বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দরজা খুলছে রাজ্য। বাম সরকারের আপত্তিতে এত দিন যে প্রয়াস কোনও ভাবেই দানা বাঁধেনি, পালা বদলের পরে তা-ই এ বার হতে চলেছে। দু’তিন দিনের মধ্যেই বিধানসভায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার বিল আসছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ দিন সন্ধ্যায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সাউথ পয়েন্ট স্কুলের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার অনুমতি দিতে চলেছি আমরা। ২-৩ দিনের মধ্যে এই বিল পাশ হয়ে যাবে।” রাজ্যে প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়বে টেকনো ইন্ডিয়া সংস্থা। এই সংস্থা এখন এ রাজ্যে বেশ কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং স্কুল চালায়। তবে তাদের প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ডিগ্রি পড়ারও ব্যবস্থা থাকবে। এর পাশাপাশি, কোচবিহার ও আসানসোলে সরকারি উদ্যোগে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে বিধানসভার চলতি অধিবেশনে বিল পেশ হচ্ছে বলে এ দিন জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
এর আগে বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু সংস্থা এ রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে চাইলেও এ ব্যাপারে আলিমুদ্দিনের ঘোরতর আপত্তি ছিল। তাই কোনও প্রস্তাবই বাস্তবায়িত হওয়ার সুযোগ হয়নি। ক্ষমতায় এসে নয়া সরকার জানিয়েছিল, শিক্ষার প্রসারের জন্য তারা বেসরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে চায়। বুধবার এ রাজ্যের দু’টি নামী
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের আরও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান। |
রামকৃষ্ণ মিশনের উদ্যোগে গড়া বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয় এ রাজ্যের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হলেও সেটি হয়েছিল কেন্দ্রীয় আইনে। বামফ্রন্ট সরকার এই ব্যাপারে সহযোগিতার মনোভাব দেখায়নি বলে আক্ষেপ রয়েছে কর্তৃপক্ষের মনে। তদানীন্তন রাজ্য সরকারের সহায়তা না পেয়েই শেষ পর্যন্ত তাঁরা দিল্লির দ্বারস্থ হন।
টেকনো ইন্ডিয়া সংস্থা যে বিশ্ববিদ্যালয় গড়বে, সেখানে কারিগরি বিষয়ের পাশাপাশি সাধারণ ডিগ্রি পড়ারও ব্যবস্থা থাকবে বলে জানা গিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নিজে এ দিন এ কথা জানান। এই জায়গাতেই এখনও বামেদের আপত্তি। এ দিন বিগত বামফ্রন্ট সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “একেবারে বিশেষ ধরনের শিক্ষার জন্য বেসরকারি উদ্যোগকে আমরাও স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার জন্য নয়। এ সব যাঁরা করবেন, তাঁদের মনোভাব হবে ব্যবসায়িক।” এই ব্যাপারে রাজ্যের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর পাল্টা মন্তব্য, “প্রথমে আপত্তি জানিয়ে যেমন পরে ওঁদের কম্পিউটারকে স্বাগত জানাতে হয়েছে, এ ক্ষেত্রেও তেমনই সব ওজর-আপত্তি গিলতে হবে এক সময়।”
এ দিন বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম প্রতিষ্ঠা দিবস ও সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মমতা বলেন, “আমরা চাই, মিশন আরও স্কুল কলেজ করুক, আমরা যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করব।” তিনি জানান, রামকৃষ্ণ মিশনের স্কুলগুলিতে মিশন কর্তৃপক্ষ নিজেরাই শিক্ষক নিয়োগ করতে পারবেন। স্কুল সার্ভিস কমিশন মারফত শিক্ষক বাছাই হবে না। তাঁর কথায়, “এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। এখন মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষা।”
রামকৃষ্ণ মিশনের পাশাপাশি সাউথ পয়েন্টকেও শিক্ষাক্ষেত্রে নিজেদের বিস্তৃত করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন তিনি বলেন, “আপনাদের বলছি, ডিগ্রি এবং ম্যানেজমেন্ট কলেজ খুলুন। বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলুন। শুধু বাংলা কেন, গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুন আপনারা।” বাইপাসে ৪.২ একর জমি সাউথ পয়েন্টকে দেওয়া হবে বলে এ দিন ঘোষণা করেন মমতা। তিনি বলেন, “ওই জমিতে কোনও জবরদখলকারী নেই। সামান্য আইনি জটিলতা আছে। সরকার সেটা মিটিয়ে নেবে।” |