নেতৃত্বে প্রাক্তন মাওবাদী
বিহারে সাম্রাজ্য গড়ছে ‘পরশুরাম সেনা’
লছুট মাওবাদী নেতার নেতৃত্বে বিহারে আরও একটি জঙ্গি সংগঠন মাথা চাড়া দিল। প্রাক্তন মাওবাদী জোনাল কম্যান্ডার সন্তোষ ঝা’য়ের নেতৃত্বে গঠিত এই ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’-র মূল কাজই হল তোলা আদায়, আর দাবি মতো না টাকা না দিলেই চলছে অপহরণ, খুন। লোকমুখে এই পিপলস লিবারেশন আর্মি-র নাম হয়েছে পরশুরাম সেনা। মূলত উচ্চবর্ণের লোকজন নিয়েই গঠিত পরশুরাম সেনা-র সন্ধান হঠাৎ করেই সামনে আসায় বিস্মিত পুলিশ।
বিহারে ‘ব্যক্তিগত সেনাবাহিনী’-র ইতিহাস দীর্ঘদিনের। রণবীর সেনার কাজ ছিল ভূস্বামীদের রক্ষা করা। যুদ্ধ ছিল গরিব-কৃষকদের বিরুদ্ধে। আর প্রতিপক্ষ ছিল তখনকার নকশালরা। লালু প্রসাদ যাদব মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বিহারে ‘পাণ্ডব সেনা’ গড়ে উঠেছিল। চিত্তরঞ্জন শর্মা নামে পাণ্ডব সেনার প্রধান এখন নীতীশ কুমারের জে ডি ইউ দলের বিধায়ক।
‘পরশুরাম সেনা’-র অবশ্য তেমন কোনও নির্দিষ্ট ‘কর্মসূচি’ নেই। এদের মূল কাজ, নেপাল সীমান্ত সংলগ্ন মুজফফ্রপুর, সীতামঢ়ী, শেওহর এবং বৈশালী জেলার বড় ঠিকাদার, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা। ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’-র নামে রীতিমতো ছাপানো প্যাডে চিঠি লিখে তোলা আদায় করে পরশুরাম সেনা। পরশুরাম সেনার তথ্যটি সম্প্রতি পুলিশের নজরে এসেছে সন্তোষ ঝা’য়ের ঘনিষ্ঠ ঋষি ঝা’য়ের গ্রেফতারের পরেই। মুজফফ্পুরের পুলিশ ঋষি-সহ চারজনকে গ্রেফতার করার পরে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় একটি দামি গাড়ি এবং ২২ লক্ষ টাকা। পুলিশের দাবি, ঋষিকে জেরা করেই এই তথ্য জানা গিয়েছে। উচ্চবর্ণের যুবকদের নিয়েই সন্তোষ গড়ে তুলেছে তার সংগঠন। নিম্ন বর্ণের কোনও মানুষ তার সংগঠনে স্থান পায় না।
জেরায় ঋষি জানিয়েছে, তাদের নেতা সন্তোষ নেপাল থেকে এই সংগঠনের কাজ তদারকি করেন। সীতামঢ়ীর ঋষি ছিল সাধারণ ঘরের ছেলে। তাকে রোজগারের লোভ দেখিয়ে দলে টানে সন্তোষ। ক্রমেই সে হয়ে ওঠে ওই নেতার ঘনিষ্ঠ। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ২২ লক্ষ টাকার উৎস সম্পর্কে পুলিশ জানতে পেরেছে, মুজফফর্পুর-সীতামঢ়ী এলাকার এক বড় ঠিকাদারের কাছ থেকে তোলা বাবদ এই টাকা আদায় করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের তালিকায় প্রায় এক হাজারের উপর ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারের নাম আছে।
সন্তোষ ঝা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জেল থেকে জামিনে ছাড়া পায়। গত বছরের নভেম্বরে প্রাক্তন মাওবাদী নেতা গৌরীশঙ্কর ঝা’কে খুন করে শিউহর জেলার বাসিন্দা সন্তোষ। সন্তোষ এই গৌরীশঙ্করের নেতৃত্বেই মাওবাদী সংগঠনে কাজ করত। সেই সময় সন্তোষ ছিল পূর্ব বিহারের জোনাল কম্যন্ডার। নিজেদের মধ্যে ঝামেলার কারণে ২০০৯ সালে সে দল ছেড়ে বেরিয়ে আসে। তখন থেকেই খুন এবং তোলা আদায়ের অভ্যাস তার মধ্যে গড়ে ওঠে বলে মুজফফ্রপুরের সিনিয়র পুলিশ সুপার রাজেশ কুমার জানান। সীতামঢ়ীর পুলিশ সুপার বিবেক কুমার বলেন, “সন্তোষের বিরুদ্ধে খুন, ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ, তোলা আদায় এবং অপহরণের মতো একাধিক মামলা আছে।” শিউহরে ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরণে ছয় পুলিশ কর্মীর হত্যার ঘটনার পিছনেও ছিল সন্তোষেরই হাত। সীতামঢ়ী জেলায় জেলা পরিষদের সদস্য নওল কিশোর রাইকেও খুন করে এই সন্তোষ। পুলিশকে ঋষি জানিয়েছে, সন্তোষ তার সাম্রাজ্য আরও বাড়াতে গোপালগঞ্জ, সিওয়ান এবং পূর্ব চম্পারণে ‘পরশুরাম সেনা’ গড়ে তুলতে চাইছে। কয়েক দিন আগে গোপালগঞ্জের এক বড় ঠিকাদারকে তার বাহিনী আক্রমণ করে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাঁচী থেকে পুলিশ সন্তোষকে গ্রেফতার করে। সীতামঢ়ী এবং শিউহর জেলার পুলিশের গাফিলতিতে এক মাস পরেই সে জামিন পেয়ে যায়। তারপরেই সে নেপালে চলে যায়। সেখান থেকেই সে চালিয়ে যাচ্ছে তার কোটি কোটি টাকার তোলা আদায়ের ব্যবসা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.