লাল আলোর ধাঁধা কাটাতে ঘড়ির মুখবদল
ভাবা হয়েছিল, সুবিধা হবে। বাস্তবে দেখা গেল, অসুবিধেই হচ্ছে বেশি। ফলে স্টেশনে স্টেশনে বসানো উজ্জ্বল আলোর ডিজিট্যাল ঘড়িগুলোর স্থান পরিবর্তন করা ছাড়া উপায় দেখছেন না রেল-কর্তৃপক্ষ।
যাত্রীদের সুবিধার্থে শিয়ালদহ ডিভিশনের বিভিন্ন স্টেশনে ঝোলানো হয়েছিল ওই ডিজিট্যাল ঘড়ি। কিন্তু তার উজ্জ্বল লাল রং ট্রেনচালকদের কাছে রীতিমতো ‘বিপজ্জনক’ হয়ে উঠেছে। প্ল্যাটফর্মের এক প্রান্তের সিগন্যালের সঙ্গে ঘড়ির লাল রংকে মাঝেমধ্যে গুলিয়ে ফেলছেন তাঁরা। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এ বার তাই ঘড়ির মুখ ঘোরাতে শুরু করেছে পূর্ব রেল, যাতে তা আর চালকের চোখে না-পড়ে।
রাত হোক বা দিন, ঘড়ির অতি উজ্জ্বল লাল সংখ্যাগুলো অনেক দূর থেকে দেখা যায়। এতে যাত্রীদের সময় মিলাতে সুবিধা হলেও বিপাকে পড়েছেন ট্রেনচালকেরা। কারণ ঘড়িগুলো ঝোলানো রয়েছে সিগন্যালের সমান্তরালে, অর্থাৎ চালকের মুখোমুখি। তাঁদের বক্তব্য: সিগন্যালের সঙ্গে ঘড়ির রং মিলে যাওয়ায় হামেশা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢোকার সময়ে ঘড়ির চোখ ধাঁধানো লাল আলোয় ‘হোম সিগন্যাল’-এর লাল, সবুজ বা হলুদ আলো চোখে পড়ছে না। ওই ঘড়ি সরানোর দাবিতে সম্প্রতি ইস্টার্ন রেলওয়েমেন্স কংগ্রেসের তরফে শিয়ালদহের ডিআরএম-কে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। অসুবিধের কথা জানিয়েছেন লোকালের গার্ডরাও। তাঁদের অভিযোগ, প্ল্যাটফর্মের মাঝামাঝি জায়গায় যে বিশেষ সিগন্যাল গার্ডদের জন্য রাখা হয় (গার্ডস রিপিটার সিগন্যাল), সেটাও ঘড়ির চড়া আলোর নীচে হারিয়ে যাচ্ছে।
চোখ ধাঁধানো লাল ঘড়ি। বারাসত স্টেশনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
সিগন্যালের সঙ্গে ঘড়ির আলো কি আদৌ গুলিয়ে যেতে পারে?
রেল-সূত্রের তথ্য: দু’টি আলোই এলইডি প্রযুক্তির, যার ঔজ্জ্বল্য সাধারণ আলোর অনেক গুণ বেশি। এতেই হয়েছে বিপদ। কী রকম?
রেল-সুরক্ষা নিয়ে দীর্ঘ দিন গবেষণারত ভেল-এর আর্গোনমিস্ট অনিন্দ্য গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, “সিগন্যালের তুলনায় ঘড়ির আয়তন অনেক বড়। উপরন্তু ঘড়িটাই প্ল্যাটফর্মমুখী ট্রেনের চালকের বেশি কাছে থাকছে, সিগন্যাল দূরে। ফলে ঘড়িই চালকের আগে নজরে পড়ছে। এতে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে, সিগন্যাল গুলিয়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কাও উড়িয়ে
দেওয়া যায় না।” রেল-কর্তারা জানিয়েছেন, রেলের নিয়ম অনুযায়ী সিগন্যালের সমান্তরালে অন্য কোনও উজ্জ্বল আলো রাখা যাবে না। এ ক্ষেত্রে নিয়মটি মানা হচ্ছে না।
পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার কথাও তুলে ধরছেন চালকদের একাংশ, যাঁদের বক্তব্য, “আমাদের কাছে লাল আলো মানেই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সতর্কবার্তা। অথচ দিনের পর দিন সেই লাল আলোকেই (ঘড়ির) উপেক্ষা করে যেতে হচ্ছে। এটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেলে বিপদ আছে। আমরাও তো মানুষ!” অনিন্দ্যবাবুও বলছেন, “একই দৃষ্টিক্ষেত্রে প্রায় একই উচ্চতায় দু’টো আলো থাকলে চোখ প্রথমে বড়টিকে দেখবে। এটাই স্বাভাবিক। অথচ সঙ্গে সঙ্গে সেটিকে উপেক্ষাও করতে হবে! এতে দৃষ্টিবিভ্রমের সঙ্গে মানসিক বিভ্রমেরও সুদূর সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।”
তাই ইস্টার্ন রেলওয়েমেন্স কংগ্রেসের ৪ নম্বর শাখার সম্পাদক গৌতম বসুর দাবি, “ঘড়িগুলো অবিলম্বে সরাতে হবে। দুর্ঘটনা ঘটে গেলে দায়িত্ব নেবে কে?’’ রেলের প্রাক্তন কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুরের মন্তব্য, “দুর্ঘটনা ঘটলে চালককে প্রাথমিক ভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। চালকেরাই যখন আপত্তি করছেন, তখন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।” রেল-কর্তৃপক্ষের কী অভিমত?
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “কোনও চালক সরকারি ভাবে অভিযোগ করেননি। স্টেশন পরিদর্শনকালে ব্যাপারটা শিয়ালদহের ডিআরএমের চোখে পড়েছিল, তিনিই ঘড়ির জায়গা বদলানোর নির্দেশ দিয়েছেন।” রেল-কর্তারা জানাচ্ছেন, ঘড়িগুলো এ বার লাইনের সমান্তরালে বসানো হচ্ছে। ফলে তা চালকের দৃষ্টিগোচর হবে না, যদিও যাত্রীরা দেখতে পাবেন। ইতিমধ্যে ব্যারাকপুর প্ল্যাটফর্মে এ ভাবেই ঘড়িগুলো লাগানো হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.