তদন্ত আরজিকরে
কাজ না-করেও ছ’বছর ধরে বেতন এক নার্সের
ফিসে না-গিয়েও যে প্রতি মাসে বেতন পাওয়া যায়, এ বার স্বাস্থ্য দফতরে তারও নজির গড়ার অভিযোগ উঠেছে। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক স্টাফ নার্স টানা ছ’বছর হাসপাতালে না গিয়েও মাইনে পেয়েছেন বলে এত দিনে ধরা পড়েছে। সেই মাইনের পরিমাণ ১০ লক্ষ টাকারও বেশি। একে কোনও এক জনের অসততা হিসেবে না-দেখে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে ক্রমবর্ধমান দুষ্টচক্র হিসেবেই দেখছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। এক জনের ক্ষেত্রেই এমন ঘটেছে, না কি বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে এক শ্রেণির কর্মী এমন অনৈতিকতায় মদত দিচ্ছেন, তা জানতে সামগ্রিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী।
বিষয়টি জানাজানি হলে আর জি করের অনেক কর্তা জড়িয়ে পড়বেন আঁচ করে প্রায় এক মাস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চুপচাপ ছিলেন বলে অভিযোগ। হাজিরা খাতায় সই না-থাকায় ধরা পড়ার পরে অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থনের জায়গা ছিল না। তার পরেও ওই নার্সের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ এক রকম ‘রফায়’ আসেন বলে অভিযোগ। লিখিত ভাবে দোষ স্বীকার করে ওই নার্স ৫ লক্ষ টাকা ফেরত দেন। তা সরকারি ট্রেজারিতে জমা পড়ে। হাসপাতালের নিজস্ব তদন্ত চলাকালীনই গত সোমবার তাঁকে ফের কাজে আসার অনুমতি দেন কর্তৃপক্ষ।
এর কারণ হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইনের যুক্তি খাড়া করে বলতে চেয়েছেন, “কেউ কাজে যোগ দিতে চাইলে প্রভিশনাল জয়েনিং হতেই পারে।” কিন্তু যিনি লিখিত ভাবে দোষ মেনে নিয়েছেন, তাঁকে শাস্তির বদলে কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি কি দেওয়া যায়? কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “তিনি টাকা ফেরত দিচ্ছেন এবং অনুতপ্ত। একটি সুযোগ দেওয়াই যায়।”
বিষয়টি গোচরে আসায় ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য-অধিকর্তা আর জি কর কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান, কেন সময় মতো স্বাস্থ্য দফতরে ঘটনার রিপোর্ট হয়নি? অভিযুক্তের শাস্তি হচ্ছে না কেন? হাসপাতালের অ্যাকাউন্টস অফিসার ও বিলিং অ্যাসিস্ট্যান্টকেও কারণ দর্শাতে বলেন তিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, আবার কাজ শুরু করে ওই নার্স যা বেতন পাবেন, তা কেটে বাদবাকি টাকা উশুল করা হবে। কিন্তু স্বাস্থ্য-অধিকর্তা জানান, তদন্ত শেষ না হলে অভিযুক্তের কাজে যোগ দেওয়ার প্রশ্নই নেই। কারণ তাঁর কথায়, “বোঝাই যাচ্ছে, তিনি সব জেনেই এত দিন মাইনে তুলেছেন।”
কিন্তু কী করে এত দিন সকলের চোখ এড়িয়ে গেল বিষয়টি, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসের কথায়, “ভিতরের কারও সাহায্য ছাড়া এমন অসৎ পরিকল্পনা সফল হতে পারে না।” আর জি করের অধ্যক্ষ পার্থজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, অভিযুক্ত গ্রেড-টু পর্যায়ের স্টাফ নার্স ছিলেন। যক্ষ্মা হওয়ায় ২০০৬-এ তিনি ছুটিতে যান। দু’মাস পরে আবার যোগ দেন কাজে। তার পরে কাউকে না-জানিয়ে ফের ছুটিতে যান। ২০১২ পর্যন্ত আর আসেননি। পার্থজিৎবাবু বলেন, “তদন্তে জানা গিয়েছে, হাজিরা খাতা থেকে কোনও ভাবে তাঁর নাম মুছে যায়। ফলে, তাঁর নামে কোনও ‘অ্যাবসেন্টি স্টেটমেন্ট’ আসত না। বিলিং অ্যাসিস্ট্যান্ট ও অ্যাকাউন্টস অফিসার তাই সন্দেহ করেননি।”
কিন্তু হাজিরা খাতা পরীক্ষা না-করে বেতন দেওয়া নিয়মবিরুদ্ধ। অ্যাবসেন্টি স্টেটমেন্ট ঠিক আসছে কি না, হাজিরা খাতা পরীক্ষা না-করলে তা বোঝা অসম্ভব। কর্তৃপক্ষের জবাব, “বেতনে দেরি আটকাতে খাতা সে ভাবে না দেখে শুধু অ্যাবসেন্টি স্টেটমেন্ট দেখা হত। আর সেই ভুল হবে না।” তাঁরা আরও জানান, ওই নার্সের ফেরত দেওয়া টাকা সরকারি ট্রেজারির ‘ওভারড্রন রিকভারি ফান্ড’-এ রাখা হয়েছে। কোনও সরকারি কর্মীকে বেশি টাকা দেওয়া হয়ে গেলে সেই টাকা কেটে হামেশাই এই তহবিলে দেওয়া হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.