পূর্ব কলকাতা
চিংড়িহাটা
ভোগান্তির মোড়
যানজট কমাতে তৈরি হয়েছিল একমুখী উড়ালপুল। কিন্তু যানজটের সমস্যা রয়ে গেল সেই তিমিরেই। অফিসটাইমে এখনও জেরবার নিত্যযাত্রী থেকে পথচারীরা। রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থাও তথৈবচ। অভিযোগ, তবুও উদাসীন প্রশাসন।
রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়ে ও ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের সংযোগস্থল চিংড়িহাটা মোড়ের যানজট সমস্যা নিয়ে এমনটাই অভিযোগ। এক দিকে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট, অন্য দিকে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেই সমস্যা বাড়ছে বলে অভিমত পথচারীদের।
এক দিকে সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরের মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়ে। অন্য দিকে ই এম বাইপাস। আবার বেলেঘাটা খাল পার্শ্বস্থ দু’দিকের রাস্তা এবং সল্টলেকের ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলের ধারের রাস্তাও মিশেছে এই সংযোগস্থলে। রাজারহাট-নিউ টাউন ও পাঁচ নম্বর সেক্টরের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পতালুকের দৌলতে আগের থেকে গাড়ির সংখ্যাও বেড়েছে কয়েক গুণ। এ ছাড়া, দমদম বিমানবন্দর থেকে দক্ষিণ কলকাতামুখী গাড়িও রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে। চিংড়িহাটা মোড় হয়েই এই বিপুল সংখ্যক গাড়ি বাইপাসে গিয়ে পড়ে।
সমস্যাটা কোথায়?
সল্টলেকের দিক থেকে আসা গাড়িগুলি যখন ছাড়া হয়, তখন বাইপাসের গাড়ি আটকে পড়ছে বেশ কিছুক্ষণের জন্য। বাড়তি সময় আটকে থাকায় পিছনে পরপর সিগন্যালে আটকে পড়ছে যানবাহন। আবার অন্য দিকে, বাইপাসের গাড়ি যখন ছাড়া হচ্ছে, তখন সল্টলেকের গাড়ি আটকে থাকছে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশিক্ষণ। সময় বেশি লাগার ফলে এ ক্ষেত্রেও একই সমস্যা। অন্য দিকে, চিংড়িহাটা মোড় পার হয়েই আবার তৈরি হয়ে গিয়েছে একটি অলিখিত বাসস্টপ। ফলে সেখানেও ফের দাঁড়িয়ে পড়ছে যানবাহন। যানজটও বাড়ছে যথারীতি। আবার একাধিক লেনে একসঙ্গে গাড়ি ছাড়ায় রাস্তা পার হতে গিয়ে তুমুল নাজেহাল হচ্ছেন পথচারীরা।
আগে সায়েন্স সিটির দিক থেকে চিংড়িহাটার মোড় হয়ে রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়েতে ঢুকতে হত গাড়িগুলিকে। ফলে শুধু এই অভিমুখের গাড়ি পার করাতে গিয়ে অন্যান্য দিকে দীর্ঘক্ষণ ধরে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকত। যানজট জটিল আকার নিয়েছিল। সমস্যা মেটাতে সায়েন্স সিটির দিক থেকে একমুখী উড়ালপুল সল্টলেকের দিকে রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়েতে মেশানো হল। প্রশাসনের ধারণা ছিল, এতেই যানজট নিয়ন্ত্রিত হবে। কিন্তু বাস্তবে সে পরিকল্পনা পুরোপুরি সফল হয়নি। কারণ উড়ালপুল একমুখী হওয়ায় বিভিন্ন অভিমুখের সিগন্যালে আটকে থাকার সমস্যার কোনও সুরাহাও হচ্ছে না। অন্তত পথচারীদের অভিযোগ তেমনই। পাশাপাশি সিগন্যাল ব্যবস্থাও বিচিত্র বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। ফলে রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এক একটি সিগন্যালে দীর্ঘক্ষণ সময় লাগছে।
সমস্যা বাড়ছে বিশেষত সন্ধেবেলায়, অফিস ফেরতা ভিড়ের সময়ে। ওই পথেই রোজ বাড়ি ফেরেন গড়িয়ার বাসিন্দা তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সুপ্রকাশ মাইতি। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ি ফেরার পথে বাইপাসে যেতেই অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। রোজই যানজট। চিংড়িহাটা মোড় থেকে বিভিন্ন দিকের গাড়ি ছাড়তে হচ্ছে ট্রাফিক কর্মীদের। তাঁরা বাইপাসের যানজট কমাতেই ব্যস্ত থাকেন। ফলে এই রাস্তায় সারি দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে।’’ আবার বাইপাসের এক নিত্যযাত্রী, সল্টলেকের বাসিন্দা নিত্যানন্দ সাহা বলেন, ‘‘ওই মোড়ে যানজটে পড়লে কমপক্ষে পনেরো থেকে কুড়ি মিনিট আটকে যেতে হয়। রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়ের গাড়ি পার করতে গিয়েই দফারফা ট্রাফিক কর্মীদের।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যখন শুধু বাইপাসের গাড়ি চলাচল করে, তখন সল্টলেক ও বেলেঘাটা খালপাড়ের রাস্তায় যানজট হয়। সে জট কাটাতে গিয়ে আবার বাইপাসে দীর্ঘক্ষণ গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। তখন রাস্তার এ পার থেকে ও পারে যাওয়াই বিপজ্জনক। বেলেঘাটাবাসী গোপাল মজুমদার বলেন, ‘‘এই মোড়ের কাছাকাছি দোকান-বাজার, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, অফিসে ছয়লাপ। গাড়ির পাশাপাশি পথচারীর সংখ্যাও রোজ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। রাস্তা পারাপার করাই দায় হয়ে উঠেছে।’’
কর্তব্যরত ট্রাফিককর্মীরা অবশ্য নিত্যযাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, গাড়ির সংখ্যা একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ছে। ফলে সে সময়ে সিগন্যালে আগের থেকে তুলনায় কিছুক্ষণ বেশি দাঁড়াতে হচ্ছে। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, পথচারীরা সর্বদাই ব্যস্ত। সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা না করেই পারাপারের চেষ্টা করেন অনেকে। বাসিন্দারা অবশ্য পুলিশের এই বক্তব্য মানতে চাননি। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে যান নিয়ন্ত্রণে বিকল্প ব্যবস্থা করা হোক।
অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে কলকাতার ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “আমরা ওই মোড়ে সমীক্ষা করেছি। অনেকেই রাস্তা পারাপারের নিয়ম মানছেন না। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি সমস্যা আছে। তবে জেব্রা ক্রসিং-সহ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা বিবেচনায় রয়েছে। সেগুলি কার্যকরী করে সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা হবে।” যদিও সমন্বয়ের অভাবের অভিযোগ অস্বীকার করে বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি (ট্রাফিক) ভরতলাল মিনা বলেন, “কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। তবে অফিস টাইমে গাড়ির চাপ খুব বেশি থাকায় সময় বেশি লাগছে।”


ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.