল। তার জেরে বিপাকে পড়েন পর্যটক এবং নিত্যযাত্রীরা। পণ্য পরিবহণও ব্যাহত হয়। অন্য দিকে, ফুলহারে জল বাড়তে থাকায় সেখানেও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ দিন সেখানে জলের তোড়ে তিনটি স্পার উড়ে যায়। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সেচ আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। তবে মহানন্দা নদীর স্রোত ঘোরানো সম্ভব হওয়ায় এ দিন শিলিগুড়ি লাগোয়া চম্পাসারির মিলনমোড় এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মহানন্দার স্রোত ঘোরানো সম্ভব হওয়ায় স্বস্তিতে সেচ দফতর। সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া এ দিন কলকাতায় রওনা হওয়ার আগে বলেন, “যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করে মহানন্দা নদীর স্রোত ঘোরানো হয়েছে। তাতে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। ভাঙা অংশ মেরামতের জন্য দফতরের আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” মহাকরণে পৌঁছে সাংবাদিক বৈঠকে সেচমন্ত্রী ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন গড়ার দাবি জানান।
খয়েরকাটায় মানস ভুঁইয়া ও হিতেন বর্মন। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
তিনি বলেন, “৭৬টি নদী ভুটান থেকে উত্তরবঙ্গে এসেছে। ওই নদীগুলিতে জল বাড়লেই উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়া ঠেকাতে ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন জরুরি। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ দফতরে এবং মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবো।” দার্জিলিং জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের ঘটনা নিয়ে টানা তিন দিন ধরে ৩১ (এ) জাতীয় সড়কে ধসের ঘটনা ঘটল। তারখোলায় এ দিন ধস নামার ফলে যান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় প্রায় দিনভর রাস্তার দু’পাশে প্রচুর গাড়ি আটকে থাকে। বিপাকে পড়েন পর্যটকরা। পরে দার্জিলিং জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ছোট গাড়িগুলিকে চিত্রে-কালিম্পং-রংপো হয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। বেশ কিছু গাড়ি মল্লি হয়ে যাতায়াত করে। তবে পণ্যবাহী ট্রাক এবং বড় গাড়ি বিকাল পর্যন্ত আটকে থাকে। গত এক সপ্তাহে কালিম্পং যাতায়াতের রাস্তাতেও বেশ কয়েকদিন ধস পড়ে বন্ধ হয়। ওই অবস্থায়, সিকিম ও কালিম্পংয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গিয়েছে। শিলিগুড়ি থেকেই ওই এলাকাগুলিতে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যাওয়া হয়। ধস নামলে পণ্যবাহী ট্রাক আটকে গেলে সামগ্রীর দাম দ্বিগুণ হয়ে যায় বলে অভিযোগ।
জল নামার পরে উনুন তৈরি জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল।
কালিম্পংয়ের বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী বলেন, “শিলিগুড়ি থেকে যাতায়াতের মূলত একটিই রাস্তা। ধসে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে ঘুরপথে যাতায়াত করতে হয়। সেই সময় জিনিসের দাম অনেক বেড়ে যায়। এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে আমরা চলছি।” ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সম্রাট সান্যাল অভিযোগ করেন, ধসের ফলে বেশ কিছু পর্যটককে দিনভর রাস্তায় কাটাতে হয়। সিকিম থেকে ঘুরপথে পর্যটকেরা শিলিগুড়িতে পৌঁছন।” দার্জিলিংয়ে পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল অবশ্য দাবি করেন, সীমান্ত সড়ক বাহিনীর কর্মীরা রাস্তা থেকে ধস সরানোর কাজ করছেন। তিনি বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা হচ্ছে।” ডুয়ার্সেও এদিন তিস্তা, রায়ডাক, মানসাই, সিঙ্গিমারী, কালজানি-সহ প্রায় সব নদীতেই জলস্তর কমেছে। কোনও নদীতে বিপদ সঙ্কেত ছিল না। মেখলিগঞ্জের নিজতরফ, হোসেনের চর প্রভৃতি এলাকায় কয়েকশো মানুষ এ দিনও জলবন্দি হয়ে রয়েছেন। মেখলিগঞ্জের বিডিও সপ্তর্ষি নাগ জানান, দুর্গতদের ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। দিনহাটার মহকুমা শাসক অগাস্টিন লেপচা জানিয়েছেন, প্রায় ৫ হাজার লোক জলবন্দি হয়ে রয়েছেন। তবে জলস্তর কমার জেরে ভাঙন শুরু হয়েছে বিভিন্ন নদী বাঁধে।
মিলন মোড়ে বাঁধ ভেঙে জলবন্দি বাসিন্দাদের প্রশাসনের তরফে খাবার ব্যবস্থা করা হয়। ছবি: কার্তিক দাস।
তিস্তা নদী বাঁধে একের পর এক ভাঙনের রিপোর্ট এসে পৌঁছেছে বন্যা নিয়ন্ত্রন কমিশনের কন্ট্রোল রুমে। উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রন কমিশনের চেয়ারম্যান নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জল কমতে শুরু করার কোথাও স্পার ভাঙা, কোথাও নদীপাড় বসে যাওয়ার খবর পাচ্ছি। সব জায়গাতেই কাজ শুরু হবে।” সেচ দফতরের এক সূত্রের খবর, বাংলাদেশ সীমানা লাগোয়া কুচলিবাড়ি, মেখলিগঞ্জের নদীবাঁধে ফাটল হয়েছে। মন্ডলঘাটের তিস্তার একটি স্পারের মাথা জলে ভেসে গিয়েছে। মন্ডলঘাটে দ্রুত মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা সদর রক্ষাকারী তিস্তা বাঁধে একসঙ্গে একাধিক ভাঙনের খবর মিলেছে। এদিন ফের ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুকান্তনগর কলোনি এলাকার নদীবাঁধ। জেলা স্কুলের পিছনে তিস্তার দুটি স্পার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গজলডোবায় মিলনপল্লি লাগোয়া টাকিমারি চর এলাকাতেও তিস্তা নদী বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনার অমরেন্দ্র সিংহ বলেন, “সব নদীতে জল কমছে। ভাঙনের রিপোর্ট মিলেছে। সর্তকতা নিয়ে কাজ শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার রাতে মালদহের রতুয়ার দেবীপুরে ওই স্পার তলিয়ে যায়। এ দিন সেচ কর্তারা সেখানে গেলে ভাঙন রোধের কাজ নিম্নমানের হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে নির্বাহী বাস্তুকার সহ দফতরের ৫ কর্মীকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ফুলহারের জল বাড়তে থাকায় কেবল রতুয়া নয়, হরিশ্চন্দ্রপুরের মিহাহাটেও গাইড বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই এলাকায় বাঁধ যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা। সেচ দফতরের মহানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্টের নির্বাহী বাস্তুকার আশিস সাহু দাবি করেছেন, “নিম্নমানের কাজের অভিযোগ ঠিক নয়। জলের প্রবল স্রোতের জন্যই সমস্যা হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.