|
|
|
|
খরা বা বন্যায় টান পড়বে না খাদ্যে: মন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজ্যের এক প্রান্তে বৃষ্টির ব্যাপক ঘাটতি তো অন্য প্রান্ত অতিবৃষ্টির মুখোমুখি। এই অবস্থায় অনাবৃষ্টি কিংবা বন্যা যা-ই হোক না কেন, আপাতত রাজ্যে খাদ্যশস্যের সঙ্কট হবে না বলে বুধবার দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
উত্তর ও দক্ষিণ, বাংলার দু’টি অংশে এ বার দু’ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। অতিবৃষ্টিতে উত্তরবঙ্গের তিন জেলায় এক দফা বন্যা হয়ে গিয়েছে। ফের সেখানে অতিবৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি ৪০%। উত্তরের তিন জেলায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে প্রবল বর্ষণে। আর দক্ষিণবঙ্গে অনাবৃষ্টিতে মার খাচ্ছে চাষ-আবাদ। প্রকৃতির এই বিপরীত আচরণে খরা বা বন্যা-পরিস্থিতি হলেও খাদ্যশস্যের সঙ্কটের আশঙ্কা নেই বলে আশ্বাস দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী।
কী ভাবে এতটা নিশ্চিত হতে পারছেন মন্ত্রী?
জ্যেতিপ্রিয়বাবু বুধবার জানান, রাজ্যে প্রচুর খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। এতটাই যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাঠে সব নষ্ট হয়ে গেলেও আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত সমস্যা হবে না। তাঁর আশা, রাজ্যে এ বারেও ভাল বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি কম হওয়ায় এ-পর্যন্ত চাষের তেমন ক্ষতি হয়নি বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, “আমাদের রাজ্যে অগস্টের শেষ পর্যন্ত চাষ-আবাদের সুযোগ রয়েছে। তাই খাদ্যশস্য উৎপাদনে খুব একটা সমস্যা হবে না।”
রাজ্যে চাল সংগ্রহ এ বার ভাল হচ্ছে এবং সেটাও ভরসার কথা বলে মনে করেন মন্ত্রী। এ বছর চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছিল ২০ লক্ষ মেট্রিক টন। জুন পর্যন্ত সংগ্রহের পরিমাণ ১৭ লক্ষ ২৮ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন। এ ছাড়া আরও এক লক্ষ ৭১ হাজার মেট্রিক টন চাল পড়ে রয়েছে বিভিন্ন কলে। এ দিন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মুখ্যসচিব সমর ঘোষের সঙ্গে বৈঠক করেন খাদ্যমন্ত্রী। সেখানে কনফেড, বেনফেডের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। মন্ত্রী পরে জানান, ধানের সহায়ক মূল্য ছিল কুইন্টাল-প্রতি ১০৮০ টাকা। ২০১২-’১৩ সালের জন্য সহায়ক মূল্য ধার্য হয়েছে ১২৫০ টাকা। আয়লা-দুর্গত অঞ্চল, জঙ্গলমহল এবং পাহাড়ে দু’টাকা কিলোগ্রাম দরে চাল দেওয়ার কারণে যে-ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তা মেটাতে কেন্দ্রের কাছে অতিরিক্ত তিন লক্ষ ৪৭ হাজার ৪৬০ মেট্রিক টন চাল চাওয়া হয়েছে বলে জানান জ্যোতিপ্রিয়বাবু।
খাদ্যমন্ত্রী রাজ্যে খাদ্যশসের উৎপাদন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও বিরোধীরা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বিধানসভার বাইরে বলেন, “এ বার বোরো ধান কত হল, খরিফ শস্য কত হল অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বিধানসভায় এ-সব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন। সম্ভবত উনি তা জানেন না।” অর্থমন্ত্রী সভাকে জানিয়েছেন, বামফ্রন্টের আমলে উৎপাদন কম হয়েছিল। সূর্যবাবু জানান, এই বক্তব্য ঠিক নয়। বাম জমানায় শিল্পের মতো কৃষিতেও উৎপাদনের হার ‘বেশি’ই ছিল।
সূর্যবাবু বলেন, “ওঁরা কৃষি বিপণনের উপরে জোর দিচ্ছেন। কিন্তু এর যে কী সুফল, আমরা তো সেটা দেখতেই পাচ্ছি! নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ক্রমেই বাড়ছে। ওঁরা সব্জির জন্য হিমঘর তৈরির কথা বলছেন। আমরা তার বিরোধী নই। কিন্তু রাজ্যে বর্তমানে যে-সব হিমঘর রয়েছে, তারই তো পূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে না।”
খাদ্য দফতর মহিলা পরিচালিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে রেশন দোকানের ডিলারশিপ দিতে উদ্যোগী হয়েছে। একই সঙ্গে ডিলার-প্রতি সর্বাধিক পাঁচ হাজার গ্রাহক-সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। মহাকরণে এ কথা জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “মহিলারা অনেক সুন্দর ভাবে যে-কোনও কাজ পরিচালনা করতে পারেন। অধিকাংশ সময়েই দেখা যায়, তাঁরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়ান না। তাই আমরা মনে করি, এ বার রেশন দোকানের পরিচালন ভার তাঁদের হাতে দিয়ে দেব।” |
|
|
|
|
|