রাস্তা নেই, নৌকাই ভরসা দিলীপদের
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা নৌকাই এখানকার একমাত্র ভরসা।
রানিবাঁধ ব্লকের পুড্ডি পঞ্চায়েতের ৮টি গ্রামের বাসিন্দারা অন্তত এমনটাই মনে করেন। কারণ মুকুটমনিপুর জলাধার নৌকায় পেরিয়েই বছরভর তাঁদের যাতায়াত করতে হয়। বনপুকুরিয়া, ছোট বনপুকুরিয়া, নারকোলি, কুসুমখুঁদি, গোপালপুর, গোসাঁইডিহি, বারুনিয়া, সর্দারডিহি গ্রামের হাজার দশেক মানুষের এখন এটাই ভবিতব্য। খাতড়া থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার ও ব্লক সদর রানিবাঁধ থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরের এই গ্রামগুলিকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে মুকুটমনিপুর জলাধার। সড়ক পথে যোগাযোগের কোনও ব্যবস্থা নেই। তাই জলপথেই যাতায়াত করতে হয় যোগাযোগের এই দুরবস্থা এলাকার মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ব্লক সদর রানিবাঁধ বা পুড্ডি পঞ্চায়েত অফিসে যেতে তাই সমস্যায় পড়তে হয় বাসিন্দাদের। তাই বিকল্প পথের দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা কী ভাবে তাঁরা যাতায়াত করেন? মুকুটমনিপুর ও পরেশনাথ নৌকাঘাট থেকে এই গ্রামগুলিতে যাওয়া যায়। পরেশনাথ ঘাট থেকে আধঘন্টা নৌকায় বনপুকুরিয়া ঘাটে পৌঁছন যায়। সেখান থেকে নারকোলি, কুসুমখুঁদি-সহ বিভিন্ন গ্রাম পেরিয়ে পুরুলিয়ার মানবাজারে-ও যাওয়া যায়। বাসিন্দারা জানান, রানিবাঁধ বা খাতড়া যাওয়ার সোজা রাস্তা হল ওই নৌকাপথ। সড়ক পথ রয়েছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ঘুরপথে মানবাজার বা বোরো থানা এলাকার ভিতর দিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার বেশি পথ ঘুরে তাঁদের আসতে হয়। তাই তাঁরা সোজা রাস্তা হিসেবে জলপথেই যাতায়াত করেন।
ছবি: দেবব্রত দাস।
বনপুকুরিয়া, নারকোলি ও গোপালপুর গ্রামে প্রাথমিক স্কুল থাকলেও কোনও হাইস্কুল নেই। ফলে প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পার হওয়া পড়ুয়াদের ৮ কিলোমিটার দূরের পুড্ডি বা ১০ কিলোমিটার দূরের অম্বিকানগর হাইস্কুলে নৌকা পেরিয়ে যেতে হয়। বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘প্রতিদিন হেঁটে বা সাইকেলে নৌকাঘাট, তারপর নৌকায় জলাধার পেরিয়ে গিয়ে আরও কিলোমিটার পাঁচেক হাঁটা পথে অম্বিকানগর বা গোড়াবাড়ি যেতে হয়। সেখান থেকে ট্রেকার বা বাস ধরতে হয়।’’ নারকোলি গ্রামের বাসিন্দা উজ্জ্বল পাল, দুর্যোধন কর্মকাররা বলেন, “বাজার-হাট থেকে থানা, পঞ্চায়েত, ব্লক অফিস যেতে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়। যাতায়াতের অসুবিধার জন্য মনে হয় আমরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বাস করছি।” নারকোলি গ্রামের স্কুলছাত্র দিলীপ কর্মকার, সোনা কর্মকারদের আক্ষেপ, “বাড়ি থেকে স্কুলে যাতায়াত করতেই ঘণ্টা তিনেক সময় চলে যাচ্ছে। পড়াশোনার সময় মার খাচ্ছে।” স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিবার জলাধার পার হতে মাথা পিছু দু’টাকা খরচ করতে হয়। সাইকেল-সহ ভাড়া পাঁচ টাকা। মোটরবাইক থাকলে নৌকাভাড়া ১০ টাকা পড়ে। তাঁদের ক্ষোভ, নৌকায় বড়জোর যেখানে জনা পনেরো যাত্রী চাপতে পারে, সেই ছোট নৌকায় গাদাগাদি করে সাইকেল, মোটরবাইক-সহ ৩০ জন পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে পারাপার করা হয়। এতে বিপদের ঝুঁকি রয়েছে। গ্রামবাসী হরেন সর্দার, প্রহ্লাদ মর্দ্দন্যারা বলেন, “বাধ্য হয়ে বিপদের ঝুঁকি নিয়েই আমাদের যাতায়াত করতে হয়।” তাঁদের দাবি, বনপুকুরিয়া ও পরেশনাথ ঘাটে জেটি তৈরি করার পাশাপাশি প্রশাসনের নৌকায় যাত্রী তোলার ব্যাপারে নজরদারি চালানো উচিত।
স্থানীয় রেশন ডিলার দয়ালচন্দ্র পালের দাবি, যাতায়াতের অসুবিধার জন্য ঘুরপথে মানবাজার এলাকার ভিতর দিয়ে রেশনের মাল নিয়ে আসতে হচ্ছে। এতে পরিবহণ খরচ বেড়ে গিয়েছে। পুড্ডি পঞ্চায়েতের প্রধান, সিপিএমের সারদা কোড়ার বাড়ি গোপালপুরে। তিনিও বলেন, “বাড়ি থেকে নৌকায় প্রতিদিন পঞ্চায়েত অফিস যাতায়াত করতে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। বাসিন্দাদেরও যাতায়াতের সমস্যা নিজেই টের পাচ্ছি। কিন্তু আমরা নিরুপায়।” তাঁর দাবি, জেটি তৈরির দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। মহকুমাশাসক (খাতড়া) দেবপ্রিয় বিশ্বাস বলেন, “ওই এলাকার মানুষ অসুবিধার মধ্যে যাতায়াত করছেন জানি। তবে জলাধারের উপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করা সম্ভব নয়। বিকল্প কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা দেখা হচ্ছে। আপাতত জেটি তৈরির চিন্তা ভাবনা নেই।” এই প্রায় বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দাদের দুর্দশা কবে কাটবে, সে নিশ্চয়তা মেলেনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.