বছর শেষে আসছে পাকিস্তান: ইডেনে এক দিনের ম্যাচ
আস্থা বাড়াতে ফের ভরসা বাইশ গজেই
পাকিস্তানের সঙ্গে আস্থা বাড়াতে আবার ক্রিকেটের দরজা খোলার সিদ্ধান্ত নিল নয়াদিল্লি। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিসিসিআই কর্তা রাজীব শুক্লর সঙ্গে বৈঠক হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের। তার পরে বোর্ড সভাপতি এন শ্রীনিবাসন জানান, আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে চেন্নাই, দিল্লি এবং কলকাতায় দু’দেশের মধ্যে তিনটি এক দিনের ম্যাচ হবে। আর বেঙ্গালুরু এবং আমদাবাদে হবে দু’টি টি-২০ ম্যাচ।
দীর্ঘ পাঁচ বছর পরে এমন কোনও দ্বিপাক্ষিক সিরিজে মুখোমুখি হতে চলেছে দু’দেশ। ২৬/১১-র পরেই ক্রিকেট সম্পর্কে ইতি টেনে দিয়েছিল দিল্লি। আজকের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সীমান্তের দু’পারের অনেক ক্রিকেটারই। সেই দলে আছেন পাকিস্তানের জাহির আব্বাস থেকে জাভেদ মিয়াঁদাদ, ভারতের বিষেণ সিংহ বেদী প্রমুখ। পাক ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান মহম্মদ জাকা আসরফও বিসিসিআইয়ের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভিন্ন মত সুনীল গাওস্করের। দীর্ঘদিন ভারতীয় বোর্ডের টেকনিক্যাল কমিটিতে থাকা গাওস্কর আজ নিজেকে অনেক বেশি মুম্বইকর হিসেবে সামনে আনলেন। প্রকারান্তরে ২৬/১১-র প্রসঙ্গ টেনে বললেন, “উল্টো দিক থেকে যখন সহযোগিতার কোনও নামগন্ধ নেই, তখন এত তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে কেন, মুম্বইকর হিসেবে সেটা আমি বুঝতে পারছি না।” আর এক প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ আরও কড়া। তিনি জানিয়েছেন, যত ক্ষণ না হাফিজ সইদকে (লস্করের প্রতিষ্ঠাতা এবং মুম্বই হামলায় অন্যতম প্রধান ষড়যন্ত্রী) ধরা হচ্ছে, তত ক্ষণ এই ক্রিকেট ম্যাচ করে লাভ নেই। তবে বিজেপি সাংসদ আজাদ যে কঠোর অবস্থান নেবেন, সেটা স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন অনেকে। তাঁর দল বিজেপিও বলেছে, “আগে ২৬/১১-র হামলায় জড়িত জঙ্গিদের দলটাকে আনা হোক!” শিবসেনাও এই সফরের বিরোধিতা করেছে। এমনকী, মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের সভাপতি মানিকরাও ঠাকরেও বলেছেন, “দেশ কী চায়, সেটা মাথায় রেখেই চলতে হবে বিসিসিআইকে।”
উল্টো দিক থেকে যখন সহযোগিতার নামগন্ধ
নেই, তখন এত তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে কেন,
মুম্বইকর হিসেবে আমি সেটা বুঝতে পারছি না।

গাওস্কর অবশ্য একই সঙ্গে ক্রিকেটারদের টানা খেলার প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, “এই সফরের ফলে তো ওরা বিশ্রামই পাবে না।”
অনেকে কিন্তু মনে করছেন, মুম্বইকরদের একাংশের মনোভাবই উঠে এসেছে গাওস্কর বা মানিকরাওদের কথায়। মুম্বই হামলার ক্ষত যে এখনও মনের মধ্যে রয়ে গিয়েছে, সেটা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলে বুঝিয়েছেন আরও অনেকেই। কিন্তু নয়াদিল্লির মনোভাব হল, হামলার পিছনে যারা রয়েছে তাদের শাস্তির জন্য চাপ দেওয়ার পাশাপাশি দু’দেশের মধ্যে আস্থা বাড়ানোটাও জরুরি। আর সেই কাজটা সব থেকে ভাল হওয়া সম্ভব ক্রিকেটের মাঠে।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ স্বয়ং চান, দু’দেশের মধ্যে আলোচনার দরজা যেন বন্ধ না হয়। মুম্বই হামলার পরে সেই আলোচনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার পরে শর্ম-অল-শেখে গিয়ে বরফ গলাতে উদ্যোগী হন মনমোহন। তাঁর যুক্তি, আলোচনা চালু থাকলে তবু সন্ত্রাস দমন-সহ বিভিন্ন বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করা যাবে। কিন্তু দরজা বন্ধ করে দিলে তো সবটাই ক্ষতি। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই সচিব পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়। দু’দেশের মধ্যে আস্থা বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ করার কথাও ভাবা হয়। ক্রিকেট কূটনীতি তার অন্যতম।
সম্প্রতি ক্রিকেটীয় সম্পর্ক নতুন করে চালু করার ব্যাপারে পাকিস্তান নানা ভাবে প্রস্তাব দিতে থাকে। দু’দেশের মধ্যে ক্রিকেট সিরিজ বন্ধ হয়ে গেলেও গত বছর ৩০ মার্চ মোহালিতে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় দু’দেশ। সেই খেলা দেখতে এসে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, আবার ক্রিকেট সিরিজ চালু হোক। কিছু দিন আগে ভারতের কাছে মোহালির মাঠ চেয়ে আবেদন করে পাকিস্তান। ২০০৯ সালে লাহৌরে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের উপরে হামলার পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসি পাকিস্তানে খেলা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ইসলামাবাদ বলেছিল, মোহালিতে তারা ভারত বা অন্য কোনও তৃতীয় দেশের সঙ্গে খেলতে পারে। ভারতের বিদেশসচিব রঞ্জন মাথাইকে পাক বিদেশসচিব জলিল আব্বাস জিলানিও জানান, ক্রিকেটই সব থেকে কার্যকর আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ হতে পারে।
ভারতের সঙ্গে আসন্ন সিরিজে কিন্তু মোহালিকে রাখা হয়নি। যেমন রাখা হয়নি শরদ পওয়ারের শহরের কোনও মাঠকেও। তবে দিল্লি দরজাটা শেষ পর্যন্ত খুলেছে। যা দেখে ভারতীয় বোর্ডের অনেকেই মনে করছেন, এর ফলে আগামী আইপিএলেও পাক খেলোয়াড়দের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হতে পারে।
কিন্তু কেন রাখা গেল না মোহালির মাঠ? বিসিসিআইয়ের কিন্তু মোহালিতে খেলা দিতে আপত্তি ছিল না। বস্তুত, এ দিন রাজীব শুক্লের সঙ্গে চিদম্বরমের বৈঠকে প্রাথমিক ভাবে বোর্ডের পক্ষে যে তিনটি মাঠের কথা বলা হয়েছিল, তাতে মোহালি ছিল। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, কিন্তু গত বারের অভিজ্ঞতা থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ভারত-পাক সীমান্তবর্তী কোনও শহরে এই খেলা রাখতে চায় না। এর পিছনে রয়েছে নিরাপত্তাজনিত কারণ। রাজীব-চিদম্বরম বৈঠকেই তাই খারিজ হয়ে যায় মোহালির নাম।
শেষ বার ভারত-পাক সিরিজ হয়েছিল ২০০৭ সালের নভেম্বরে। সেই উত্তেজক সিরিজের কথা মনে করিয়ে দিয়ে জাহির আব্বাস বলেন, “দুই দেশ খেলবে আর বাকি বিশ্ব দেখবে। এই ম্যাচই তো ক্রিকেটের সব থেকে বড় বিজ্ঞাপন।” শ্রীনিবাসনের আমন্ত্রণে আইপিএল সেমিফাইনাল দেখতে এসে পাক বোর্ড প্রধান আসরফ প্রাথমিক আলোচনা সেরে যান। গত মাসে আইসিসি এবং মালয়েশিয়ায় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সভায় কথা আরও এগোয়।
তার পরে আজকের সিদ্ধান্ত।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.