তিনটি নদী পেরিয়ে স্বপ্নের জাতীয় দলের জার্সিতে
ছামতী, রায়মঙ্গল, কলাগাছি। তিনটি নদী পেরিয়ে, সাইকেল চালিয়ে প্র্যাক্টিস করতে আসতে হত। মোটামুটি সময় লাগত ঘণ্টা দুই। তবু ঝড় না হলে শনি-রবি প্র্যাক্টিস বন্ধ করেননি কোনও দিন। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার যে গ্রামে তাঁর বাড়ি, সেখানে ইলেকট্রিক যায়নি এখনও। বাড়িতে টিভি থাকার প্রশ্ন নেই তাই দেখা হয়নি ইউরো কাপ।
কোন ফুটবলারকে আপনার সবচেয়ে পছন্দ? শীর্ণকায়া মেয়েটি কুণ্ঠিত গলায় নাম করেন ভাইচুং এর। কলকাতায় খেলতে আসার সময় ভাইচুংকে দেখেছেন। কিন্তু মেসি, ইনিয়েস্তা, রোনাল্ডোর জগৎ সম্পর্কে একেবারে কিছুই জানা নেই তাঁর। দেখবেন কোথায়? টিভি তো নেই। তাই প্রশ্ন শুনে একটু বিভ্রান্ত।
ইছামতীর কোলে বাংলাদেশ সীমান্তে তাঁর গ্রামের নামও খুলনা। সেখানকার মেয়ে কুসুমিকা দাস একা ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলা শুরু করার সময় অনেক গ্রামবাসী নিন্দা করেছিল। কেন তুই ছেলেদের সঙ্গে খেলছিস?
ওই পরিবেশ থেকে উঠে এসে এখন ভারতের হয়ে খেলতে চলেছেন তিনি। প্রায় ১৮ বছর বাদে জাতীয় মেয়ে দলের শিবির বসেছে কলকাতায়। একটা সময় মেয়েদের ফুটবল বলতে যেখানে বাংলাকে বোঝাত, এখন সেখানে শিবিরে রাজ্যের প্রতিনিধি বলতে মাত্র দুই। কুসুমিকা দাস ও তুলি গুণ।
সুন্দরবনের কুসুমিকা দাস (বাঁ দিকে) জাতীয় শিবিরে।
সঙ্গে বাংলার আর এক ফুটবলার তুলি গুণ। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
পিঙ্কি প্রামাণিককে নিয়ে বিতর্কে জজর্রিত বাঙালি মেয়ে খেলোয়াড় জগতে এই দু’জনে রোল মডেল হতে পারেন। বছর একুশের কুসুমিকার বাবা চাষের কাজ করেন। ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছেন। কুসুমিকার তুলনায় বয়সে বড় তুলির বাবা নেই। মা’র উৎসাহেই খেলা শুরু করেন। গড়িয়া মোড়ের কাছে বাড়ি, মা লোকের বাড়িতে কাজ করেন। তবু আট বছর ধরে ভারতের হয়ে খেলে আসছেন। একটা সময় বন্দনা পালের সঙ্গেও খেলেছেন। মাধ্যমিকে ব্যাক পেয়ে আবার বসতে চান পরীক্ষায়।
চাকরিবাকরি? এত দিন ভারতের হয়ে খেলে তুলিরই চাকরি ছিল না তো, কুসুমিকার কী হবে! বছর দুই তপসিয়ার এক ঘুপচি ঘরে থেকে চামড়ার ব্যাগ সেলাই করেছেন কুসুমিকা। খুব অল্প টাকা পেতেন। এখন কোনও চাকরি নেই। রোনাল্ডোর ভক্ত তুলি ভারতের হয়ে সাফ গেমস জিতেছেন। তবু চাকরি জোটেনি দীর্ঘ দিন। এখন গ্রিন পুলিশের চাকরিতে ঢুকেছেন সবে। সেখান থেকে র্যাফে পাঠানো হয়েছে। কুসুমিকাও গেছিলেন গ্রিন পুলিশের চাকরিতে। পরিশ্রমের বহর দেখে দু’দিন পরেই ছেড়ে দিয়েছেন।
এত দুর্গম জায়গায় থাকেন কুসুমিকা, পাসপোর্টই হয়নি তাঁর। গ্রামের তিন জন পাসপোর্ট করার দায়িত্ব নিয়েও করতে পারেনি। ফলে জানুয়ারিতে ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েও যাওয়া হয়নি বিদেশে। এখন আশায়, ভারতের হয়ে শ্রীলঙ্কায় সাফ খেলতে যেতে পারবেন। আশায়, জাতীয় শিবিরের কো অর্ডিনেটর দেবু মুখোপাধ্যায় পাসপোর্ট করে দেবেন। দেবুবাবুর মেয়ে সুদেষ্ণা আবার জাতীয় দলের ম্যানেজার।
তিনটি নদী পেরিয়ে কুসুমিকা প্র্যাক্টিস করতে আসত ন্যাজোটে। সেখানে আদিবাসী মেয়েরা কুসুমিকাকে দেখেই বেশি করে ফুটবলে এসেছে। তিনটি নদীর মধ্যে কোন নদীটা ভয়ঙ্কর? যতটা সহজে, স্বতঃস্ফূর্ত গলায় মেয়েটি রায়মঙ্গল নদীর ভয়ঙ্কর দিক ব্যাখ্যা করেন, ফুটবলের টেকনিক্যাল দিক ব্যাখ্যা করতে পারেন না। ভাল কোচের হাতে তো পড়েনইনি। খেলেন সাইডব্যাকে। তুলি যেমন আগে খেলতেন ফরোয়ার্ডে। এখন সরে আসতে আসতে রক্ষণে।
এই মুহূর্তে বাংলায় মেয়েদের এক নম্বর ফুটবলার কুসুমিকা বললেন, “আমি ছোট থেকেই ফুটবল ভালবাসি। বাবা, দাদাদের দেখে এ খেলাটায় এসেছি।” তাঁর উৎসাহ দেখে স্থানীয় এক ব্যক্তি তাঁকে নিয়ে যান বসিরহাটে। সেখান থেকে কলকাতা লিগ। অবশেষে জাতীয় দলে।
তিনটি নদী পেরিয়ে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায় ফুটবল খেলতে যাওয়ার পরিশ্রম এত দিনে সার্থক।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.