প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের পরে জ্যোতি বসুর জন্মদিন পালন নিয়েও শাসক-বিরোধী শিবিরের ‘সংঘাত’ জারি রইল।
আগামী ৮ জুলাই রবিবার হওয়ায় দু’দিন আগে শুক্রবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে জ্যোতিবাবুর জন্মদিন পালনে এই ‘সংঘাত’ অবশ্য প্রত্যাশিতই ছিল। নির্দিষ্ট দিনের আগে জন্ম-মৃত্যুদিন পালনে ‘অসম্মত’ বিরোধীরা পূর্ব ঘোষণা মতোই জ্যোতিবাবুর জন্মদিন পালন ‘বয়কট’ করেন।
বসু-স্মরণ অনুষ্ঠানে বিরোধীদের অনুপস্থিতিকে সিপিএমের ‘রাজনীতি’ বলে ‘কটাক্ষ’ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “জ্যোতিবাবুকে নিয়েও ওরা (সিপিএম) রাজনীতি করল!” মনীষী বা বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যুদিন ‘সরকারি ছুটির দিনে’ পড়লে তা তার আগে পালন করা ‘অসম্মানজনক’ নয় বলেই মনে করে রাজ্য সরকার। সেই কারণেই গত শুক্রবার বিধানচন্দ্রের এবং এ দিন জ্যোতিবাবুর জন্মদিন পালিত হয়েছে বলে আবার জানান মমতা। সরকারের এই ‘পরম্পরায়’ বিরোধী-বাধার জবাব দিতে গিয়ে মমতা বলেন, “ওরা অবশ্য কোনওদিনই জ্যোতিবাবুর জন্মদিন পালন করত না! প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তী ও তাঁর স্ত্রী রমলা বৌদিই দিনটা পালন করতেন। শেষের দিকে দু’টো বছর আমি নিজে জ্যোতিবাবুর অনুরোধে ওঁর জন্মদিনে গিয়েছি।” |
বিধানসভার লবিতে জ্যোতিবাবুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণের আগে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের (এ দিন তাঁরও জন্মদিন) প্রতিকৃতিতেও পুষ্পার্ঘ প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই বিরোধীদের উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য, “জ্যোতিবাবুর পক্ষের লোকেরাই এই অনুষ্ঠানে আসেননি। এটা অদৃষ্টের পরিহাস। মনীষী ও বিশিষ্ট মানুষদের নিয়ে কীসের রাজনীতি?” যার জবাবে বিরোধীরা ফের জানান, বসুর জন্মদিন রবিবারে হলেও সেই দিনই তাঁরা প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে স্মরণ করতে বিধানসভায় যাবেন। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, “আমরা আগেই বলেছি, মুখ্যমন্ত্রীর সুবিধামতো জন্মদিন হবে না! আমরা ৮ তারিখেই পালন করব। যেদিন জন্মদিন, সেদিনই পালন করা হবে।” সেদিন বিধানসভায় বসুর ছবিতে মালা দেওয়ার মতো ‘পরিস্থিতি’ না-থাকলে ‘অবস্থা অনুযায়ী তাঁরা সিদ্ধান্ত’ নেবেন বলে বাম বিধায়কদের বক্তব্য।
তবে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গত রবিবারের (বিধানচন্দ্রের জন্ম-মৃত্যুদিন, ১ জুলাই) মতো আগামী রবিবার শ্রদ্ধার্ঘ প্রদানের জন্য জ্যোতিবাবুর প্রতিকৃতি লবির নির্দিষ্ট জায়গায় নামানোই থাকবে। তাঁর বক্তব্য, “১ জুলাই রবিবার বিধানচন্দ্রের ছবি লবিতেই রাখা ছিল। কিন্তু কেউ এখানে মাল্যদান করতে আসেননি। এই রবিবার জ্যোতিবাবুর ছবিও রাখা থাকবে।” অধিবেশনের পর তিনি বলেন, “বর্তমান বিধায়ক, বিধানসভা ও লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার ওই দিন শ্রদ্ধা জানাতে আসতে পারেন। কিন্তু কোনও দলের নেতা বা প্রাক্তন বিধায়ক এবং সংবাদমাধ্যম আসতে পারবে না। আমি বিধানসভার আইন অনুসারেই এই নির্দেশ দিয়েছি।” ফলে, রবিবার বসু-স্মরণকে ঘিরে ফের শাসক-বিরোধী ‘সংঘাতে’র সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
স্পিকার জানান, ভবিষ্যতেও রবিবার বা ছুটির দিন এমন কোনও অনুষ্ঠান পড়লে বিধানসভায় তা আগেই পালন করা হবে। গত শুক্রবারের পরে এ দিনও জন্মদিন অনুষ্ঠানে কংগ্রেসের তরফে একমাত্র মুখ্য সচেতক অসিত মাল গিয়েছিলেন। তা নিয়ে ‘উষ্মা’ প্রকাশ করেন কংগ্রেসের বিধায়কদের
একাংশ। কারণ, বামেদের মতোই নির্দিষ্ট দিনের আগে জন্ম-মৃত্যুদিন পালনে তাঁরা সহমত নন।
বিধানসভার দফাওয়াড়ি বাজেট অধিবেশন এ দিনই শেষ হল। বাম ও কংগ্রেস বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করতে আগামী সোমবার রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিধানসভায় আসার কথা। প্রণববাবুর বিধানসভায় আসা প্রসঙ্গে স্পিকার বলেন, “ওঁরা (কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট) আমার অনুমতি চেয়েছিলেন। অনুমতি দিয়েছি। ওঁরা সংবাদমাধ্যমের জন্যও অনুমতি চেয়েছিলেন। সে অনুমতিও দিয়েছি।” বিমানবাবুর ব্যাখ্যা, প্রথমত এটা ‘সৌজন্য’। তা ছাড়া, রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বিধানসভায় প্রচারে আসতে পারেন। স্পিকারের ওই দিন নিজের দফতরে থাকার কথা। তিনি জানান, প্রণববাবুর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের কর্মসূচি এখনও নেই।
জন্ম-মৃত্যুদিন নিয়ে বিতর্কের আবহেই দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে গত ১৭ মে হো চি মিনের জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানে সিপিএম এবং সিপিআই নেতারা হাজির ছিলেন। অথচ হো চি মিনের জন্মদিন ১৯ মে। তা হলে এ রাজ্যে আপত্তি কেন? সূর্যবাবুর জবাব, “ভিয়েতনামের দূতাবাস ওই দিন অনুষ্ঠান করেছিল। অন্য দিন হলের ‘বুকিং’ সম্ভবত তারা পায়নি। অন্য দেশের কনসাল কী করবেন, তা নিয়ে কী করে মন্তব্য করব?” পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, “এটা যুক্তি হলে বুঝতে হবে দুরাত্মার ছলের অভাব হয় না!” |