রাষ্ট্রপতি পদে তৃণমূল প্রণব মুখোপাধ্যায়কেই সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেবে বলে কংগ্রেস এখনও ‘আশাবাদী’। আজ বিধানসভায় কংগ্রেস পরিষদীয় দলের সঙ্গে বৈঠকের পরে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ বলেন, “ভোটের এখনও ১৫ দিন বাকি। তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্বের কথা চলছে। কেন্দ্র ও রাজ্যে তৃণমূল আমাদের শরিক। ফলে তৃণমূল আমাদেরই সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমরা আশাবাদী।”
বস্তুত, আজই সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। রাজ্যের আর্থিক সঙ্কট এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কেন্দ্রের টানাপোড়েনের পরিপ্রেক্ষিতে এই বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ। বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে রাজ্যপাল মুখ না খুললেও পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ইউপিএ-র প্রতি তৃণমূল নেত্রীর মনোভাব নিয়েই সনিয়ার সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। |
মনমোহন-সনিয়া চান, মমতা ইউপিএ-তে থাকুন, রাষ্ট্রপতি পদে ‘ইউপিএ-র প্রার্থী’-কে সমর্থন করুন। সেই ‘বার্তা’ পৌঁছে দিতেই আগামিকাল কলকাতায় এসে মমতার সঙ্গে বৈঠক করতে চাইছেন কপিল সিব্বল। কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্ম নিয়ে কাল কলকাতায় মন্ত্রিগোষ্ঠীর সাংবাদিক সম্মেলন হওয়ার কথা। সিব্বলের পাশাপাশি আসছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। এ ছাড়া এনসিপি ও অন্য শরিক দলের নেতারাও জরুরি ভিত্তিতে আসতে পারেন প্রণববাবুকে সমর্থনের আর্জি নিয়ে। আসতে পারেন ডিএমকে নেতা টি আর বালুও। তবে সবটাই নির্ভর করছে মুখ্যমন্ত্রীর সময় মিলবে কি না, তার উপরে। ঠিক এই সময় দশ জনপথে সনিয়া-নারায়ণন বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সিঙ্গুর বিল নিয়ে সাম্প্রতিক মতভেদ বাদ দিলে মমতার সঙ্গে রাজ্যপালের সম্পর্ক খারাপ নয়। আবার সনিয়ার সঙ্গেও নারায়ণনের সম্পর্ক খুবই ভাল। ফলে রাজ্যপালের মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন সনিয়া।
বস্তুত, শাকিল আজ কলকাতায় বলেছেন, মমতা এবং প্রণববাবু পরস্পরকে ‘খুব ভাল চেনেন, জানেন’। এর প্রভাব ‘ইতিবাচক’ হবে বলেই তাঁর অভিমত। প্রণববাবু ইতিমধ্যেই মমতাকে ‘ছোট বোন’ বলে উল্লেখ করে তাঁকে সমর্থনের অনুরোধ করেছেন। শাকিল অবশ্য এ দিন সব দলের কাছেই প্রণববাবুকে সমর্থনের আবেদন জানান। ১৯ জুলাই রাষ্ট্রপতি ভোটে দলের কোনও বিধায়ক যাতে অনুপস্থিত না-থাকেন, সে জন্য আগের দিন বিকেলের মধ্যে প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে বিধায়কদের হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেন শাকিল। ৪২ বিধায়কের একটি ভোটও যাতে নষ্ট না-হয়, সে ব্যাপারে পরিষদীয় দলকে ‘সতর্ক’ থাকতে বলেন তিনি।
তবে শাকিল আসায় ‘উজ্জীবিত’ কংগ্রেস বিধায়করা এ দিন বিধানসভায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘সরব’ হন। মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসকে ‘দুর্বল’ করতে ওই জেলার নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করছে বলে উল্লেখ-পর্বে অভিযোগ তোলেন দলের বিধায়করা। গত সাত মাসে তাঁদের ৮ কর্মী খুন হন বলেও দাবি মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস বিধায়কদের। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেন তাঁরা। পরে মহাকরণে গিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়ের কাছেও মৌখিক ভাবে একই অভিযোগ জানায় মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস বিধায়কদের একটি দল। কংগ্রেস কর্মীদের উপর তৃণমূল নাগাড়ে হামলা চালাচ্ছে এবং কংগ্রেস-প্রভাবিত উত্তর দিনাজপুরকে রাজ্য সরকার বঞ্চিত করছে বলে শাকিলকেও অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। |