‘কথার খেলাপ’, ছাত্রীবাস তৈরি থমকে বহরমপুরে
চুক্তি ছিল, নির্মাণের জন্য রড আর সিমেন্ট জোগাবে পূর্ত দফতর। কিন্তু দরপত্রে সেই কথার খেলাপ করেছে তারা। দায় সেরেছে নাম মাত্র রড-সিমেন্ট দিয়ে। ফলে মাথায় হাত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের। এই নিয়ে দু’পক্ষের টানাপোড়েনে দীর্ঘ দিন বন্ধও ছিল মুর্শিদাবাদ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ছাত্রীবাস তৈরির কাজ।
কিন্তু এখন বর্ষা দরজায়। বাজার থেকে জিনিস কিনেই কাজ এগোতে বাধ্য হচ্ছেন ঠিকাদার। সরকারি দফতরটির বিরুদ্ধে যে শুধু চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ উঠছে, তা-ই নয়। অভিযোগ উঠছে দুর্নীতিরও। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এ ধরনের প্রকল্পের জন্য বাজার থেকে রড, সিমেন্ট ইত্যাদি কেনার প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করতেই ই-টেন্ডার চালু করেছে রাজ্য। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কেনা-কাটা হয়েছে সেই নিয়মের ফাঁক গলে।
ধোঁয়াশা রয়েছে কাজ শেষ করার সময়সীমা নিয়েও। রাজ্য ঠিকাদার সংস্থার সিডিউল কমিটির আহ্বায়ক নিখিল মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “মুর্শিদাবাদের প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ১.০৩ কোটি টাকা। অথচ ৫০ লক্ষ টাকার বেশি কাজ করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ওয়ার্ক অর্ডারে। যার আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।” তিনি জানান, বায়না বাবদ ঠিকাদার সংস্থার কাছ থেকে মোট বরাদ্দের ২% (প্রায় ২.০৬ লক্ষ টাকা) নিয়ে রেখেছে পূর্ত দফতর। ফলে, এক বছরের মধ্যে শুধু ওয়ার্ক অর্ডারের কাজই শেষ করতে হবে, নাকি সম্পূর্ণ প্রকল্পের কাজই সেরে ফেলতে হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
—নিজস্ব চিত্র।
সমস্যার শিকড় কোথায়?
নিখিলবাবুর অভিযোগ, “ওই তিন তলা বাড়িটি তৈরি করতে ৬৫ টন রড এবং ৬০০ টন সিমেন্ট লাগবে। পূর্ত দফতরেরই তা সরবরাহ করার কথা। দরপত্রেও সে কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু কাজ শুরুর সময় মাত্র ৪ টন রড দিয়েই দায় সেরেছে তারা। পরে বহু বার এ নিয়ে চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও রড বা সিমেন্ট দফতরের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। বরং উল্টে বাজার থেকে তা কিনে নিতে লিখিত ভাবে নির্দেশ দিয়েছে তারা। উল্লেখ করে দিয়েছে ব্র্যান্ডের নামও। সমস্যা হল, বাজার থেকে ওই সব জিনিস কিনলে, যে অতিরিক্ত খরচ আমাদের বইতে হবে, তা পুষিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি নয় পূর্ত দফতর।”
প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে গত ১৫ মার্চ থেকে। রড-সিমেন্টের জোগান নিয়ে টানাপোড়েন অব্যাহত ‘ওয়ার্ক অর্ডার’-এর পাঁচ মাস পরেও। দফতরের দাবি, বাজার থেকে তা কিনে নির্মাণের কাজ চালান ঠিকাদারেরা। প্রকল্পের কাজ শেষ করুন এক বছরের মধ্যে। অন্য দিকে নিখিলবাবুর দাবি, চুক্তিমাফিক তা সরবরাহ করুক পূর্ত দফতর। না-হলে বাজার থেকে বেশি দরে জিনিস কিনলে, বাড়তি টাকা কী ভাবে মেটানো হবে, তা অন্তত স্পষ্ট করুক তারা। অভিযোগ, এ নিয়ে পূর্ত দফতর ও শিক্ষা দফতরের সচিব, পূর্ত দফতরের মুখ্য বাস্তুকার-সহ বিভিন্ন আধিকারিকের কাছে চিঠি পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত উত্তর মেলেনি।
এই অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়েইপূর্ত দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাস্তুকার দিলীপ কুণ্ডু বলেন, “গুদামে রড-সিমেন্ট নেই। তাই ঠিকাদার সংস্থাকে তা বাজার থেকে কিনে কাজ করতে বলা হয়েছে।” চুক্তিতে তা লেখা ছিল কেন? দিলীপবাবুর যুক্তি, “সার্কেলের ৭টি জেলার খবর আমার পক্ষে রাখা সম্ভব নয়।”
প্রশ্ন উঠেছে দফতরের রড-সিমেন্ট কেনার পদ্ধতি নিয়েও। যেখানে ৩৫ লক্ষ টাকার রড-সিমেন্ট কেনার প্রয়োজন ছিল, সেখানে মাত্র ৯ টন রড আর ৫০ টন সিমেন্ট কিনতেই দু’টি পৃথক দরপত্র চাওয়া হয়েছে নির্বাহী বাস্তুকারের দফতর থেকে। যাদের অর্থমূল্য ৫ লক্ষ টাকার কম। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, দরপত্র ৫ লক্ষ টাকার উপর হলেই ই-টেন্ডার ডাকা বাধ্যতামূলক। তা এড়াতেই ওই ভাবে দরপত্র চাওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ।
অধীক্ষক বাস্তুকারের অবশ্য দাবি, “ডিজিটাল সিগনেচার কার্ড না-থাকায় ই-টেন্ডার ডাকতে পারেনি নির্বাহী বাস্তুকার।” কিন্তু ই-টেন্ডার নীতি ঘোষণার এক বছর পরেও কার্ড নেই কেন? কেনই বা ২৫ লক্ষ টাকার বেশি দরপত্র ঘোষণার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ই-টেন্ডার ডাকলেন না অধীক্ষক বাস্তুকার? এ সব প্রশ্নের অবশ্য উত্তর মেলেনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.