চোট সারাতে এসেই কি ধৃত, ধন্দ
বিরামডি স্টেশনে পুলিশের জালে বিক্রম, মিলল একে-৪৭, গুলি
পুরুলিয়ায় ধরা পড়লেন মাওবাদীদের রাজ্য কমিটির সদস্য বিক্রম ওরফে অর্ণব দাম। তবে কী ভাবে তাঁকে ধরা গেল, তা নিয়ে নানা ‘তত্ত্ব’ রয়েছে পুলিশের বিভিন্ন মহলের।
মঙ্গলবার পুরুলিয়ায় পুলিশ সুপারের অফিসে এক সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য পুলিশের ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা বলেন, “সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় বলরামপুর থানার বিরামডি রেল স্টেশনের কাছে মাওবাদী নেতা বিক্রমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে পুরুলিয়া জেলাতেই ৮০টির বেশি নাশকতার মামলা রয়েছে। ঝাড়খণ্ডেও কিছু নাশকতায় তিনি যুক্ত।” ওই পুলিশ-কর্তার দাবি, বিক্রমের কাছ থেকে একটি একে-৪৭, ৩০ রাউন্ড গুলি, দু’টি ম্যাগাজিন এবং একটি ডিজিট্যাল স্টিল ক্যামেরা মিলেছে। পাওয়া গিয়েছে মাওবাদীদের একটি পুস্তিকা ও কিছু বিজ্ঞপ্তিও। ডিআইজি-র কথায়, “এটা পুরুলিয়া পুলিশের বড় সাফল্য।”
মাওবাদীদের বাংলা-ঝাড়খণ্ড-ওড়িশা আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক বিক্রমকে এ দিন কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে পুলিশ সুপারের অফিসে আনা হয়। পরে পুরুলিয়া জেলা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁকে ৭ দিন পুলিশ-হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। আদালত চত্বরে বিক্রমের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “পুলিশ পুলিশের কাজ করেছে।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের সুভাষগ্রামে বাড়ি বছর পঁয়ত্রিশের বিক্রমের। মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই ছাত্র খড়্গপুর আইআইটি-র পাঠ অসমাপ্ত রেখে নব্বইয়ের দশকেই যোগ দেন অতি-বাম রাজনীতিতে। পুলিশের দাবি, ২০০৫ থেকে বিক্রম পুরুলিয়ায়। ২০০৬-এ আর এক মাওবাদী নেতা রঞ্জিত পালকে সঙ্গে নিয়ে তিনি পুরুলিয়ায় ‘অযোধ্যা স্কোয়াড’ গড়েন। ক্রমশ বহরে বেড়ে সেই স্কোয়াড একাধিক নাশকতায় জড়ায়। সেই সঙ্গে সংগঠন বাড়ানো, নাশকতার পরিকল্পনা ছকার দায়িত্ব ছিল বিক্রমের।
পুরুলিয়া আদালত চত্বরে মাওবাদী নেতা বিক্রম। মঙ্গলবার সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।
২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বলরামপুরের কাঁটাডি রক্ষী শিবির লুঠের পরেই ‘অযোধ্যা স্কোয়াড’-এর সক্রিয়তা পুলিশের নজরে আসে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকরের দাবি, “২০০৬ সালের পর থেকে পুরুলিয়ায় মাওবাদী নাশকতার প্রায় সব ঘটনায় বিক্রম জড়িত।” ২০১০ সালের অক্টোবরে অযোধ্যা পাহাড় থেকে পুলিশকর্মী পার্থ বিশ্বাস ও স্কুলশিক্ষক সৌম্যজিৎ বসুকে অপহরণ করে খুন, ওই বছর ডিসেম্বরে ঝালদার বাগবিন্ধ্যা ও লাগোয়া গ্রামে এক রাতে ৭ জনকে খুনের মতো একাধিক ঘটনাতেও অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত বিক্রম। নিহত মাওবাদী শীর্ষ নেতা কিষেণজি-ঘনিষ্ঠ এই যুবক সংগঠনে ‘ভানু’, ‘সূর্য’, ‘মাস্টারদা’ নামেও পরিচিত।
তবে শুধু নাশকতা নয়, পশ্চিমবঙ্গে ‘পরিবর্তনের’ আগে রাজনৈতিক কারণেও ‘বিক্রম’ বহুচর্চিত নাম। সংবাদমাধ্যমের কাছে ওই মাওবাদী নেতার নামে পাঠানো এক বিবৃতিতে (২০১০-এর ৩১ ডিসেম্বর তারিখের) যেন তৃণমূল-মাওবাদী যোগসাজশ নিয়ে সিপিএমের বরাবরের অভিযোগকে ‘স্বীকৃতি’ দিতেই দাবি করা হয়েছিল, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, লালগড়ের আন্দোলনে মাওবাদীরা তৃণমূল নেত্রী (তখন বিরোধী দলনেত্রী) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিল। ওই বিবৃতি প্রকাশ পেতেই মাওবাদী-তৃণমূল আঁতাঁতের অভিযোগে সরব হন বামেরা। তবে, সে সময়ে তৃণমূলের তরফে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেন, সিপিএম জোর করে মাওবাদীদের দিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘এই ধরনের’ বিবৃতি দিইয়েছে।
রাজ্যে পালাবদলের পরে পুরুলিয়ায় একাধিক তৃণমূল কর্মী খুনে নাম জড়ায় বিক্রমের। যৌথ বাহিনীর তৎপরতায় ‘অযোধ্যা স্কোয়াড’ কোণঠাসা হয়। অনেকে ধরা পড়েন। কেউ কেউ আত্মসমর্পণ করেন। পুরুলিয়ায় মাওবাদীদের ‘খাসতালুক’ বলে দীর্ঘ দিন পরিচিত বলরামপুরে মাওবাদী-ঘনিষ্ঠ ‘আদিবাসী মূলবাসী জনগণের কমিটি’র একটা বড় অংশ গড়ে তোলে ‘জঙ্গলমহল উন্নয়ন বিরোধী প্রতিরোধ কমিটি’। এই পরিস্থিতিতে আস্তে আস্তে অযোধ্যা পাহাড় ছেড়ে অন্যত্র গা ঢাকা দেন বিক্রম। তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকার ‘কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি ফোর্স’-এ একের পর এক অভিজ্ঞ অফিসারকে নিয়োগ করায় জঙ্গলমহলে চাপ আরও বাড়ে মাওবাদীদের উপরে। গত নভেম্বরের পর থেকে কার্যত বিক্রমের খবর পাওয়াই দুষ্কর হচ্ছিল পুলিশের পক্ষে।
তা হলে সোমবার কী হল? পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ২০১০-এ কোটশিলায় যৌথ বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে বিক্রম চোট পান। চোটের চিকিৎসা করাতেই তিনি নিয়মিত পুরুলিয়ায় আসতেন। চিকিৎসা করাতে এসে তিনি ধরা পড়েন। তবে জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, পুরুলিয়া হাসপাতালে বিক্রমের স্বাস্থ্য-পরীক্ষায় চোট পাওয়া যায়নি।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ধৃত মাওবাদী স্কোয়াড সদস্যেরা জেরায় পুলিশের কাছে দলের অধরা নেতা-নেত্রীদের গতিবিধি সম্পর্কে কিছু তথ্য দেন। জানা যায়, ২৮ জুলাই শহিদ সপ্তাহ পালন উপলক্ষে সংগঠন ঢেলে সাজতে ফের পুরুলিয়ায় আসছেন বিক্রম। ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে অযোধ্যা পাহাড়ের পারবাইদ, ভুরসাবেড়া-সহ বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় তল্লাশি। তাতেই ধরা পড়ে বিক্রম।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.