কলকাতার পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো রেলের কাজ ধাপে ধাপে এগোতে থাকলেও তার যাত্রাপথের পরিবর্তন হতে পারে। শনিবার মহাকরণে মুখ্যসচিবের ঘরে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যাত্রাপথ (রুট) পরিবর্তনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে সমীক্ষা করা হবে। এই কাজ করবে ‘রাইটস’। চার মাসের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দিতে বলা হবে।
প্রায় চার বছর আগে ২০০৮ সালে কলকাতার এই নতুন মেট্রোর কাজ শুরু হয়েছিল। এখন, মাঝপথে যাত্রাপথের পরিবর্তন হলে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে সরকারি মহলেই দু’রকম মত উঠে এসেছে। যৌথ ভাবে নতুন মেট্রো করছে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক এবং রাজ্যের পরিবহণ দফতর। এর রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছে কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন। সংস্থার চেয়ারম্যান এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব সুধীর কৃষ্ণ এ দিন কলকাতায় স্বীকার করেন, “মেট্রোর পূর্ব নির্ধারিত রুটের অদলবদল হলে কাজ শেষ হতে সময় লাগবে। খরচাও বাড়বে।” এ দিন মুখ্যসচিবের ডাকা বৈঠকে তিনিও হাজির ছিলেন। |
খাতায়-কলমে মেট্রোর কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০১৬ সালে। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি যে এখন আর তাঁদের হাতে নেই, তা স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন নগরোন্নয়ন সচিব। “সরকারি কমিটির সমীক্ষার কাজ শেষ না-হলে এ বিষয়টি বলা যাবে না।”—মন্তব্য সুধীর কৃষ্ণের। প্রশাসনের একটি অংশের মতে, পূর্ব-পশ্চিম মেট্রোকে ঘিরে বৌবাজার এলাকার কিছু বাড়ি ও দোকানপাট সরানো নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত। মূলত সেই কারণেই যাত্রাপথ পরিবর্তন করার প্রশ্নটি সামনে এসেছে। যদিও উচ্ছেদ হওয়া পরিবার ও দোকানপাটের পুনর্বাসনের জন্য একটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। অন্য অংশের মতে, প্রকল্পটিকে লাভজনক করা এবং বেশি সংখ্যক যাত্রী পাওয়ার আশায় যাত্রাপথ পরিবর্তন করা প্রয়োজন। যাত্রাপথ পরিবর্তন হলে প্রকল্পের ঋণদাতা সংস্থা ‘জাইকা’ পুনরায় ঋণ দিতে রাজি হবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
পূর্ব-পশ্চিম মেট্রোর মোট ১৪.৫৮ কিলোমিটার পথে ১২টি স্টেশন হওয়ার কথা। এর মধ্যে রয়েছে সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টর, করুণাময়ী, সেন্ট্রাল পার্ক, সিটি সেন্টার, বেঙ্গল কেমিক্যাল, ফুলবাগান, সল্টলেক স্টেডিয়াম, শিয়ালদহ, সেন্ট্রাল, মহাকরণ, হাওড়া এবং হাওড়া ময়দান। এতে পরিবর্তন করে নতুন যে যাত্রাপথের কথা ভাবা হয়েছে, তাতে স্টেশনের সংখ্যা একটি বাড়িয়ে ১৩টি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সব মিলিয়ে পথ বাড়বে প্রায় দেড় কিলোমিটার। খরচ বাড়বে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত নতুন যাত্রাপথে, শিয়ালদহের পর সেন্ট্রাল স্টেশনের পরিবর্তে নতুন স্টেশনটি হবে হিন্দ সিনেমা হলের সামনে। এর পর এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে ধর্মতলার ট্রামডিপোর কাছে মেট্রো যাবে পরবর্তী স্টেশন, ধর্মতলায়। সেখান থেকে বেরিয়ে রাজভবনের পশ্চিম দিকের রাস্তা ধরে মেট্রো সোজা চলে যাবে লালদিঘির ধারে মহাকরণ স্টেশনে। সেখান থেকে ব্রেবোর্ন রোডে গিয়ে ফের বর্তমান যাত্রাপথের সঙ্গে মিলবে। |
পূর্ব-পশ্চিম রুটের মেট্রোর অন্দরসজ্জা। |
রুট-বিতর্কের মধ্যেই নতুন মেট্রোর কামরা কেনার বিষটি চূড়ান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন নগরোন্নয়ন সচিব। স্পেনের কাফ সংস্থার কাছ থেকে ৮৪টি ট্রেনের জন্য কামরা কিনবেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। লাল-নীল বর্ডার দেওয়া রুপোলি রঙের ঝকঝকে কামরাগুলির নকশাও মোটামুটি ঠিক হয়ে গিয়েছে। মেলকো বা জাপানের মিৎসুবিসি ইলেকট্রিক কোম্পানি ওই ট্রেনের কামরায় প্রযুক্তিগত সাহায্য করছে। কাফ ও মেলকোর মধ্যে ‘কনসর্টিয়াম’ গড়ে তুলে কাজটা সারা হবে।
সুধীর কৃষ্ণ বলেন, “এক-একটি কামরার জন্য খরচ হচ্ছে সাত কোটি সাত লক্ষ টাকা। কলকাতা-দিল্লি ছাড়াও বেঙ্গালুরু, পুণে, চেন্নাইয়ের মতো শহরে মেট্রো-পরিষেবা চালু হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন শহরের মেট্রোর কামরার মধ্যে একটা মিলও থাকবে।” কাফের আন্তর্জাতিক ডিরেক্টর (এশিয়া) জুয়ান জোলে গার্সিয়া বলেন, “ভবিষ্যতে ভারতে কামরা তৈরির কারখানা গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।” তবে কোথায় তা এখনই বলতে চাননি গার্সিয়া।
নতুন মেট্রোর সেক্টর ফাইভ থেকে ২৫ মিনিটে হাওড়া ময়দানে যাওয়ার কথা। এক-একটি ট্রেনে বসে বা দাঁড়িয়ে ২০০০ জন যেতে পারবেন। সারা দিনে আড়াই থেকে পাঁচ মিনিট অন্তর ট্রেন চলবে বলে মেট্রো কতৃর্র্পক্ষ জানিয়েছেন।
|