|
|
|
|
আদিবাসী আবাসিক স্কুলের ছাত্রী নিখোঁজ, বিস্তর নালিশ |
নিজস্ব সংবাদাতা • বেলপাহাড়ি |
জঙ্গলমহলের উন্নয়ন চান মুখ্যমন্ত্রী! অথচ, রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতর পরিচালিত ‘বেলপাহাড়ি রাষ্ট্রীয় আদিবাসী আবাসিক উচ্চ-মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়’টির ব্যাপারে প্রশাসন উদাসীন বলেই অভিযোগ অভিভাবকদের। মেয়েদের এই আবাসিক স্কুল ও হস্টেলটির প্রাচীরের কয়েকটি জায়গা বেশ নিচু, সহজেই টপকানো যায়। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর ও অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের বরাদ্দকৃত প্রায় দু’কোটি টাকায় সম্প্রতি স্কুল ও হস্টেল-ভবন এবং শিক্ষিকা ও কর্মীদের আবাসন সংস্কারের কাজ চলেছে। কিন্তু উপেক্ষিত থেকে গিয়েছে প্রাচীর। প্রাচীর উঁচু করার জন্য কোনও অর্থ বরাদ্দ হয়নি। এরই মধ্যে গত ২ জুলাই হস্টেল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। যার জন্য ওই নিচু প্রাচীরকেই দায়ী করা হচ্ছে। পুলিশেরও সন্দেহ অনুচ্চ প্রাচীর টপকে পালিয়ে গিয়েছে শ্রীদেবী মুর্মু নামে বছর চোদ্দর ওই আবাসিক-ছাত্রী।
শ্রীদেবীর বাড়ি বেলপাহাড়ির শিমুলপাল অঞ্চলের মহুলবনি গ্রামে। স্কুল সূত্রের খবর, এর আগেও পাঁচিল টপকে একাধিক আবাসিক পালিয়ে গেলেও পরে তাদের পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু পাঁচ দিন কেটে গেলেও শ্রীদেবীর খোঁজ মেলেনি। যদিও হস্টেল-পালানোদের বহিষ্কার (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) করাটাই এই স্কুলের রীতি। ‘শিক্ষা বাঁচাও অভিভাবক কমিটি’র সম্পাদক সুবল সোরেনের অভিযোগ, “অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের উদাসীনতার কারণেই আদিবাসী মেয়েদের এখানে চরম অব্যবস্থার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। স্কুলে অবিলম্বে একজন স্থায়ী এবং দক্ষ প্রধান শিক্ষিকা নিয়োগও প্রয়োজন। হস্টেলের সুপার, সহকারী সুপার ও দু’জন মেট্রন থাকলেও কী ভাবে সকলের চোখ এড়িয়ে ছাত্রী নিখোঁজের ঘটনা ঘটল তারও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই। কেন বার বার ছাত্রীরা পালাচ্ছেতারও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।”
স্কুলটির যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করে রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতর। আদিবাসী মেয়েরা এখানে নিখরচায় হস্টেলে থেকে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার সুযোগ পায়। তাদের বইপত্র, পোশাক-সহ সমস্ত খরচই বহন করে রাজ্য সরকার। বর্তমানে আবাসিক ছাত্রীর সংখ্যা ৩৮০ জন। কিন্তু স্কুলটির পরিচালনার ব্যাপারে বহুবিধ সমস্যা রয়েই গিয়েছে। ২০০৬-এর মার্চে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্বে আসেন তপর্ণা বিশ্বাস। কিন্তু স্কুল পরিচালনার ব্যাপারে তপর্ণাদেবীর বিরুদ্ধে নানা গুরুতর অভিযোগ ওঠায় ২০০৭ সালে তাঁর হাত থেকে প্রশাসনিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে বেলপাহাড়ির বিডিওকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়। ‘শিক্ষা বাঁচাও অভিভাবক কমিটি’র আন্দোলনের জেরে গত সেপ্টেম্বরে তপর্ণাদেবীকে মহাকরণে অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের সচিবালয়ে পাঠানো হয়। গত দশ মাস যাবৎ তিনি মহাকরণেই বসছেন। নতুন কোনও প্রধান শিক্ষিকাও নিযুক্ত হননি। স্কুলের সহ-শিক্ষিকা গৌরী মজুমদার বর্তমানে ‘টিচার ইন চার্জ’-এর দায়িত্বে। তিনি বলেন, “প্রাচীর উঁচু করার বিষয়ে কয়েক মাস আগে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। আমি সহ-শিক্ষিকা। নিয়মিত ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি ‘টিচার ইন চার্জ’-এর দায়িত্বও সামলাতে হচ্ছে। শ্রীদেবীর নিখোঁজের বিষয়টি নজরে আসতেই পুলিশকে জানিয়েছি।” হস্টেল সুপার উর্মিলা সিংহ সর্দার বলেন, “গত সোমবার বিকেলে স্কুল থেকে ফেরার পর আবাসিকদের ‘রোল কল’ করার সময়ে শ্রীদেবীর নিখোঁজের বিষয়টি ধরা পড়ে।”
অভিভাবকদের একাংশের বক্তব্য, “স্কুল ও হস্টেলের প্রাচীরটি উঁচু করা প্রয়োজন। হস্টেলে প্রয়োজনীয় স্থায়ী কর্মীও নেই। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে লোক নিয়োগ করে কোনও মতে কাজ চালানো হয়। স্কুল ও হস্টেলের ২৯ জন কর্মীর মধ্যে ১৫টি পদ খালি। রাতে নাইট-গার্ড থাকলেও দিনের বেলা হস্টেল-চত্বরে নজরদারি চালানোর জন্য চৌকিদার পদটিও শূন্য। স্কুলে শিক্ষিকা থাকার কথা ২১ জন। আছেন ১২ জন। স্কুল ও হস্টেল-প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই।” জেলা অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের প্রকল্প আধিকারিক শান্তনু দাস এ-সব অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা অবশ্য বলেন, “প্রাচীরের জন্য স্কুল-কর্তৃপক্ষ আমার কাছে আবেদন করলে অর্থ বরাদ্দ করার চেষ্টা করব।” |
|
|
|
|
|