গ্রামের নাম নাজিরচক। রানিতলার কর্দমাক্ত জনপদ। শুক্রবার দুপুর থেকে গ্রামে দেদার ব্যস্ততা। বর আসবে যে! বর নয়, এল পুলিশ। এবং কাশ্মীরি যুবক গোলাম রসুলের সঙ্গে সপ্তম শ্রেণির পারভিনার বিয়েটাই রুখে দিল তারা।
কেন? গল্প সেই এক, বিয়ের বয়স হওয়ার আগেই গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছিল মেয়েটি। গ্রামের কেউ নয়, এক বহিরাগত ‘কাশ্মীরি’ যুবকের সঙ্গে। তার কুলচাল কেউ জানে না, কিন্তু কাশ্মীরি তো! গ্রামের অধিকাংশের সে বোধ কাজ করেনি যে, ছেলেটি পারভিনকে বিয়ে করে ভিন দেশে নিয়ে গিয়ে ‘বিক্রি’ করে দিতে পারে। কারও সে সন্দেহ জেগেছিল নিশ্চয়। আর তিনিই ফোন করে ব্যাপারটা জানিয়ে ছিলেন স্থানীয় চাইল্ড হেল্প লাইনে। পুলিশকে বিষয়টি বলে ওই সংগঠনই রুখে দিল বিয়েটা।
আশ্চর্যের বিষয় বিয়েটা ঠিক করেচিলেন পারভিনের দাদু কালাম শেখ। তিনি অবশ্য এর মধ্যে কোনও ‘দোষ’ দেখছেন না। কারণ মেয়েদের বিয়েতো এই বয়সেই হয়! এমনই যুক্তি গ্রামীণ মানুষদের অনেকেরই। প্রাশানের কর্তাদের গ্রামে পা পড়ায় অনেকেই এ দিন জানতে পারলেন মেয়েদের বিয়ের বয়স আঠারো। ছেলের একুশ। বাদলবাটি চাঁইপাড়ার যে যুবক ওই বিয়ের সম্বন্ধ করেছিল, সেই কুরবান শেখকেও অবশ্য জেরা করছে পুলিশ। সন্দেহ বিয়ে দিয়ে মেয়ে পাচারের সঙ্গে জড়িত তাকতেই পারে সে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার বলেন, “কাশ্মীরের বারাবুলা থানার নাজান গ্রামের যুবক গোলাম রসুল। এমনই দাবি করেচে সে। তা সে যেকানকারই হোক না, মেয়ের বিয়ের বয়সটা তো হতে হবে। বিয়ের খবর জানতে পেরে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিয়ে ভেস্তে দেয়।” পুলিশের বক্তব্য, বিয়ের নামে কাশ্মীরে মেয়ে-পাচারের ঘটনা হামেশাই ঘটে। এ ঘটনাও তার ব্যতিক্রম নয়, তা আগে থেকে বলা সম্ভব? সকলকেই থানায় আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে বিয়েতে ওই নাবালিকার কোনও মত ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নসিপুর মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ওই নাবালিকার সঙ্গে বিয়ের সম্বন্ধ করে যে যুবক, সেই কুরবান শেখের এক দিদির বিয়ে হয়েছে শ্রীনগরে। কয়েক দিন আগে ওই মহিলা বাড়িতে বেড়াতে আসেন। তাঁর সঙ্গে ওই যুবকও এখানে আসে। ওই যুবকের বিয়ের জন্য পাত্রীর খোঁজ করছিলেন ওই মহিলা। শেষ পর্যন্ত কালাম শেখ তাঁর নাবালিকা নাতনির সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হন। ওই নাবালিকার বিয়ের ব্যাপারে অবশ্য বাবা পেশায় দিনমজুর মুস্তাকিন শেখের কোনও ভূমিকা ছিল না বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে। |