ছত্তীসগঢ়ে নিহতদের পরিচয় নিয়ে তুঙ্গে বিতর্ক
বিজাপুরের বাসাগুরা এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ১৯ জনের মৃত্যুর প্রতিবাদে আগামী ৫ জুলাই দণ্ডকারণ্য এলাকায় ২৪ ঘণ্টা বন্ধের ডাক দিল মাওবাদীরা। তাদের অভিযোগ, মাওবাদী দমনের নামে নিরীহ গ্রামবাসীদের হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। স্বামী অগ্নিবেশ, অধ্যাপক জি হরগোপাল, বি ডি
শর্মার মতো মানবাধিকার ও সমাজকর্মীদেরও অভিযোগ, সংঘর্ষের নামে ঠান্ডা মাথায় গ্রামবাসীদের খুন করা হয়েছে। তাঁরা এই ঘটনার উচ্চপর্যায়ের বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন। যদিও ছত্তীসগঢ়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশ-প্রশাসন এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে মাওবাদী প্রভাবিত বিজাপুরের সিলগার জঙ্গলে মাওবাদীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলির লড়াই হয়। পুলিশের দাবি, জগরগুন্ডা ও বাসাগুরার কাছে প্রথমে আক্রান্ত হয় সিআরপিএফ এবং রাজ্য পুলিশের দল। তারা পাল্টা গুলি চালায় এবং নিহতদের প্রত্যেকেই মাওবাদী। কিন্তু রাজ্যে বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, এটি ভুয়ো সংঘর্ষ। শনিবার একই সুর তুলেছেন স্বামী অগ্নিবেশ, জি হরগোপাল এবং বি ডি শর্মার মতো মধ্যস্থতাকারীও। তাঁরা প্রত্যেকেই এর আগে মাওবাদীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়ায় সামিল হয়েছেন। গত এপ্রিলে ছত্তীসগঢ়ের সুকমা-র জেলাশাসক অ্যালেক্স পল মেননকে অপহরণ-কাণ্ডে মাওবাদীরা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে হরগোপাল এবং বি ডি শর্মার নাম ঘোষণা করেছিল।
শনিবার সন্ধ্যায় মাওবাদীদের দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটির তরফে গুরসা উসেন্ডি জানান, বৃহস্পতিবারের ঘটনার প্রতিবাদে ৫ জুলাই তাঁরা দণ্ডকারণ্য বন্ধের ডাক দিয়েছেন। এ দিন স্বামী অগ্নিবেশ আমদাবাদ থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে বলেন, “ছত্তীসগঢ়ে গৃহযুদ্ধ চলছে। সংঘর্ষে নিরীহ গ্রামবাসীদের মৃত্যু হয়নি। আমার কাছে যা খবর, তাতে বোঝা যাচ্ছে, এটা ‘কোল্যাটেরাল ড্যামেজ’ নয়। ঠান্ডা মাথায় আদিবাসীদের নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে।” একই বক্তব্য হরগোপালেরও। নয়াদিল্লি থেকে টেলিফোনে আনন্দবাজারের কাছে বি ডি শর্মার প্রতিক্রিয়া, “শান্তি প্রক্রিয়ার যে চেষ্টা একটু একটু করে শুরু হচ্ছিল, এই ঘটনায় তার উপরে ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়বে।”
বিজাপুর থেকে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার দূরে আদিবাসী গ্রাম সারকেগুরা, কোটাগুরা, রাজপেটা। মাওবাদীদের ডাকা সভায় বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা হাজির হন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সারকেগুরা গ্রামে একটি জমি-বিতর্কের মীমাংসার জন্য ওই সভা ডাকা হয়। সভা চলাকালীনই সিআরপিএফ এবং পুলিশ সেখানে পৌঁছে যায়। দু’পক্ষের গুলি বিনিময়ের মধ্যে পড়ে যান গ্রামবাসীরা। বেশ কিছু মাওবাদী নেতা অন্ধকারে জঙ্গলে গা ঢাকা দেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ জানিয়েছেন।
গুলিতে আহতদের দু’জনকে আনা হয় জগদলপুরের মহারানি হাসপাতালে। সেখানেই মেল সার্জিক্যাল-২ ওয়ার্ডে পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ভর্তি ১২ বছরের কিশোর ছোট্টু হাক্কা। তাঁকে যারা দেখতে গিয়েছেন, তাঁদেরকে ছোট্টু জানিয়েছে, মাওবাদীরা তাকেও সভায় নিয়ে যায়। সেখানে গুলি বিনিময়ের সময়েই সে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে পড়ে। তাকে জেরা করে তার ডান পায়ের হাঁটুর কাছে গুলি করা হয়। পরে নিরাপত্তা বাহিনীই তাকে হাসপাতালে পাঠায়। ওই হাসপাতালেরই ফিমেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ড-৩-এ ভর্তি ৫৮ বছরের মহিলা ইরপা চিনকা। তাঁরও ডান পায়ের উরুতে গুলি। আর একটি গুলি তার ডান পায়েই লেগে ছিটকে যায়। তাঁর দাবি, মাওবাদীদের সভায় প্রায় দু’শো লোক হাজির ছিল। তারা নিরস্ত্র অবস্থাতেই ছিল।
যদিও ভুয়ো সংঘর্ষের অভিযোগ অস্বীকার করে ছত্তীসগঢ়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নানকীরাম কাঁওয়ার বলেন, “যাঁরা মাওবাদীদের সঙ্গে থাকেন, তাঁদের মাওবাদী বলেই ধরা হবে।” স্বামী অগ্নিবেশ এবং হরগোপালের অভিযোগ প্রসঙ্গে মাওবাদী দমন অভিযানের ভারপ্রাপ্ত রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি রাম নিবাস আনন্দবাজারকে বললেন, “ওঁরা অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। ওঁদের বক্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। শুধু আমার বিনীত প্রশ্ন, গভীর রাতে ঘন জঙ্গলে সংঘর্ষের সময় কী করে বোঝা গেল যে, যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁরা নিরীহ গ্রামবাসী? এত তাড়াতাড়ি এই তথ্য কী করে সামনে আসছে? সংঘর্ষে আহত জওয়ানদের নিয়ে কেউ কোনও কথা বলছেন না কেন?” আর টেলিফোনে ছত্তীসগঢ়ের আইজি মুকেশ গুপ্তের মন্তব্য, “প্রতি বার সংঘর্ষের সময় তো এই একটা কথাই শোনা যায় ভুয়ো! এ নিয়ে কী-ই বা বলার আছে?”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.