আয়ের উৎস খুঁজতে এ বছর বাজেটে (২০১২-’১৩) প্রবেশ কর চালু করেছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। আর সেই পথেই চলতি আর্থিক বছরের প্রথম দু’মাসে (এপ্রিল-মে) রাজ্যের কোষাগারে আদায় হয়েছে ১০৫ কোটি টাকার কিছু বেশি।
বুধবার, বিধানসভায় এই তথ্য জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, এপ্রিল মাসে প্রবেশ করের আদায় কিছুটা কম হয়েছে। মোট আদায়ের বেশির ভাগটাই এসেছে মে মাসে। অমিতবাবু এ দিন দাবি করেছেন, চলতি অর্থবর্ষের ওই দুই মাসে মোট কর আদায় ৩০.৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রবেশ কর আদায়ের ক্ষেত্রে নানা বেনিয়ম ও দুর্নীতি ধরা পড়ছিল বলে বছর খানেক আগে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার ওই ব্যবস্থাটি তুলে দেয়। নতুন সরকার দায়িত্বে আসার পর জানিয়ে দেয়, মানুষের বোঝা বাড়তে পারে এমন কোনও ক্ষেত্রে তারা কর বাড়াবে না। তাই অর্থ দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অমিতবাবুর চ্যালেঞ্জ ছিল, আয়ের নতুন উৎস খোঁজা। এ বছর বাজেটে তাই তিনি দামি ঘড়ি, মোবাইল, গাড়ির উপরে ভ্যাট বাড়ানোর পাশাপাশি রাজ্যে ফের প্রবেশ কর চালু করেন। এবং শুধু প্রবেশ কর থেকেই কমপক্ষে ৮০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয় বাজেটে। ওই অঙ্ক এ বছর ১০০০ কোটি ছাপিয়ে যাবে বলে অর্থ দফতরের কর্তারা মনে করছেন।
অর্থ দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, প্রতি মাসে গড়ে ৯০-১০০ কোটি টাকা আদায় হলেও বছর শেষে কোষাগারে কমপক্ষে ১১০০ কোটি টাকা প্রবেশ কর থেকে আসা উচিত। কারণ, আর্থিক বছরের শেষের দিকে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) কর আদায় স্বাভাবিক নিয়মেই অনেকটাই বেড়ে যায়। আর ওই পরিমাণ টাকা আদায় হলে সব মিলিয়ে রাজস্ব আদায় এ বছর অনেকটাই বাড়বে বলে ধরেই নেওয়া যায়।
অর্থমন্ত্রী এ দিন বিরোধীদের বলেন, “ই-ট্যাক্স ব্যবস্থার মাধ্যমে কর আদায়ের ক্ষেত্রে যে সংস্কার আনা হয়েছে তার ফলই পাওয়া যাচ্ছে। কর আদায়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এসেছে। মানুষ খুশি মনে সরকারকে কর দিচ্ছে।” বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এ দিন অর্থমন্ত্রী যখন এই কথা বলেছেন, তখন তাঁকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং তৃপ্ত বলে মনে হয়েছে। কারণ এ বছর বাজেটে তিনি রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি ২৫ শতাংশ হারে হবে বলে ঘোষণা করেছেন। সেখানে প্রথম দু’মাসে বৃদ্ধির হার গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি।
এ দিন বিধানসভায় রাজ্যের ব্যয়মঞ্জুরি বিল পাস হয়। তার আগে বিরোধী বামফ্রন্ট বিধায়করা নানা প্রশ্ন তুলে অর্থমন্ত্রীর কাছে জবাব চান। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি থেকে শুরু করে উন্নয়নের রূপরেখা নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলেন। তবে অর্থ দফতরের আয়-ব্যয়ের অঙ্ক, ঋণের হিসাব এবং বিভিন্ন দফতরে বাজেট বরাদ্দ নিয়ে সূর্যবাবুর অধিকাংশ প্রশ্ন অমিতবাবু এ দিন এড়িয়েই গিয়েছেন। |