‘গল্প করছিলি?’ কাজের ছেলের গালে ছেঁকা
পাড়ার মুদির দোকানে বেজায় ভিড়। ঠেলে-ঠুলে দোকানির সামনে পৌঁছতেই মিনিট পনেরো লেগে গিয়েছিল তার। জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরতেই মালকিনের কড়া প্রশ্ন, “এত দেরি যে? গল্প করছিলি নিশ্চয়ই?”
উত্তরের অপেক্ষা কেউ করেনি। বছর আটেকের ছেলেটির গালে এসে পড়েছিল গরম খুন্তির ছেঁকা।
দিন কয়েক আগে ‘বাবুর’ জন্য তাড়াহুড়ো করে এক গ্লাস জল আনতে গিয়ে চলকে পড়েছিল। “জলও ঠিক করে
খুন্তির ছেঁকার দাগ।
ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
আনতে পারিস না..!” গ্লাসটাই ছুড়ে মেরেছিলেন কর্তা। বাঁ চোখ ফুলে ঢোল। ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, চোখের ভিতরে রক্ত জমে গিয়েছে।
‘শাস্তি’র তালিকা হয়তো দীর্ঘতর হত। কিন্তু রবিবার মারধরের পরে ছেলেটিকে জানলায় দাঁড়িয়ে হাপুস নয়নে কাঁদতে দেখে পড়শিরা আর চুপ করে বসে থাকতে পারেননি। সরাসরি বহরমপুরের চাইল্ড হেল্পলাইনে ফোন করে তাঁরা ঘটনাটি জানান। রাতেই বহরমপুরের কৈলাসতলায় স্থানীয় আটাকলের মালিক কিশোর ভকতের বাড়ি যান সংগঠনের কর্মীরা। জোর করেই আট বছরের ‘কাজের লোক’ শিবু সিংহকে সেখান থেকে বের করে এনে পুলিশের হাতে তুলে দেন তাঁরা। মঙ্গলবার বহরমপুরে সরকারি হোম ‘আনন্দ আশ্রম’ চত্বরে দাঁড়িয়ে শিবু উগরে দেয় সব অভিযোগ “সে দিন মুদির দোকান থেকে ফিরতেই আমার গালে খুন্তির ছেঁকা দিল কাকিমা (জয়ন্তী ভকত)। কাকু গ্লাস ছুড়ে মারায় বাঁ চোখে এখনও ভাল দেখি না। ওরা প্রায়ই আমায় মারধর করত। সারা ক্ষণ গায়ে ব্যথা।” ভকতদের পড়শি ইভা খাতুনের দাবি, বছরখানেক আগে পূর্ব মেদিনীপুরের কোনও গ্রাম থেকে শিবুকে আনা হয়। ঘর মোছা, বাসন মাজা, কাপড় কাচা থেকে দোকান-বাজার সব করানো হত তাকে দিয়ে। তাঁর কথায়, “পান থেকে চুন খসলেই বেদম প্রহার করা হত। সারা দিন ওর কান্না শুনতাম। সে দিন জানলায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে ও যখন পোড়া গাল দেখাল, আর থাকতে পারিনি। চাইল্ড হেল্পলাইনে ফোন করে জানাই।” চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ছেলেটির গায়ে আঘাতের চিহ্ন। বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।” বহরমপুর থানার আইসি মোহায়মেনুল হক বলেন, “ওই দম্পতি শুধু শিশুশ্রম নিরোধক আইন ভাঙেননি, বাচ্চাটির শারীরিক নিগ্রহেও অভিযুক্ত। ওঁদের খোঁজ চলেছে।” তবে বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে তাঁরা আপাতত উধাও।
থানা, সরকারি হোম ঘুরে শিবু এখন হাসপাতালে। মাঝে-মধ্যেই কেঁদে ফেলছে। তার এখন একটাই কথাই, “আর কাজ করব না, ওরা সব সময় মারে, খেলতে দেয় না একটুও। আমি বাড়ি যাব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.