ডায়েরি নিল না পুলিশ
প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে থানায় থানায় ঘুরলেন মা
হু আলোচনা, বহু সমালোচনা। ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতে পার্ক স্ট্রিট থেকে ঘোলা সাধারণ মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়ানোর জন্য পুলিশের বিভিন্ন প্রচেষ্টা। তবু প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে থানায় থানায় ঘুরেও অভিযোগ জানাতে পারলেন না অসহায় বিধবা। দু’টি থানার পুলিশ নিজেদের এলাকা নয় বলে দায় এড়িয়ে জেনারেল ডায়েরি না নিয়েই তাঁদের ফিরিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ।
উত্তরপাড়ার বিপ্লবী নরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি সরণির বাসিন্দা, বছর কুড়ির সৃজিত মজুমদার আংশিক প্রতিবন্ধী। কানে ভাল শুনতে পান না। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বিসিএ পাঠ্যক্রমের ছাত্র সৃজিত শনিবার দুপুর ১২টা নাগাদ নিমতা কলাবাগানে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে বাড়ি ফেরার জন্য বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রমোদনগর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েছিলেন। সৃজিতের বয়ান অনুযায়ী, আচমকাই কালো প্যান্ট ও নীল জামা পরা এক যুবক ‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো একটি মোটরবাইকে চেপে তাঁর সামনে এসে দাঁড়ায়। নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাঁর বিষয়ে সব জানতে চায় সে। তার পরে হঠাৎই সৃজিত অসামাজিক কাজে অভিযুক্ত বলে তাঁকে ধমকাতে শুরু করে বলে অভিযোগ। সৃজিত বলেন, ‘‘পুলিশ ধরেছে ভেবেই ভয় করছিল। আমাকে একটা ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে নিজের মোবাইলে কারও সঙ্গে ছেলেটি কথা বলল। তার পরে আমার হাতের আংটি, মোবাইল, এটিএম কার্ড, পেনড্রাইভ পরীক্ষা করে দেখতে হবে বলে ব্যাগে ভরে নিল। সেগুলি ফেরত চাওয়ায় আমাকে খুব মারল। সব কেড়ে মোটরবাইকে চেপে দমদমের দিকে পালিয়ে গেল।’’
ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন সুজাতাদেবী ও সৃজিত। রবিবার। ছবি: প্রকাশ পাল
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সৃজিতের মোবাইল থেকে তাঁর মা সুজাতাদেবীর কাছে ফোন যায়। সুজাতাদেবী জানান, নিজেকে দক্ষিণেশ্বরের বাসিন্দা অরিন্দম দাস বলে পরিচয় দিয়ে ওই যুবক বলে, সে সৃজিতের বন্ধু। কিছু দিন আগে সৃজিত তার কাছ থেকে ১৫০০ টাকা ধার নিয়েছিল। তা শোধ না দেওয়ায় সে সৃজিতের জিনিসপত্র নিয়ে নিয়েছে। এর পরেই ফোন কেটে দেয়। সুজাতাদেবী ভয় পেয়ে বারবার ছেলের মোবাইলে ফোন করেন। কিন্তু তখন সেটি বন্ধ ছিল। ইতিমধ্যে গৃহশিক্ষকের কাছে ফিরে গিয়ে ঘটনার কথা জানায় সৃজিত। ওই শিক্ষক সুজাতাদেবীকে তাঁর বাড়িতে আসতে বলেন।
এর পরের ঘটনাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, এত কিছুর পরেও পুলিশ কত দায়িত্বজ্ঞানহীন। প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে দুপুর দেড়টা নাগাদ বেলঘরিয়া থানায় যান সুজাতাদেবী। কিন্তু ডিউটি অফিসার ঘটনাটি নিমতা থানা এলাকার বলে ডায়েরি নিতে অস্বীকার করেন বলে অভিযোগ। এর পরে নিমতা থানায় পৌঁছলে সেখানেও ডিউটি অফিসার অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে সৃজিতকেই ধমকাতে শুরু করেন বলে জানান সুজাতাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলে যে আর পাঁচ জনের মতো স্বাভাবিক নয়, এ কথা অফিসারকে বলায় উনি আমাকেও ধমকান। দু’ঘণ্টা পরে এক অফিসার গাড়ি করে আমাদের ঘটনাস্থলে নিয়ে যান। পথে দু’জায়গায় লরি থামিয়ে টাকাও নেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে উনি বলেন, এটা দমদম থানার এলাকা। দমদমে গিয়ে অভিযোগ জানান।’’
সুজাতাদেবী বলেন, ‘‘পুলিশের গাড়ি আমাদের বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। ওই অফিসার বলে গেলেন, ‘পরে এক দিন আসুন। দেখি কী করা যায়।’ আমি বললাম, ছেলের ফোনটা নিয়ে ছিনতাইকারীরা খারাপ কাজে ব্যবহার করতে পারে। ওটা বন্ধ করার জন্যও অন্তত ডায়েরিটা নিন। কিন্তু উনি কথা শুনলেন না। অসুস্থ ছেলে তখন ভয়ে কাঁপছে। আমি দিশাহারা হয়ে একা রাস্তায় দাঁড়িয়ে।’’
রবিবার সকালে ঘটনাটি জানাজানি হতে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট নড়েচড়ে বসে। পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় সিংহ নিমতার আইসি-কে সৃজিতদের বাড়িতে গিয়ে অভিযোগ নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন। বেলঘরিয়ার এডিসি বিশ্বজিৎ ঘোষ ও এসিপি মৌমিতা বিশ্বাস দুই থানার পুলিশকর্মীদের আচরণে দুঃখপ্রকাশ করে সুজাতাদেবী ও সৃজিতের কাছ থেকে পুরো ঘটনাটি শোনেন। বেলঘরিয়া ও নিমতার সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীদের শো-কজ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘এমন ঘটনা অনভিপ্রেত। দ্বিতীয় বার আর যেন না ঘটে, সে জন্য সব থানাকে সতর্ক করা হয়েছে। তদন্ত হচ্ছে। পুলিশ স্টিকার লাগানো বাইকটি কোথাকার খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.