আবেদন-নিবেদনে সাড়া না মেলায় পাঁচ দশক আগে সরকারের অধিগ্রহণ করা কৃষিজমির পুনর্দখল নিতে আজ মারমুখী হয়ে উঠলেন রাঁচির নাগরি অঞ্চলের উপজাতি গোষ্ঠীর মানুষেরা। ওই জমি ঘিরে নির্মীয়মাণ পাঁচিলের একাংশ আজ গুঁড়িয়ে দিলেন তাঁরা। বাধা দিতে গিয়ে মারমুখী জনতার আক্রমণে জখম হয়েছেন এক এসপি-সহ জনা পাঁচেক পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই মহিলা-সহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। তবে হতচকিত পুলিশ-প্রশাসনের অনেকেই এই আন্দোলনে নন্দীগ্রামের ‘ছায়া’ দেখছেন।
রাঁচির পাশের এই নাগরি এলাকার উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলির সঙ্গে আজ আশপাশের গ্রামের মানুষও জোট বাঁধে। ওই জমিতে ইতিমধ্যেই তিনটি শিক্ষা সংস্থাকে সরকার জমি দিয়েছে। তাদের পাঁচিল অনেকটা উঠেও গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ শুরু হয় গোলমাল। সরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের উপস্থিতিতেই মারমুখী গ্রামবাসীরা পাঁচিল ভাঙতে শুরু করে। খবর পেয়ে বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন রাঁচির পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) এ ভি মিনজ। দেওয়ালের এক দিকে পুলিশ বাহিনী, অন্য দিকে গ্রামবাসীরা। উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয়ে যায় ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি। চলে বাঁশ ও লাঠির লড়াই। মুহূর্তের মধ্যে এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। গ্রামের পুরুষদের সঙ্গে আদিবাসী মহিলারাও বাঁশ উঁচিয়ে পুলিশকে তাড়া করেন। কাঁকে থানা থেকে জানানো হয়েছে, গ্রামবাসীদের ছোড়া ইটের ঘায়ে পুলিশ সুপার মিনজ্-সহ অন্তত ৫ জন পুলিশ জখম হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। |
১৯৫৭-৫৮ সালে তৎকালীন বিহার সরকার নাগরির এই জমিটি অধিগ্রহণ করেছিল কৃষিবীজ খামার করার জন্য। কিন্তু তখন থেকেই গ্রামবাসীরা এই অধিগ্রহণ মেনে নেননি। জমিহারা ১৫৮টি পরিবারের মধ্যে ১২৭ জন জমি-মালিক সরকারি ক্ষতিপূরণ নিতে অস্বীকার করেন। একর পিছু ৮০০ টাকার সেই ক্ষতিপূরণ এখনও সরকারি ট্রেজারিতেই জমা আছে। অনেক দিন ধরেই ধিকিধিকি জ্বলছে অসন্তোষের আগুন। আদিবাসীদের জমির অধিকার সুনিশ্চিত করার দাবিতে ব্রিটিশ আমলে তৈরি ‘ছোটনাগপুর টেনেন্সি অ্যাক্ট’ (সিএনটি) কার্যকর করার দাবি নিয়ে গত বছরখানেক ধরে আন্দোলন চলছে। সিএনটি নিয়ে ঝাড়খণ্ডের আন্দোলনের পাশাপাশি সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামও নাগরির ক্ষোভকে আরও উস্কে দিয়েছে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
ইতিমধ্যেই নাগরিতে গড়ে উঠেছে ‘জমিন বাঁচাও সংঘর্ষ সমিতি’। অধিগৃহীত জমিতে তাঁবু ফেলে কৃষকরা অনেক দিন ধর্না দিচ্ছেন। মে মাসে, প্রচণ্ড গরমে লু লেগে মৃত্যু হয়েছে তিন জন মহিলার। নাগরির আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছে কাঁকে ব্লকের আরও ৩৪টি গ্রাম। আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করতে শুক্রবার ৩৫টি গ্রামের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসছেন। আন্দোলনে সক্রিয় প্রতিরোধ যে আরও বাড়তে পারে, তার ইঙ্গিত আজ দিয়ে রেখেছেন আন্দোলনের নেতা নির্দল বিধায়ক বন্ধু তিরকে। |