অমর্ত্যর হাতেই আস্থার আশ্রয়ে সোমনাথ
‘আস্থা’ শব্দটা কোনও ভাবেই ‘অনাস্থা’কে এড়িয়ে যেতে পারে না।
“বইটির নাম ‘আস্থার আশ্রয়ে’, কিন্তু অনাস্থার প্রতি সন্দেহ রয়েছে সেখানে। নামটি বরং হওয়া উচিত ছিল ‘আস্থার আশ্রয়ে, অনাস্থার সাহচর্যে!” মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মধ্য কলকাতার এক প্রেক্ষাগৃহে লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী প্রকাশ অনুষ্ঠানে সরস ভঙ্গিতে কথাগুলো বললেন অমর্ত্য সেন।
সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় মানেই অবধারিত ভাবে মনে পড়তে বাধ্য, ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি নিয়ে প্রথম ইউপিএ সরকার থেকে বামপন্থীদের সমর্থন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত! এবং দলের সিদ্ধান্ত না মেনে লোকসভার তৎকালীন স্পিকার সোমনাথের নিজের অবস্থানে অটল থাকা! সংসদীয় গণতন্ত্রে লোকসভার স্পিকার কোনও দলদাস নন বলেই মনে করেছিলেন তিনি। অতঃপর সিপিএম থেকে বহিষ্কার। ‘‘আমি সজ্ঞানে এই আদর্শোচিত সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, অন্যায্য ভাবে পার্টির বিরোধী বলে নিন্দিত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও আমি ভারতের সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা করব।...এমন এক নিয়ম এ বার থেকে চালু করা উচিত, যাতে স্পিকারের আসনে থাকাকালীন সেই সাংসদকে তাঁর দলীয় সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়!” সদ্যপ্রকাশিত আত্মজীবনীর বাংলা অনুবাদে লিখছেন সোমনাথ।
সেই আত্মজীবনীতেই আছে স্পিকার হওয়ার পর সংসদে হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা চালু করার কথা। শ্রাবণের প্রথম সন্ধ্যায় কলকাতায় সোমনাথবাবুর বই প্রকাশ করলেন যিনি, সেই ‘আইডিয়া অফ জাস্টিস’-এর লেখকই ‘ন্যায়ের ধারণা’ নিয়ে সেই প্রথম স্মারক বক্তৃতাটি দিয়েছিলেন।
বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে অমর্ত্য সেন ও সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
এ দিন অবশ্য দু’জনের কথাতেই বারংবার ভেসে এসেছে একটি আপ্তবাক্য সংসদীয় গণতন্ত্রের কোনও বিকল্প নেই। সংসদীয় গণতন্ত্র দেশের প্রতিটি নাগরিকের কল্যাণ করতে পারে কি না, দর্শকাসন থেকে সংশয় তুলেছিলেন এক জন। অমর্ত্য তাঁকে বললেন, “এই যে আপনি প্রশ্ন করে আমার কথা শুনতে চাইছেন, এটিই গণতন্ত্র। নইলে তো আমাকে দাবিয়ে দিয়ে বলতেন, আমি সব জানি। এই যে আমি সব জানি, অন্যরা কেউ জানে না, এই আত্মবিশ্বাস গণতান্ত্রিক প্রকরণ নয়।” সোমনাথবাবুর বই প্রকাশের আগে প্রতীচী ট্রাস্টের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন অমর্ত্য। সেখানে শিক্ষক সংগঠনে রাজনীতির রং থাকার দরকার কি না, তাই নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। অমর্ত্যর সটান উত্তর, ‘‘সংগঠন থেকে রাজনীতি দূরে চলে যাবে, এটা সম্ভব নয়।’’
এখানেই তো অমর্ত্য সেনের দর্শন। শিক্ষক সংগঠনে রাজনীতি থাকা-না থাকা নিয়ে গণতন্ত্রে অজস্র যুক্তি থাকতে পারে। কখনও কখনও এক যুক্তির সঙ্গে অন্য যুক্তির সংঘর্ষও হতে পারে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, কোনও একটিকে সঠিক প্রতিপন্ন করে অন্যগুলিকে দাবিয়ে দিতে হবে।
গণতন্ত্রের এই দার্শনিকের হাত বেয়েই তো ‘আস্থার আশ্রয়ে’ প্রকাশ পাওয়ার কথা ছিল। সিপিএমের টিকিটে ন’বার ভোটে জেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় গণতন্ত্রেই ভরসা রেখেছিলেন যে! “স্পিকারের বাংলা হিসেবে ‘লোকসভার অধ্যক্ষ’ শব্দটা ঠিক নয়। স্পিকারের একটা অর্থ তো যিনি বলেন। আর একটা অর্থ কিন্তু যিনি বলার সুযোগ করে দেন,’’ হাসছিলেন অমর্ত্য।
গণতন্ত্র শুধু বলে না, অন্যকে বলার সুযোগও করে দেয়।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.