আবু হামজা-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকলেও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে নরম-গরমেই এগোতে চাইছে মনমোহন সরকার।
আজ দিনভর পাকিস্তানের সঙ্গে বিদেশ-সচিব পর্যায়ের বৈঠকে সন্ত্রাস নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা নির্দিষ্ট তথ্য ও নথি দিয়ে তুলে ধরেছে ভারত। নিঃসন্দেহে এ কাজে নয়াদিল্লির হাত শক্ত করেছে আবু হামজার সাম্প্রতিক গ্রেফতারের বিষয়টি। আবার বিদেশ-সচিবদের বৈঠক চলাকালীনই অন্যত্র সাংবাদিক বৈঠকে পাকিস্তানের ‘সরকারি মদতপ্রাপ্ত’ সন্ত্রাসের বিষয়টি যথেষ্ট চড়া স্বরে তুলে ধরেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তাঁর কথায়, পাকিস্তান সরকার যে মুম্বই সন্ত্রাসের পিছনে ছিল তা আজ সুস্পষ্ট।
তবে সন্ত্রাস ছাড়া অন্য বিষয়গুলো নিয়ে পাক বিদেশসচিব জলিল আব্বাস জিলানির সঙ্গে আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে বলেই ইঙ্গিত দিচ্ছে বিদেশ মন্ত্রক। এমনকী আগামী কাল দু’দেশের যৌথ বিবৃতিও প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে পাকিস্তান যে বিষয়টিকে সব সময় প্রাধান্য দিতে চায়, সেই কাশ্মীর নিয়েও কথা হয়েছে বৈঠকে।
গত রাতে তাজিকিস্তান থেকে ফেরার পথে বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ কার্যত প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের শর্ম-অল- শেখ-এ নেওয়া অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, “সন্ত্রাসদমনের প্রশ্নে পাকিস্তানকে আরও অনেক কিছু করতে হবে।...কিন্তু সন্ত্রাসের বিষয়টি দু’দেশের মধ্যে আলোচনার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।” তাঁর কথায়, “আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে কথা বলছি। পাকিস্তান আমাদের প্রতিবেশী। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। আমরা (প্রতিবেশীর সঙ্গে) সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করছি।” কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সন্ত্রাস দমন নিয়ে পাকিস্তানের উপর চাপ দেওয়া এবং দু’দেশের মধ্যে বকেয়া আলোচ্য বিষয়গুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া--- এই দু’টি বিষয়কে পৃথক ভাবে দেখতে চাওয়ার নীতিটিকেই আবার তুলে ধরতে চেয়েছেন কৃষ্ণ। আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং বিদেশ মন্ত্রকের অবস্থানও তাকেই স্পষ্ট করেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম আজ বলেন, “পাকিস্তানের পক্ষে আর অস্বীকার করার উপায় নেই যে মুম্বইয়ে সন্ত্রাসের কন্ট্রোল রুমটি আগে থাকতেই তৈরি হয়েছিল সে দেশে। পাক সরকারের সহায়তা ছাড়া সে দেশে এমন কন্ট্রোল রুম তৈরি করা সম্ভব নয়।” এখানেই না থেমে চিদম্বরম স্বর আরও চড়িয়ে বলেছেন, “আবু জিন্দলকে জেরার পর এ কথা স্পষ্ট যে ‘স্টেট অ্যাক্টর’রাই কাজ করছে।” আজকের বৈঠকে জিন্দলকে জেরার ফলে উঠে আসা তথ্য পাক বিদেশসচিবকে দেওয়া হয়েছে। আবু হামজার পাক-পাসপোর্ট এবং পাকিস্তান থেকে দেওয়া পরিচয়পত্রদু’টির প্রতিলিপিও তুলে দেওয়া হয়েছে পাক নেতৃত্বের কাছে।
আগামী কাল বিদেশ-সচিব পর্যায়ের বৈঠকের দ্বিতীয় দিন। দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো এবং অন্যান্য আস্থাবর্ধক পদক্ষেপগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া নিয়ে কথা এখনও বাকি। পাশাপাশি আগামী কাল সন্ধ্যায় বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণর সঙ্গেও বৈঠক করবেন জলিল আব্বাস জিলানি। গোটা আলোচনার প্রক্রিয়া ভেস্তে যাক এমনটা আদৌ চাইছে না বিদেশ মন্ত্রক। তাই আজ এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা। আকবরউদ্দিন শুধু বলেছেন, “আজ দু’টি পর্যায়ে শান্তি ও নিরাপত্তা এবং জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী কাল আলোচ্যসূচির বাকি বিষয়গুলি নিয়ে কথা হবে। তার পর যৌথ বিবৃতি দেওয়া হবে।” |