ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ
হাসপাতালে বিস্ফোরণ ঘিরে বিভ্রান্তি, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
উটডোর শুরু হতে ঘণ্টাখানেক বাকি। তখনও তেমন ভিড় হয়নি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সবে করিডরে ঝাঁট দেওয়া শুরু হয়েছে। আচমকাই বিস্ফোরণ।
পুতুল মল্লিক
তার কিছু পরেই রামমোহন ব্লকের একতলায় মেডিসিন আউটডোরে মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছিলেন সাফাইকর্মী অমিত রাউত। শরীরের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে রক্ত বার হচ্ছিল। একটু দূরে বসে কাঁপছিলেন আর এক সাফাইকর্মী পুতুল মল্লিক। তাঁরও গলা দিয়ে রক্ত বার হচ্ছিল। শনিবার সকাল সওয়া আটটা নাগাদ ন্যাশন্যাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই বিস্ফোরণকে ঘিরে সন্দেহ, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, বিক্ষোভ চলল দিনভর। বিস্ফোরণের জেরে সকালে নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে শুরু হল আউটডোর।
আহত দুই সাফাইকর্মীই জানিয়েছেন, রামমোহন ব্লকের একতলায় মেডিসিন আউটডোরের স্টোরের সামনে অন্য জঞ্জালের মধ্যেই নীল রঙের একটি প্লাস্টিকের প্যাকেট পড়ে ছিল। কালো টেপ দিয়ে তার মুখ বন্ধ করা ছিল। অমিত রাউতের কথায়, “ঝাঁট দিতে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে প্যাকেটটা দেওয়ালে গিয়ে লাগল। সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণ।” আবার পুতুলদেবীর বক্তব্য, “আমি আউটডোরগুলো খুলব বলে চাবি নিয়ে আসছিলাম। মেডিসিন আউটডোরের সামনে পৌঁছতেই জোরে শব্দ হল, সঙ্গে খানিকটা ধোঁয়া। আমার গলায় কী একটা এসে লাগল। পড়ে গেলাম।” অমিতবাবু আপাতত হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে ভর্তি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর আঘাত গুরুতর নয়, আজ, রবিবারই ছেড়ে দেওয়া হবে। আর পুতুলদেবীকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
আহত দুই সাফাইকর্মী। হাসপাতালে অমিত রাউত।
কিন্তু বিস্ফোরণের কারণ বোমা নাকি কোনও রাসায়নিক, শুক্রবার রাত পর্যন্ত সেই রহস্যের সমাধান হয়নি। সুপার পার্থ প্রধান ও অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী প্রথমে দাবি করেন, কোনও রাসায়নিক পদার্থ থেকেই বিস্ফোরণ হয়েছে। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যেরও বক্তব্য ছিল, “বিস্ফোরণ হয়েছে কোনও রাসায়নিক থেকেই। তবে চূড়ান্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি।” হাসপাতাল কর্মীদের একাংশ কর্তৃপক্ষের এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযোগ করেন, ঘটনাটি লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আসলে বোমা বিস্ফোরণই হয়েছে। তাঁরা সাংবাদিকদের কিছু স্প্লিন্টার-এর টুকরোও দেখান। হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষায় কর্তৃপক্ষ উদাসীন বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।
পরে হাসপাতালের পরিস্থিতি দেখতে এসে তৃণমূল নেতারাও দাবি জানাতে থাকেন, বোমা বিস্ফোরণই হয়েছে। তাঁদের বক্তব্যের সঙ্গে মিল রয়েছে হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রধান জ্যোতির্ময় দত্তের বক্তব্যেরও। তিনি পরে বলেন, “যে যাই বলুক, আমি নিশ্চিত যে বোমা বিস্ফোরণই হয়েছে। আহতের চোখ থেকে বোমায় ব্যবহৃত সালফারের গুঁড়ো পেয়েছি। তাঁর শরীরের একাধিক জায়গায় স্প্লিন্টার-এর আঘাত রয়েছে।” এই জটিলতা দেখেই স্বাস্থ্য দফতর এ দিন বিকেলে পাঁচ সদস্যের এক কমিটিকে বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্তের জন্য নিযুক্ত করেছে। যদিও সেই কমিটির প্রধান হিসেবে জ্যোর্তিময়বাবুকেই নিয়োগ করার ফলে, কমিটির রিপোর্ট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে হাসপাতালেরই একাংশ।
তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা অবশ্য জানিয়েছেন, সত্যিই বোমা বিস্ফোরণ হলে নিকটবর্তী দরজার কাচ ভেঙে পড়ত। কিন্তু তা হয়নি। ঘটনাস্থলের কাছেই থাকা একটি সাইকেলও অক্ষত রয়েছে। আগামী কাল, সোমবার কমিটি রিপোর্ট দেবে।
স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ অবশ্য বিস্ফোরণ ও তার উপকরণ নিয়ে এই বিভ্রান্তির মধ্যে অন্য ‘গল্প’-এর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। সেটা কী? মাসখানেক আগেই ওই হাসপাতালের স্টোরে জিনিসপত্র কেনা নিয়ে কয়েক লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে। তা নিয়ে তদন্তও শুরু হয়েছে। হাসপাতালের অনেক উচ্চপদস্থ কর্তা এতে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের অনেকেই বলছেন, হতে পারে সেই তদন্ত থেকে নজর সরাতে এই বিস্ফোরণ! যদিও চন্দ্রিমাদেবী বলেছেন, “এই ভাবনার কোনও যৌক্তিকতা নেই।”
রাসায়নিক না বোমাবিস্ফোরণের কারণ কী সেই তর্কের মধ্যেই নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্নটি ভাবাচ্ছে স্বাস্থ্যকর্তাদের। প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি হাসপাতালগুলিতে যেখানে প্রতি দিন অসংখ্য
মানুষ আসেন, সেখানকার নিরাপত্তা তা হলে কতটুকু? স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এ ব্যাপারে বলেন, “অনেক চিকিৎসক এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নির্দেশ সত্ত্বেও ইউনিফর্ম পরছেন না। এই ভাবে কে কোথায় ঢুকে পড়ছে বোঝা মুশকিল।” স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসেরও বক্তব্য, “রাজ্যের কোনও হাসপাতালে এর আগে এমন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি তাই চিন্তার। আউটডোর শুরু হওয়ার পর বিস্ফোরণ হলে আরও খারাপ হত। তাই নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই ভাবা হচ্ছে।”

নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.