দু’পা নেই, তবু অলিম্পিকে দৌড়বেন অস্কার
কেউ তাঁকে ডাকে ‘ব্লেড রানার’ বলে। কেউ তাঁকে বলে ‘পা ছাড়া বিশ্বের দ্রুততম মানুষ’।
সেই ২৫ বছরের যুবকটিই এই মুহূর্তে ক্রীড়া দুনিয়ার এক জীবন্ত প্রহেলিকা। চূড়ান্ত ফিট, শারীরিক ভাবে একশো ভাগ সক্ষম অনেক অ্যাথলিটেরই অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত অপূর্ণ থেকে যায়। আর দু’ পা ছাড়া এক জন ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-এ দৌড়চ্ছেন, এ যেন স্রেফ রূপকথাতেই সম্ভব। বা সেখানেও সম্ভব নয়। সেই সম্ভব-অসম্ভবের সীমারেখা যিনি মুছে দিয়েছেন তাঁর নামই অস্কার লিওনার্দ কার্ল পিস্তোরিয়াস।
দুটো পা-ই অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হয়েছে। কৃত্রিম পা লাগিয়ে চলতে হয়। আর সেই কৃত্রিম পায়ে ভর দিয়েই এখন উড়ে চলেছেন পিস্তোরিয়াস। তাঁর স্বপ্নকে সত্যি করতে। আসন্ন লন্ডন অলিম্পিকে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৪০০ মিটার এবং ৪×৪০০ রিলে টিমে নামার ছাড়পত্র আজই পেয়ে গেলেন তিনি। দু’ পাহীন কোনও অ্যাথলিটকে আজ পর্যন্ত দেখেনি অলিম্পিক।
এ দিনই দক্ষিণ আফ্রিকার রিলে টিমের নাম ঘোষণা করা হয়। এবং সেই দলে সুযোগ পেয়ে গেলেন পিস্তোরিয়াস। রাতে জানানো হয়, তিনি ৪০০ মিটারেও দৌড়বেন। এর পরেই তাঁর টুইট: “আজ আমার জীবনের সব চেয়ে আনন্দের দিন।”
অস্কার পিস্তোরিয়াস
জোহানেসবার্গে জন্ম। জন্মের সময় থেকেই পায়ের হাড় তৈরি হয়নি বলে এক বছর বয়স হওয়ার আগেই দু’টো পা হাঁটুর তলা থেকে বাদ দিয়ে দিতে হয়। কিন্তু সেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও নিভিয়ে দিতে পারেনি তাঁর মধ্যে থাকা আগুনকে। কার্বন ফাইবারের তৈরি কৃত্রিম পা ব্যবহার করে দৌড় শুরু করেন তিনি।
ট্র্যাকে তাঁকে যতটা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছিল, ট্র্যাকের বাইরের চ্যালেঞ্জটা তার চেয়ে কম ছিল না। প্রথমে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্রীড়ায় অংশ নিতেন। ২০০৭ সাল থেকে পুরো মাত্রায় প্রতিযোগিতামূলক ইভেন্টে নেমে পড়েন। কিন্তু আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স সংস্থা প্রাথমিক ভাবে পিস্তোরিয়াসকে ট্র্যাক থেকে সাসপেন্ড করে দিয়েছিল। তাদের যুক্তি ছিল, কার্বন ফাইবারের কৃত্রিম পা ব্যবহার করে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন এই অ্যাথলিট। এর পর পিস্তোরিয়াস কোর্ট অব আরবিট্রেশনে আবেদন করেন এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। ২০০৮ সালে আদালতের রায়ে আবার ট্র্যাকে ফিরে আসেন তিনি।
প্রথমে ইচ্ছা ছিল ৪০০ মিটার দৌড়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন। কিন্তু দিন পাঁচেক আগে ৪০০ মিটারে তিনি অলিম্পিক কোয়ালিফাইং সময়ের থেকে .২২ সেকেন্ড কম করেন। এর পরে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল, পিস্তোরিয়াসের অলিম্পিকে নামার স্বপ্ন কি শেষ পর্যন্ত সত্যি হবে? দক্ষিণ আফ্রিকা কি রিলে দল পাঠাবে অলিম্পিকে? সে সব প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেল আজ।
অলিম্পিকে নামার আগে থেকেই কিন্তু সাড়া ফেলে দিয়েছেন এই প্রতিবন্ধী দৌড়বীর। গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ার দেগুতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ৪০০ মিটার দৌড়ে সেমিফাইনালে উঠেছিলেন তিনি। আর ৪×৪০০ মিটার রিলেতে জিতেছিলেন রুপো। প্যারা অলিম্পিকের তিনটে সোনার কথা না হয় বাদই দেওয়া গেল।
“লন্ডন আমি আসছি”— জানিয়েছেন পিস্তোরিয়াস। তিনিই শুধু এখন অপেক্ষা করে নেই অলিম্পিকের জন্য।
অলিম্পিক এবং তার সঙ্গে গোটা দুনিয়াও অপেক্ষা করে আছে সেই মানুষটিকে দেখার জন্য যাঁর জীবনের মন্ত্র একটাই— ইম্পসিবল ইজ নাথিং।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.