গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এক মাওবাদী দম্পতিকে গ্রেফতার করল পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। রাজু মুর্মু ও সুজাতা কুমার নামে মাওবাদীদের অযোধ্যা স্কোয়াডের সদস্য ওই দম্পতিকে বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার ওন্দা থানা এলাকা থেকে ধরা হয়। পুরুলিয়ার এসপি সি সুধাকর শুক্রবার বলেন, “আমাদের কাছে খবর ছিল, এই মাওবাদী দম্পতি নিজেদের গ্রামে রয়েছে। বাঁকুড়া পুলিশের সাহায্যে তাঁদের ধরা হয়। রাজু ওরফে রমেশের বিরুদ্ধে একাধিক মাওবাদী নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।”
মাওবাদীদের অযোধ্যা স্কোয়াডের বেশ কয়েক জন সদস্য গ্রেফতার, যৌথবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সদস্যের মৃত্যু এবং প্রথম সারির একাধিক নেতা-নেত্রীর আত্মসমর্পণ এই স্কোয়াডকে অনেকটাই দুর্বল করে দিয়েছে। অধরা স্কোয়াড সদস্যদের গতিবিধির খোঁজ চালাচ্ছিল পুলিশ। রাজু ওরফে রমেশের খোঁজ পাওয়া যায় ওন্দার মোহনপুর গ্রামে। পুলিশ সূত্রের খবর, মোহনপুরে রাজুর খুব একটা পরিচিতি নেই। পুরুলিয়ার ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশ জঙ্গলঘেরা নাকাইজুড়ি মোড় ঘিরে ফেলে। সন্ধ্যার দিকে রাজুকে গ্রেফতার করা হয়। রাজুকে জেরা করে মোহনপুর থেকে রাতে তাঁর স্ত্রী সুজাতাকেও ধরে পুলিশ।
পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে, ২০১১ সালের জুলাই থেকে সে অযোধ্যা স্কোয়াডে রয়েছে। তার আগে রাজু প্রথমে ঝাড়খণ্ডের দলমা স্কোয়াড, পরে গোটশিলা স্কোয়াডে ছিলেন। অযোধ্যা স্কোয়াডে রাজু ছিলেন দ্বিতীয় সারির ‘সেকশন কমান্ডার’। এই স্কোয়াডের যে ক’জন সদস্য গুলিযুদ্ধে পারদর্শী ছিলেন, রাজু তাঁদের অন্যতম। ২০১০ সালের নভেম্বরে ঘাটশিলার জঙ্গলে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে মাওবাদী নেতা অরূপ মুচির স্কোয়াডের যে সংঘর্ষ হয়, তাতে ছিলেন রাজু। ওই সংঘর্ষে অরূপের মৃত্যু হয়। গত বছর গ্রীষ্মে (মে-জুন)এসডিপিও (ঘাটশিলা) অনীশ গুপ্ত ঘাটশিলার ডাহিমারির জঙ্গলে অভিযানে গিয়ে মাওবাদীদের হামলার মুখে পড়েন। ওই পুলিশকর্তার দেহরক্ষী প্রাণ হারান। ওই সংঘর্ষেও রাজু ছিলেন বলে পুলিশের দাবি। এর পরেই রাজু অযোধ্যা স্কোয়াডে যোগ দেন।
গত বছর ১৪ নভেম্বর অযোধ্যা পাহাড়ের নীচে বলরামপুরের খুনটাঁড় গ্রামে হানা দিয়ে এক তৃণমূল কর্মীর বাবা ও ভাইকে খুন করে পাহাড়ের দিকে ফিরে যাওয়ার পথে যৌথ বাহিনীর মুখোমুখি পড়ে মাওবাদীরা। ওই যুদ্ধেও রাজু ছিলেন বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। সংঘর্ষে দুই মাওবাদী স্কোয়াড সদস্য এবং নাগা বাহিনীর এক জওয়ান মারা যান। রাজুর বিরুদ্ধে বলরামপুরের ঘাটবেড়া গ্রামের তৃণমূল কর্মী জিতু সিংহ সর্দার ও খুনটাঁড়ের জোড়া খুনের অভিযোগ রয়েছে। ২০১১-র শেষের দিকে রাজু অযোধ্যা স্কোয়াডেরই সদস্য, বলরামপুরের বেড়সা গ্রামের সুজাতাকে বিয়ে করেন। সুজাতা স্কোয়াডে সুষমা নামে পরিচিত ছিলেন। শুক্রবার ওই দম্পতিকে ৫ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। |