শিল্প মহলের আস্থা ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় এ বার অনিল অম্বানীর সঙ্গে বৈঠক করলেন যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া। দু’দিন আগেই তিনি অনিলের দাদা, মুকেশ অম্বানীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব হাতে নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ শিল্পপতিদের আস্থা ফিরে পাওয়ার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন, আজকের বৈঠককে তার অঙ্গ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
অর্থনীতির হাল ফেরাতে মনমোহন সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন পরিকাঠামো ক্ষেত্রে। সেই দিক দিয়েও অনিলের সঙ্গে মন্টেকের বৈঠকটি তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ বিদ্যুৎ ও অন্যান্য পরিকাঠামো ক্ষেত্রে অনিল অম্বানী গোষ্ঠীর বিপুল লগ্নি রয়েছে। অন্ধ্রের কৃষ্ণপত্তনম, মধ্যপ্রদেশের সাসন এবং ঝাড়খণ্ডের তিলাইয়ায় তিনটি বিরাট বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির বরাত পেয়েছে অনিল অম্বানীর মালিকানাধীন রিলায়্যান্স পাওয়ার। এর জন্য কয়লার জোগান নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে অনিলের আলাপ-আলোচনা চলছে। সম্প্রতি সাসনের বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য একটি কয়লাখনি বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু কয়লাখনি বণ্টন নিয়ে সিএজি-র খসড়া রিপোর্টে বেসরকারি সংস্থাকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও কয়লা মন্ত্রক অবশ্য এই অভিযোগে আমল দিচ্ছে না। কিন্তু গোটা বিষয়টি নিয়ে শিল্প মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
একই ভাবে টেলিকম ক্ষেত্রেও অনিল অম্বানীর ব্যবসা রয়েছে। টু-জি স্পেকট্রাম ফের নিলাম করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। অতি-বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং স্পেকট্রাম বণ্টন, এই দু’টি বিষয়েই যে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি হয়েছে, তার দু’টিতেই সদস্য হিসেবে রয়েছেন মন্টেক। স্বাভাবিক ভাবেই আজকের আলোচনায় এই বিষয়গুলি উঠে এসেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এর আগে মুকেশ অম্বানীর সমস্যাগুলি নিয়েও তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন মন্টেক। কৃষ্ণা-গোদাবরী অববাহিকা থেকে গ্যাস উত্তোলন কমে যাওয়ায় রিলায়্যান্স শিল্পগোষ্ঠীর উপরে একশো কোটি ডলার জরিমানা বসানো হয়েছে। মুকেশ যুক্তি দিয়েছেন, ভৌগোলিক কারণে গ্যাসের উৎপাদন কমেছে। এর জন্য তাঁর সংস্থা দায়ী নয়। চুক্তিতেও কোথাও জরিমানার প্রসঙ্গ নেই। অন্য দিকে ওই গ্যাসের দাম তিন গুণ বাড়াতে চাইছেন মুকেশ। এই বিষয়টি গ্যাসের দাম নির্ধারণে তৈরি মন্ত্রিগোষ্ঠী খতিয়ে দেখবে। মুকেশের সমস্যার পাশাপাশি প্রাকৃতিক তেল ও গ্যাস উত্তোলনের সমস্যা সমাধান করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য তাঁর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সি রঙ্গরাজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বক্তব্য, সংসদে বিরোধী দলগুলি বার বার অভিযোগ তুলেছে যে দেশীয় শিল্পপতিরা এখন ভারতের থেকে বিদেশে বিনিয়োগ করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই দেশের প্রথম সারির শিল্পসংস্থাগুলির আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি। মন্টেক ও রঙ্গরাজনকে সেই দায়িত্বই দিয়েছেন মনমোহন সিংহ। |