জলবন্দি আড়াই লক্ষ, দু’টি দেহ উদ্ধার উত্তরে
জল নামলেও ছড়াচ্ছে পেটের রোগ
বৃষ্টি থামায় স্বস্তি ফিরছে কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে। শুক্রবার পাহাড় ও সমতলে বৃষ্টিপাত না-হওয়ায় কোচবিহার ও ডুয়ার্সের প্রতিটি নদীর জলস্তর নামতে শুরু করেছে। তার জেরে তুফানগঞ্জেও বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি হচ্ছে। বন্যাকবলিত বিভিন্ন গ্রাম থেকে জল সরতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে মহকুমার বিভিন্ন ত্রাণ শিবির থেকে দুর্গতরা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। এ দিন বালাভূত গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এক শিশুর দেহ উদ্ধার হয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শিশুর নাম সাবিনা খাতুন (৮)। বৃহস্পতিবার রাতে সে নিখোঁজ হয়। এদিন জল কমায় সাবিনার দেহ বাড়ির পাশ থেকেই উদ্ধার হয়। ওই ঘটনা নিয়ে বন্যায় তুফানগঞ্জ মহকুমায় দু’জনের মৃত্যু হল। মঙ্গলবার গাবুয়ারডাঙার বাসিন্দা সাবিত্রী দাস (৪২) নামের এক মহিলা বুড়া রায়ডাক নদীর জলে ভেসে যান। বুধবার তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। কোচবিহার লাগোয়া অসমের ধুবুরি জেলায় অবশ্য এদিনও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে বৃষ্টিপাত না-হলেও ব্রহ্মপুত্র নদীর জল এখনও বিপদসীমার উপর দিয়েই বইছে। এদিন ধুবুরিতে জলে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদী লাগোয়া এলাকার দক্ষিণ শালমারা থানার শিবরে আলগা গ্রামে নদীতে পড়ে জাবজালুর রহমান (১২) নামে এক বালকের মৃত্যু হয়। বাড়ির পাশেই জলে ডুবে মারা যায় জাবেদ আলি (২) নামে অপর এক শিশু। জেলার প্রায় ২ হাজার গ্রাম এখনও জলমগ্ন। ধুবুরি শহরের ১৪টি ওয়ার্ড জলপ্লাবিত হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ এখনও বন্যা কবলিত।
কোচবিহারে বন্যা পরিস্থিতি। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “জেলার প্রতিটি নদীর জল কমতে শুরু করেছে। তুফানগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। প্রচুর মানুষ ত্রাণ শিবির থেকে বাড়িতে ফিরেছেন।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের ৩৯টি ত্রাণ শিবির থেকে এ দিন দুর্গতরা বাড়ি ফিরে যান। প্রশাসনের কর্তাদের অনুমান, ব্লকের বাকি ১৭টি ত্রাণ শিবির থেকে শনিবারের মধ্যে দুর্গতরা বাড়িতে ফিরতে পারবেন। তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের ১১টি ত্রাণ শিবির থেকেও এ দিন অনেকে বাড়ি ফিরেছেন। ভুটান পাহাড় ও ডুয়ার্সে প্রবল বৃষ্টির জেরে মঙ্গলবার থেকে কোচবিহার ও ডুয়ার্সে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ডুয়ার্স ও কোচবিহারের প্রতিটি নদীতে জল বাড়তে শুরু করে। তোর্সা, জলঢাকা, তিস্তা, কালজানি, রায়ডাক-সহ বিভিন্ন নদীতে বিপদসঙ্কেত জারি করা হয়। বৃহস্পতিবারও গদাধরের জলে প্লাবিত হত তুফানগঞ্জের বেশ কিছু গ্রাম। তবে এদিন গদাধর অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। হাসিমারায় তোর্সা নদীতে অবশ্য এখনও হলুদ সঙ্কেত রয়েছে। তুফানগঞ্জের দেওচড়াই, বালাভূত, নাটাবাড়ি, নাককাটিগছ, শালবাড়ি, ভানুকুমারী, নাটাবাড়ি, মহিষকুচি এবং পুরসভার অনেক এলাকায় এখনও জল আটকে রয়েছে। কলকাতা থেকে এদিন জেলায় ফিরে নাটাবাড়ির বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দুর্গতদের জন্য জামাকাপড়, ত্রিপল, শিশুদের খাবার-সহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে ভৈরবেরটারি, বক্সিরকুঠি, নাককাটিগছ-সহ বিভিন্ন এলাকায় যান। তিনি বলেন, “জলস্তর নামতেই ভৈরবেরটারিতে কালজানি নদী, ঝলঝলিতে গদাধর এবং দ্বীপোরপাড়ে রায়ডাক নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সেচমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।” তুফানগঞ্জের বিধায়ক অর্ঘ্য রায়প্রধান এ দিন জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে দুর্গতদের জন্য আরও ত্রিপল বরাদ্দের আর্জি জানান। কোচবিহার জেলা বিজেপি সম্পাদক নিখিল দে’র নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল এদিন দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখে অভিযোগ করেন, এখনও বেশির ভাগ দুর্গত মানুষের হাতে ত্রাণ পৌঁছয়নি। বিবেকানন্দ ক্লাব সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে তুফানগঞ্জের বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে দুর্গতদের খিচুড়ি, সবজি বিলি করা হয়। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে খাবার বিলি করা হয়। আলিপুরদুয়ারেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। অধিকাংশ ত্রাণ শিবির থেকে দুর্গত মানুষেরা ফিরে গিয়েছেন। আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের বিডিও প্রদীপ্ত ভগত বলেন, “জল নামলেও এখন বিপদ পেটের রোগ। এলাকার কুয়ো এবং নলকূপ ডলে ডুবে যাওয়ায় পেটের রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এলাকায় ব্লিচিং পাউডার ও ফিনাইল ছড়ানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।” দক্ষিণ পাটকাপাড়ার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মতিউর রহমান জানান, জল নেমে যাওয়ায় বাসিন্দার ঘরে ফিরেছেন। ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করা হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.