সম্পাদকীয় ১...
ফতোয়া-কবলিত
ভারত কি ক্রমে আফগানিস্তান হইয়া যাইতেছে? অন্তত গ্রামীণ ভারত? নাগরিক কেন্দ্র অর্থাৎ শহরগুলির কথা ছাড়িয়া দেওয়া গেল। সেখানে তো ইদানীং চলন্ত গাড়িতে তুলিয়া মহিলাকে ধর্ষণ কিংবা নিশি-নিলয়ে মদ্যপান করার ‘অপরাধে’ একাকী তরুণীকে পুরুষদের সমবেত নিগ্রহের গৌরবময় ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠিত হইতেছে। অর্থাৎ আকারে-প্রকারে বুঝাইয়া দেওয়া হইতেছে, মহিলাদের স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করার পরিণাম কী হইতে পারে। গ্রাম-ভারতে সমাজপতিরা অনেক বেশি বেপরোয়া। তাঁহারা পঞ্চায়েতের মঞ্চ হইতে ফতোয়া জারি করিতে পারেন চল্লিশ-অনূর্ধ্ব মহিলাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ, একাকী, সন্ধ্যার পর বাড়ির বাহিরে পা দেওয়া নিষিদ্ধ, প্রেমজ বিবাহ তো নিষিদ্ধ বটেই। নারীর স্বায়ত্তশাসনের পরিসর সর্বত্রই সঙ্কুচিত করিয়া দেওয়া হইতেছে।
ভারত খাতায়-কলমে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। নারী-পুরুষের সমানাধিকার অনুশীলনের রাষ্ট্রও। সংখ্যালঘু সমাজে নারীর গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত করার ও তাহার স্বাধীনতা খর্ব করার যে প্রথা চালু, ব্যক্তিগত আইনের অধিকারের অজুহাতে তাহা অনাক্রম্যতার রক্ষাকবচে মণ্ডিত। কিন্তু সংখ্যালঘুর বাহিরে যে ব্যাপক ভারতীয় সমাজ, সেখানেও নারীর অধিকার নানা অজুহাতে খর্ব করার অপচেষ্টা অব্যাহত। প্রমাণ: উত্তরপ্রদেশের বাগপত জেলার আসারা গ্রাম। সেই গ্রামের ‘খাপ পঞ্চায়েত’ই নারীর গতিবিধি ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করিয়া আলোচ্য নির্দেশনামা জারি করিয়াছে। এ যেন তালিবান-শাসিত আফগানিস্তান। কোন দিন শুনা যাইবে, মহিলাদের আপাদমস্তক আবৃত না করিয়া বাড়ির বাহিরে পা রাখিলে বেত্রাঘাত কিংবা গাছের ডালে জীবন্ত ঝুলাইয়া দিবার ফরমানও জারি হইতেছে। দেওবন্দি মাদ্রাসার উলেমারা তো মাঝেমধ্যে এ ধরনের রোমহর্ষক বিধান দিয়াও থাকেন। নারীর স্বভাব-চরিত্র ঠিক রাখিতেই নাকি এই সব বিধান। এগুলি পালিত না হইলে নাকি সমাজের শৃঙ্খলা সুরক্ষিত থাকে না। লক্ষণীয়, গুয়াহাটিতে যে দুর্বৃত্তগুলি প্রকাশ্য রাজপথে তরুণীর শ্লীলতাহানি করিয়াছে কিংবা ম্যাঙ্গালুরুর নিশিনিলয়ে ‘শ্রীরাম সেনে’র যে স্বেচ্ছাসেবকরা কলেজপড়ুয়া তরুণীদের নিগ্রহ করিয়াছিল, তাহারাও মহিলাদের অতিরিক্ত স্বাধীনতা উপভোগের ভয়ানক বিরোধী। শ্রীরাম সেনে-র স্বেচ্ছাসেবকরা সেই বিরোধিতাকে একটা তাত্ত্বিক রূপ দিয়াছিল, গুয়াহাটির দুষ্কৃতীরা সে সব জটিলতার মধ্যে না গিয়া নিজেদের জৈব প্রবৃত্তিকে অর্গলমুক্ত করিয়া তাহার দায় স্বাধিকারপ্রমত্ত নারীর উপর চাপাইয়া দেয়। উভয়ে একই পথের পথিক। আর নারীর অধিকারের সীমানা ধার্য করার ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের বিভাজনও তত প্রাসঙ্গিক নয়। ইহা করার অধিকার কিন্তু খাপ পঞ্চায়েতের মাতব্বর কিংবা নিশি-নিলয়ের পুরুষ গ্রাহকদের কেহ দেয় নাই। গণতন্ত্রে অনেকেরই অনেক অধিকার থাকে। কিন্তু গণতন্ত্রে রাষ্ট্রের নিজস্ব আইনকানুনও থাকে। খাপ পঞ্চায়েত ইচ্ছা করিলে রাষ্ট্রীয় বা সাংবিধানিক বিধানের পরিপন্থী কোনও ফরমান কিংবা ফতোয়া জারি করিতে পারে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সে কথাই জানাইয়াছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্র সে ভাবে ফতোয়াবাজদের সেই স্বৈরাচারের বিরোধিতা করে নাই। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব তাঁহারই রাজ্যের এক পঞ্চায়েতের এমন প্রতিক্রিয়াশীল ও মহিলা-বিরোধী ফতোয়ার কথা শুনিয়াও কোনও বিরূপ মন্তব্য করেন নাই। আর বাগপত জেলার অবিসংবাদী জাঠ নেতা চৌধুরী চরণ সিংহের পৌত্র, অধুনা বিমান পরিবহণ মন্ত্রী অজিত সিংহের পুত্র জয়ন্ত সিংহের মন্তব্য, পঞ্চায়েত মাতব্বরদের এই বিধান ফতোয়া নয়, ‘গুরুজনদের পরামর্শ’। নারীর অধিকার খর্বকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের এই উদার সহনশীলতা ও প্রশ্রয়ই দেশে কন্যাভ্রূণ হত্যা, পণপ্রথাজনিত বধূহত্যা, ধর্ষণ, পাচার ও শ্লীলতাহানি সহ মহিলাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের সংখ্যা দিন-দিন বাড়াইয়া চলিয়াছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.