একই কারণে তাঁদের কাছে পৃথক ভাবে দু’বার টাকা চাওয়া হয়েছে, এডিডিএ-র কাছে জামুড়িয়া শিল্পতালুকের তরফে এমনই অভিযোগ জানাল বণিকসভা। শনিবার এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি বৈঠকে এই অভিযোগ জানানো হয়।
বণিকসভার তরফে জানানো হয়, ২০০৪ সালে শিল্পতালুক গড়ে ওঠার সময়ে এডিডিএ এবং পুরসভার মধ্যে আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়, ইন্টিগ্রেটেড স্টিল এবং স্পঞ্জ আয়রন কারখানার মালিকদের একর প্রতি এক লক্ষ টাকা এবং অন্য শিল্প মালিকদের প্রতি একরে ৫০ হাজার টাকা করে জমা দিতে হবে পুরসভার কাছে। তা দিয়ে শিল্পতালুকের রাস্তা এবং নর্দমা হবে। বছর দু’য়েক আগে এডিডিএ ফের বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, ১৯৭৯-র ‘টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি প্ল্যানিং অ্যাক্ট’ অনুযায়ী শিল্পমালিকদের প্রতি বর্গমিটারের জন্য ১৫০ টাকা করে দিতে হবে। কারখানা মালিকেরা তখন এডিডিএ-র তৎকালীন চেয়ারম্যান বংশগোপাল চৌধুরীর কাছে প্রতিবাদ জানান। তাঁরা জানিয়েছিলেন, ২০০৪-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী তাঁরা পুরসভাকে টাকা দিয়েছেন। তাই একই উদ্দেশে দু’বার টাকা দিতে হবে কেন, এ প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। বংশগোপালবাবু তখন নতুন বিজ্ঞপ্তি স্থগিত রাখেন।
জামুড়িয়া বণিকসভার সম্পাদক অজয় খেতান জানান, রাজ্যে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পরে এডিডিএ-র নতুন চেয়ারম্যান ফের প্রতি বর্গমিটারে ৭৫ টাকা করে জমা দেওয়ার নির্দেশিকা পাঠান। তখন আবার কারখানা মালিকেরা এডিডিএ-র চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান। সেই মতো শনিবার জামুড়িয়া বণিকসভা ভবনে বৈঠক হয়। একই শিল্পতালুকে উন্নয়নের কারণ দেখিয়ে দু’বার কেন টাকা চাওয়া হল, তা জানতে চান তাঁরা।
এডিডিএ-র তৎকালীন চেয়ারম্যান তথা আসানসোলের সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীর বক্তব্য, “দু’বছর আগে রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রক সমস্ত উন্নয়ন পর্ষদের সঙ্গে একটি বৈঠকে জানায়, প্রতিটি শিল্পতালুককে উন্নয়ন খাতে টাকা দিতে হবে। সে অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি জারির পরে কারখানা মালিকেরা আমার সঙ্গে দেখা করে ‘ফি’ কমানোর দাবি জানায়। তা আমরা রাজ্য সরকারকে পুনর্বিবেচনার জন্য জানাব বলেছিলাম। তার পরেই সরকারে ক্ষমতার হাতবদল হয়।” তাঁর প্রশ্ন, “বছর পেরোলেও নতুন সরকার এ ব্যাপারে কেন কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারল না কেন?”
এডিডিএ-র বর্তমান চেয়ারম্যান তথা আসানসোলের তৃণমূল বিধায়ক তাপসবাবু অবশ্য জানান, জামুড়িয়া পুরসভা কত টাকা আদায় করেছে, তার হিসেব চাওয়া হবে। তা দেখার পরে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাপসবাবুর বক্তব্য, “টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি প্ল্যানিং অ্যাক্টে টাকা দিতেই হবে। আলোচনার মাধ্যমে তা কতটা কমানো যায়, দেখা হবে।”
জামুড়িয়া বণিকসভার অভিযোগ, উন্নয়নের জন্য এক বার টাকা নেওয়া হলেও নদর্মা তৈরি হয়নি। দু’টি প্রধান রাস্তা ও সেগুলির সংযোগকারী রাস্তা তৈরির কথা ছিল। মণ্ডলপুর থেকে দামোদরপুর প্রধান রাস্তাটির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখনও তা অসম্পূর্ণ। মণ্ডলপুর থেকে শেখপুর পর্যন্ত প্রধান রাস্তার কাজ পুরসভা এক সময়ে কিছুটা করলেও তা বেহাল হয়ে পড়ায় তাঁরা নিজেরাই তৈরি করে নিয়েছেন বলে কারখানা মালিকেরা জানান।
বংশগোপালবাবু অবশ্য বলেন, “আমরা প্রথমেই বলেছিলাম, তালুকের মধ্যে কোনও কাজ এডিডিএ করবে না। যা করা হবে তা, তার লাগোয়া এলাকায়। পুরসভাকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।” তাপসবাবু জানান, পুরসভা কোন খাতে কত খরচ করেছে, তার হিসেবও চাওয়া হবে। জামুড়িয়ার পুরপ্রধান ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এডিডিএ হিসেব চাইলে তা দেওয়া হবে। |