জন্মদিন বিতর্ক নিয়ে সরগরম বিধানসভা
বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্মদিন নির্দিষ্ট দিনের আগেই পালন করা নিয়ে ‘অহেতুক’ বিতর্ক হচ্ছে বলে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামিকাল, রবিবার ১ জুলাই রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রখ্যাত চিকিৎসক বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিন। কিন্তু সেদিন বিধানসভা বন্ধ। তাই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে শুক্রবারই বিধানসভায় বিধান-স্মরণ করা হয়। কিন্তু তাতে সায় ছিল না বিরোধী বামফ্রন্টের। তাই তারা ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি। তারই জবাবে বিধান-স্মরণের অনুষ্ঠান-মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তিন দিন আগে জন্মদিন পালন করলে অসুবিধা কী? ১ জুলাই পর্যন্ত তো থাকবে! সে দিন যাঁরা আসতে পারবেন, তাঁরা মালা দেবেন।”
সূর্যবাবুর বক্তব্য, “মনীষীদের জন্মদিন নাকি সারা বছর ধরেই পালন করা যায়! তা হলে জন্মদিনটা আছে কেন? ১ জুলাই বিধান রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিন। ওই দিনটা চিকিৎসক দিবস হিসাবেও চিহ্নিত। ওই দিনটা আমাদের বিধায়করা নিজেদের মতো করে পালন করবেন। কিন্তু দু’দিন আগে বিধান রায়ের জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানে আমরা অংশ নেব না।” সূর্যবাবুর আরও কটাক্ষ ছিল, “উনি (মুখ্যমন্ত্রী) তো মাস্টারদার জন্মদিন ভুলে যাচ্ছেন। ভগৎ সিংহের জন্ম-মৃত্যুদিন গুলিয়ে ফেলছেন। ওঁকে ঠিক করতে হবে, খালি রুবি রায়কে মনে রাখবেন? নাকি সঙ্গে বিধান রায়কেও মনে রাখবেন?”
বিধান-স্মরণে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: সুদীপ আচার্য
তবে বামেরা বিধান-স্মরণ অনুষ্ঠান বয়কট করলেও বামেদের নেতা প্রাক্তন ও প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর জন্মদিন পালনে যে তাঁর কোনও ‘ছুঁৎমার্গ’ নেই, তা জানিয়েছেন মমতা। যা তৃণমূলের বিধায়কদের মতে ‘সিপিএমকে সমুচিত জবাব’। মমতার কথায়, “জ্যোতি বসুর জন্মদিনও তো আমরা পালন করব। স্পিকার আমায় ওই অনুষ্ঠানে থাকতে অনুরোধ করেছেন। আমি আসব নিশ্চয়ই।” মুখ্যমন্ত্রী এ দিনও অভিযোগ করেন, বাম-জমানায় মনীষীদের যোগ্য সম্মান দেওয়া হত না। দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেন ও অজয় মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন বামেরা কখনও স্মরণ করেননি। তাঁরা সরকারে এসে এই সংস্কৃতি চালু করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিধানসভায় স্থানাভাবে অনেক মনীষীর ছবি এক জায়গায় রাখতে হয়েছে। সেই সমস্যা মেটাতে তাঁরা বিধানসভা বা সচিবালয় প্রসারণের পরিকল্পনা করছেন। মূর্তি উদ্যান (স্ট্যাচু পার্ক) ও গ্রন্থাগার করার কথাও ভাবা হচ্ছে। তাঁর নির্দেশে এ দিন মহাকরণে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন পালিত হয়। সেখানে ছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মাল বিধান-স্মরণ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। তবে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের অনেকে যাননি। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরা জানান, তাঁরা বিধান রায়ের জন্মদিন আগে পালন করা মানতে পারেননি।
এ দিন বিধানসভার লবিতে বিধান রায়ের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মুখ্যমন্ত্রী, স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ শাসকদলের অন্যান্য বিধায়করা। বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রবিবার অনুষ্ঠান হলে বিধায়করা থাকতে পারতেন না। কারণ, সপ্তাহান্তে তাঁরা গ্রামে-গঞ্জে নিজেদের কেন্দ্রে থাকেন। তা ছাড়া, রবিবার বিধানসভার কর্মচারীদেরও ছুটি। সেই কারণেই শুক্রবার ওই অনুষ্ঠান করা হল। এতে অসুবিধার কী আছে? মনীষীদের শতবর্ষ বা সার্ধ শতবর্ষ তো এক বছর আগে থেকে পালন করা হয়!”
বিরোধী বামফ্রন্টকে মমতার পাল্টা কটাক্ষ, “বিরোধীরা এখানে কেউ নেই কেন? আমরা-ওরা ছাড়তে পারলেন না? আমার দলের কেউ হলে স্মরণ করব আর অন্য দল হলে করব না, এটা ঠিক নয়। যাঁরা আসেননি, তাঁদের জন্য আমার কোনও বিরূপ মন্তব্য নেই। শুক্রবার জুম্মাবার। ঈশ্বর-আল্লা পারলে ওঁদের ক্ষমা করবেন।”
ওই অনুষ্ঠানে স্পিকার এবং পার্থবাবুও বক্তৃতা করেন। স্পিকার বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন ২৫ বৈশাখ। কিন্তু শান্তিনিকেতন নির্দেশিকায় রয়েছে, শান্তিনিকেতনে গ্রীষ্মাবকাশ পড়ে যাবে বলে কবির জন্মদিন ১ বৈশাখ নববর্ষেই পালন করা হয়েছিল। তা হলে বিধান রায়ের জন্মদিন দু’দিন আগে পালন করা নিয়ে বিতর্ক কেন?” পরে অবশ্য সূর্যবাবু যুক্তি দেন, “ওটা কবিগুরু নিজেই করেছিলেন। তার মানে কি এই যে, অন্যরাও মনীষীদের জন্মদিন আগেই পালন করে ফেলতে পারেন?”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.