‘ঈশ্বর কণার’ আবিষ্কারেও উচ্ছ্বাস নেই ঈশ্বর মিল লেনে!
উত্তর কলকাতায় এই সঙ্কীর্ণ গলির পাঁচ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। বুধবার সার্ন-এর ঘোষণার পরে যাঁকে কুর্নিশ করছে গোটা ফিজিক্স দুনিয়া। কিন্তু সত্যেন্দ্রনাথের পুত্র রথীন্দ্রনাথের মতে, ওই কণার সঙ্গে বাঙালি বিজ্ঞানীর সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। এর যাবতীয় প্রশংসাই প্রাপ্য ব্রিটেনের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ পিটার হিগসের।
পুরনো ধাঁচের লালরঙা দোতলা বাড়ি। দরজার বাইরে শ্বেতপাথরের ফলকে ‘জাতীয় অধ্যাপক’ সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নাম লেখা। স্কটিশচার্চ কলেজিয়েট স্কুলের কাছের ওই বাড়িতে অনেক ডাকাডাকির পর সাড়া দিলেন রথীন্দ্রনাথ। বহু অনুনয়ে মিনিট কয়েক কথা বললেন পক্ককেশ প্রৌঢ়। তাঁর কথায়, “১৯২৪ সালে বোসন কণার অস্তিত্বের কথা সকলে জানতে পারেন। বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে বোসন কণা। কিন্তু ‘হিগস-বোসন’ কণার সঙ্গে ওঁর (সত্যেন্দ্রনাথ বসু) গবেষণার কোনও সম্পর্ক নেই। সেটি সম্পূর্ণ ভাবে হিগসেরই আবিষ্কার।”
রথীন্দ্রনাথের মতে, পরমাণুর চেয়েও ক্ষুদ্র ‘বোসন’ জাতের কণা ‘বোস-আইনস্টাইন সংখ্যাতত্ত্ব’ মেনে চলে। সেই ‘সংখ্যাতত্ত্ব’ আবিষ্কারের জন্যই সত্যেন্দ্রনাথের পদবি অনুসারে ওই জাতের কণার নাম ‘বোসন’। ‘ফোটন’, ‘গ্লুওন’ আর ‘হিগস-বোসন’ কণার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ‘বোসন’-এর মতোই। এ হেন ‘হিগস-বোসন’ কণা আবিষ্কারের যাবতীয় কৃতিত্ব হিগসেই দিতে চান রথীন্দ্রনাথ। যদিও কৃতিত্বের ভাগ নেওয়ার এই অনীহাকে বিনয় হিসেবেই দেখছেন বিজ্ঞানী মহলের একটা বড় অংশ। তাঁদের মতে, পদার্থবিদ্যার এই শাখায় গবেষণার দ্বার খুলেছিলেন সত্যেন্দ্রনাথই। ফলে সার্ন-এর আবিষ্কারের পর প্রশংসার একটা বড় অংশ তাঁরও প্রাপ্য।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিজের গবেষণা নিয়ে কখনও কি কথা বলতেন বোসন কণার প্রণেতা? রথীন্দ্রনাথবাবুর জবাব, “উনি পদার্থবিজ্ঞানের উচ্চমার্গের গবেষক ছিলেন। এই পরিবারের কেউ-ই বিজ্ঞানের সেই উচ্চতায় পৌঁছননি। ওঁর ছেলেরা প্রযুক্তিবিদ্যার ছাত্র। ফলে পরিবারের কারও সঙ্গেই নিজের গবেষণার বিষয় নিয়ে আলোচনার অবকাশ ছিল না তাঁর। তা বোঝার ক্ষমতাও অন্যদের ছিল না। গবেষণার কথা তাই বাড়িতে কখনও বলতেন না তিনি।” |