বুকের লাল রক্ত বেশি প্রিয়? না, চোখের সামনের নীল আকাশ?
কোনও রংকেই আসলে ফেলে দেওয়া যায় না!
সের্গেই বুবকার শহর কিয়েভে আজ অনন্ত ছুঁতে নামছে লাল রঙের স্পেন, নীল রঙের ইতালি। অদৃশ্য পোলভল্টার হয়ে উঠতে চলেছেন বাইশ ফুটবলার। দেশবাসীর যাবতীয় আতঙ্ক, হতাশা মুছে ফেলতে ফুটবল মাঠেই ‘বুবকা’ হওয়ার চেষ্টা।
দুটো দেশই ডুবে চরম আর্থিক মন্দায়। কয়েক হাজার কোটি ইউরোর ঋণ। শুক্রবারই ইউরো-র দাবিতে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ বৈঠকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী। স্পেনের মারিয়ানো রাজয় ও ইতালির মারিও মন্তি ঋণ পাওয়ার দাবিতে যুদ্ধ জিতেছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলের বিরুদ্ধে।
রবিবার রাতে ইউরো ফাইনালের আগে দু’দেশের কিপার-অধিনায়ক বুফোঁ-কাসিয়াস যখন হাত মেলাবেন, তখন সেই দৃশ্য যেন মিলিয়ে দেবে মারিও এবং মারিয়ানোর জোটকেও।
ইউরো ফাইনাল দু’দেশেরই এক ‘শেষ সীমান্ত’ পেরোনোর লড়াই। ক্লিন্সমানের মতো অনেকে বলছেন, ইউরো জিতলে এই স্পেন শতাব্দীর সেরা দল হয়ে উঠবে। চার বছরের মধ্যে দু’টো ইউরো, একটা বিশ্বকাপ জেতার নজির কোনও দেশের নেই। ফ্রাঙ্কো বারেসির স্বপ্নে বাসা বেঁধেছে ইতিহাসের প্রত্যাবর্তন। ১৯৮২-র রোসি, ২০০৬-র কানাভারো-রা দেখিয়েছেন, ঘরোয়া ফুটবলে কেলেঙ্কারি হলেই বড় টুর্নামেন্টে লক্ষ ভোল্টের আলো জ্বলে ওঠে ইতালিতে। এ বারও জুভেন্তাসের নাম জড়িয়ে বেটিং কেলেঙ্কারি সেখানে।
জুভেন্তাস বলতেই মনে পড়ল ইতালি ইউরোয় অনুসরণ করছে জুভেন্তাস মডেল। পির্লো, বুফোঁর মতো আট জন জুভেন্তাস ফুটবলার ইতালিতে। স্পেনে যেমন আট জন বার্সেলোনার। ক্লাবের গন্ধ নিয়েও হাজির ইউরো ফাইনাল।
পাসিং ফুটবলের দুটো বিপরীত স্টাইলের যুদ্ধ দেখতেও তৈরি থাকুন। ইতালির পিৎজা, স্পেনের পায়েলা-র যেমন আলাদা স্বাদ, ফাইনালিস্টদের ফুটবলেও তেমন অন্য গন্ধ। স্পেনের আক্রমণাত্মক তিকিতাকার পাসিং বিরক্তিকর হয়ে ওঠায় অনেকে বিদ্রুপ করে বলছেন ‘তিকিতাকানেচিও’। আর রক্ষণাত্মক কাতানেচিও থেকে সরে ধীরে ধীরে লেখচিত্রের শীর্ষে ওঠা আক্রমণাত্মক ইতালির নতুন স্টাইলের নাম ‘তিকিকাতা’।
ফাইনালের প্রধান কৌতূহল, ইতিহাসের ত্রিমুকুট পেতে স্পেন আসল তিকিতাকা ফুটবলে ফিরে যায় কি না। দুই অসম্ভব ভদ্র কোচ দেল বস্কি এবং প্রান্দেলি। দুই বিশ্বসেরা কিপার বুঁফো এবং কাসিয়াস। দুই তাক লাগানো মিডফিল্ডার পির্লো এবং ইনিয়েস্তা। এই তিন জুটির মাথা, হাত ও পায়েই লুকিয়ে ম্যাচের ভাগ্য।
মুণ্ডহীন ছক, ‘ফলস নাইন’ এই ইউরোয় ফুটবলকে এই দু’টি অমর উপহার স্পেনের। ফাইনালে মারিও বালোতেলির পাথর খোদাই চেহারার কথা ভেবে দেল বস্কি কি মুণ্ডু লাগাবেন নিজের দলে? ওই গান তাঁকে ক্রমাগত তাড়া করছে ইউরোয়, ‘মুণ্ডু গেলে খাবটা কী? মুণ্ডু ছাড়া বাঁচব নাকি?’ তাঁর সমস্যা, তোরেস, নেগ্রেদো, লোরেন্তের মতো ‘মুণ্ডু’রা ভরসা জাগাতে ব্যর্থ। স্প্যানিশ অভিনেত্রী পেনেলোপে ক্রুজ এখনও হলিউডে যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়ে চলেছেন, অথচ ফের্নান্দো তোরেসের সেই আকর্ষণ নেই ইউরো ফুটবলে!
সব আকর্ষণ কেড়ে নিয়েছেন ইতালির দুই ‘ব্যাড বয়’ ফরোয়ার্ড। বালোতেলির সঙ্গী আন্তনিও কাসানোও এক চটকদার চরিত্র। মাঠে তাঁর বদমেজাজ দেখে ‘স্কিলফুল’ কাসানোর নাম ফাবিও কাপেলো দিয়েছিলেন ‘কাসানাতা’। মানে ঝামেলা। নভেম্বরে হৃদ্যন্ত্রে অস্ত্রোপচার করিয়েই কাসানো এপ্রিলে নেমে যান এসি মিলানের হয়ে। এত জেদি ফরোয়ার্ড দেল বস্কির কোথায়?
বার্সেলোনা-রিয়ালের হাত ধরে আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবলে ইতালির জায়গা কেড়ে নিয়েছে স্পেন। অনাদরে পড়ে ইতালির সিরি এ লিগ। বিদেশি তারকারা চলে যাচ্ছেন অন্য দেশে। যেন ক্রমেই তা চের্নোবিল বিস্ফোরণের শহর। চের্নোবিল বিস্ফোরণ হয়েছিল কিয়েভ থেকে দেড়শো কিলোমিটার দূরে। এখনও সেই পরিত্যক্ত প্রাইপিয়াত শহরের স্কুলের ক্লাসরুমে পড়ে আছে ছাত্রছাত্রীদের খাতা, পার্কে ফুলের মালা, বাড়িতে খাবারের টুকরো। পঞ্চাশ হাজার লোকের জায়গা খাঁ খাঁ। কোনও দিন আর জেগে উঠবে না।
ইতালি বা স্পেন বরং নতুন জেগে উঠবে আজ। মাদ্রিদের বিখ্যাত প্লাজা মেয়র, মিলানের ঐতিহাসিক পিয়াজ্জা দেল দুয়োমো ভরে যাবে হাজার হাজার মানুষে। চাকরি নেই, ব্যাঙ্কে ইউরো কমে আসছে, ভবিষ্যৎ বিপন্ন। তবু ইউরো-চিন্তা ভুলে সব চিন্তার নাম আপাতত পির্লো, ইনিয়েস্তা, কাসিয়াস, বুফোঁ। আজ যাঁরা নতুন জীবনের স্পর্শ দেবেন কোনও এক দেশে। লাল কিংবা নীল।
|
পির্লো বনাম ইনিয়েস্তা |
|
১ <গোল> ০
৪৫৯ <মোট পাস> ৩৮৭
৩৫৪ <সফল পাস> ২৯৩
৫ <গোলে শট> ১৩
২ <গোলের ফাইনাল পাস> ১
১৫ বার <ফাউলের> ১৩ বারশিকার |
|
|
|
লড়াই যখন সোনালি গ্লাভসের |
|
রক্ষ্মণাত্মক মাঝমাঠে টক্কর |
জিয়ানলুইজি বুফোঁ |
ইকের কাসিয়াস |
দানিয়েল দে রোসি |
জাবি আলন্সো |
৩টি <গোল হজম করেছেন>১টি
০.৬ <ম্যাচ পিছু গোল>০.২
২ ম্যাচে <গোল হজম করেননি>৪ ম্যাচে
১৮টি <শট বাঁচিয়েছেন>১১টি শট
৩.৬ <ম্যাচ পিছু সেভ>২.২
১৬০ মিনিট <দু’টি গোল হজম করার
মিনিটমধ্যে গড় ব্যবধান >৪৮০ |
০<গোল>২
৩৫৬<মোট পাস>৪৯৯
২৭৭<সফল পাস>৪১৬
৩<গোলে শট>৪
০<গোলের ফাইনাল পাস>০
৪ বার<ফাউল করেছেন>৮ বার |
|
|
গোলের ইজারা যাঁদের উপর |
মারিও বালোতেলি
গোল-৩
গোলে শট-১৪
বাইরে শট-১০
অফসাইড-০
ফাউল করেছেন- ১৪ বার
ফাউলের শিকার-১৪ বার |
স্পেনের কে?
সেটাই কোচের তুরুপের তাস |
|