গত ১৭ মার্চ প্রকাশিত গুমানি দেওয়ান বিষয়ে লেখা আমার চিঠিতে কিছু তথ্যগত ভুল খুঁজে পেয়েছেন। ‘আর্ন্তজাতিক কলকাতা পুস্তক মেলা’কে যদি সর্বস্তরে ‘কলকাতা বইমেলা’ বলতে পারি, তাহলে ‘গুমানি দেওয়ান রাজ্য কবিয়াল মেলা’কে সংক্ষেপে ‘গুমানি দেওয়ান মেলা’ বললে বোধহয় গুরুতর বিষয় বিচ্যুতি ঘটে না। সরকারি ভাবে ৭-১০ মার্চ মেলাটি অনুষ্ঠিত হলেও, পত্রলেখক ‘যে স্থানীয় মানুষজন’ নিয়ে মেলাটি হয় বলে উল্লেখ করেছেন, তাঁরা মেলাটি শুরু করে দেন কবিয়ালের জন্মদিন ৫ মার্চ (২১ ফাল্গুন) থেকে। গুমানি দেওয়ানের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের দেখা হয়েছিল কি না, এ বিষয়ে পত্রলেখক ‘প্রামান্য’ তথ্য চেয়েছেন। ‘প্রামান্য’ বলতে তিনি কি বুঝিয়েছেন, তা পরিষ্কার নয়। আব্দুর রাকিবের লেখা ‘চারণ কবি গুমানি দেওয়ান’ গ্রন্থটিকে তিনি ‘তথ্যের অপলাপ’ সমন্বিত ‘ভাবাবেগে লেখা’ বলে উল্লেখ করেছেন। দীপকবাবুর চিঠি প্রকাশিত হওয়ার পর রাকিব সাহেবের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছি এবং এ কথা শোনার পর ক্ষুব্ধ রাকিব সাহেব বলেছেন যে, এই বই-এর প্রতিটি পরিচ্ছেদ ছাপার আগে তিনি তাঁর বাড়িতে গিয়ে গুমানি দেওয়ানকে পড়ে শুনিয়েছেন এবং তাঁর সম্মতি নিয়ে একেকটা পরিচ্ছেদ ছাপানো হয়েছে। দীপকবাবুর ‘মনে হয়েছে’ এই বইটি আমি একমাত্র প্রামান্য গ্রন্থ বলে গ্রহণ করেছি। পত্রলেখকের এই ধারণা ভুল। রাকিব সাহেবের বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে। তারও ৫ বছর আগে ১৯৬৩ সালে অনুষ্ঠিত হয় জঙ্গিপুর বইমেলা যা ছিল পশ্চিমবঙ্গের প্রথম বইমেলা। এই বইমেলায় যে স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়, সেখানে ‘গুণীজন পরিচিতি’ বিভাগে মহকুমার ১১ জন গুণীমানুষ সম্বন্ধে উদ্যোক্তাগন ১১টি সাক্ষাৎকার ভিত্তিক প্রতিবেদন লিখেছিলেন। উদ্যেক্তাদের মধ্যে ছিলেন অগ্নিযুগের বরুণ রায়, নাট্যকার মোহিত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ খ্যাতিমান ব্যক্তিরা। জঙ্গিপুর কলেজের বাংলার অধ্যাপক আশিস রায়ের উপর ভার পড়েছিল গুমানি দেওয়ান সম্বন্ধে লিখতে। তিনি ওই বছর জিনদিঘিতে কবিয়াল সম্রাটের বাড়িতে গিয়ে পরম আপ্যায়নে আপ্লুত হয়ে একটি রাত্রি তাঁর বাড়িতে কাটিয়ে তাঁর মুখ থেকেই তথ্য সংগ্রহ করে এনেছিলেন এবং প্রতিবেদনটি রচনা করেছিলেন। জঙ্গিপুর বইমেলা স্মারকগ্রন্থ ১৯৬৩-র ওই প্রতিবেদনে তিনি লিখেছিলেন, -- “রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণ এই চারণ কবির জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। শন্তিনিকেতনে একাধিক বার অনুষ্ঠিত কবিগানের আসরে বিশ্বকবির উপস্থিতির কথা আজও তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গেই গ্রহণ করেন। কবিগানের প্রারম্ভিক পর্বে ‘বন্দনা’ পর্যায়ে রজনীকান্ত সেনের গানের ধুয়ায় ‘রবীন্দ্রবন্দনা’ গীত হওয়ায় শ্রোতৃমণ্ডলী চমৎকৃত হন।” অশীতিপর এই প্রবীন অধ্যাপক সেদিনের উজ্জ্বল স্মৃতি নিয়ে আজও জীবিত। তিনি আজও স্পষ্ট মনে করতে পারেন, এক গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় কবিয়াল সম্রাটের বাড়ির সামনে এক মস্ত নিমগাছের তলায় অজস্র জোনাকির ভিড়ে দু’টি মোড়ায় বসে এই সমস্ত তথ্য কবিয়ালের মুখ থেকেই তিনি সংগ্রহ করেছিলেন। এই প্রতিবেদনটিকেও কি দীপকবাবু ‘ভাবাবেগ চালিত’ হয়ে ‘তথ্যের অপলাপমাত্র’ বলবেন? তাহলে তো গুমানি দেওয়ান, কিম্বা অধ্যাপক আশিস রায় কোনও একজনকে মিথ্যাচারের দায়ে পড়তে হয়।
সাধন দাস, লবনচোঁয়া-ভৈরবটোলা, মুর্শিদাবাদ
|