|
|
|
|
আডবাণীকে আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর |
এর পরেও লিয়েন্ডার অলিম্পিকে যাবেন, বিশ্বাস ভেস পেজের |
সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
সানিয়া মির্জার আক্রমণাত্মক ই-মেল আক্রান্ত হওয়ার পরেও লিয়েন্ডার পেজ শেষমেশ অলিম্পিকে যাবেন বলেই মনে করছেন ভেস পেজ। লিয়েন্ডার-শিবিরের আশ্বস্ত হওয়ার মতো এ দিন তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাও একটা ঘটেছে নয়াদিল্লিতে। প্রতিশ্রুতি মতোই লিয়েন্ডারের জন্য প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে কথা বলেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। অলিম্পিক টেনিস দল গড়া নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের কথা আডবাণীর নজরে এনেছিলেন লিয়েন্ডারই। প্রধানমন্ত্রী আডবাণীকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, কোনও ভাবেই দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হতে দেওয়া যাবে না। দ্রুত সুষ্ঠু সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট শিবিরকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশও দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী মাকেন আর জাতীয় টেনিস সংস্থার প্রেসিডেন্ট অনিল খন্নার সঙ্গেও বৈঠকে বসবেন মনমোহন।
এমতাবস্থায় ভারতীয় টেনিস ইতিহাসের বৃহত্তম সঙ্কটের গোড়া থেকে লিয়েন্ডারের মুখপাত্র হিসেবে যাঁকে দেখা গেছে, তিনি ডাক্তার পেজ বিশ্বাস করতে চান, তাঁর ছেলে সানিয়ার বিবৃতির পালটা কিছু না দিয়ে অলিম্পিকে নিজের খেলার কথা কাল-পরশুর মধ্যে ঘোষণা করে দেবেন। যদিও টেনিসমহলের অনেকে আশঙ্কায়, লিয়েন্ডার কি নিজের যাবতীয় সম্মান বিসর্জন দিয়ে অলিম্পিকে যাবেন?
বুধবার ভেস পেজ অবশ্য ফোনে বললেন, “আজ উইম্বলডনে লিয়েন্ডারের ম্যাচ আছে। সত্যি বলতে কী, ও এখন পুরোপুরি উইম্বলডনের মধ্যে ডুবে আছে। তবু আমার সঙ্গে যতটুকু কথা হয়েছে, তাতে মনে হয়, দু-এক দিনের মধ্যে এআইটিএ-র কাছে ও নিজের স্টেটমেন্ট পাঠিয়ে দেবে। আর যে ছেলেটা তেইশ বছর ধরে দেশের স্বার্থ সব সময় দেখে এসেছে। দেশের প্রতি সব সময় দায়বদ্ধ থেকেছে, সে কোথাকার একটা আক্রমণাত্মক ই-মেলের আঘাতে অভিমান করে কিংবা দুটো লোকের ষড়যন্ত্রে অলিম্পিকের চ্যালেঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যাবে না। তা ছাড়া এটা ওর ছ’নম্বর অলিম্পিক হবে। মেন আউটডোর ইভেন্টে আজ পর্যন্ত কোনও ভারতীয় এতগুলো অলিম্পিক খেলেনি। কেন কিছু ফালতু বিতর্ক আর নোংরা রাজনীতির জন্য এত বড় সম্মান থেকে লিয়েন্ডার নিজেকে বঞ্চিত করবে?”
লিয়েন্ডারকে স্বস্তি দিতে এ দিন এআইটিএ থেকে রীতিমতো কড়া প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়েছে সানিয়ার ই-মেলের। বলা হয়েছে, মিক্সড ডাবলসে তাঁকে লিয়েন্ডারের পার্টনার এআইটিএ বেছেছিল বলেই সানিয়া অলিম্পিকে ওয়াইল্ড কার্ড পেয়েছেন। নইলে তাঁর অলিম্পিক-যাত্রাই ভেস্তে যেত। ফেডারেশন সচিব ভরত ওঝা এক বিবৃতিতে বলেছেন, অলিম্পিকে মিক্সড ডাবলসে নাম পাঠাবার শেষ দিনে লিয়েন্ডার আর সানিয়ার মিলিত ডাবলস র্যাঙ্কিং ছিল ১৯। সেখানে মহেশ+সানিয়ার র্যাঙ্কিং ২৭। ওই জুড়ির নাম পাঠানো হলে সানিয়ার পক্ষে ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ত। ফেডারেশন সচিব মনে করিয়ে দিয়েছেন, সোমদেব সিঙ্গলসে ওয়াইল্ড কার্ড পেলেও সানিয়া কিন্তু তা পাননি। তাঁকে ডাবলসে ওয়াইল্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক টেনিস সংস্থা। এতেই বোঝা উচিত, সানিয়াদের মিক্সড ডাবলস টিমের অত উঁচু র্যাঙ্কিং হওয়াতেই তিনি নিজে ডাবলসে ওয়াইল্ড কার্ড পেয়েছেন। আর অলিম্পিকে কোনও প্লেয়ারের সিঙ্গলস বা ডাবলস, কোনও একটায় ‘এন্ট্রি’ না থাকলে সেই প্লেয়ার মিক্সড ডাবলসে নামতে পারেন না। তবে আজ ফেডারেশন সচিবের “অলিম্পিকের জন্য দেশের স্বার্থে প্লেয়াররা একজোট হোক এ বার” এই অনুরোধকে পাত্তা না দিয়ে এ দিনই রাতে নিউজ চ্যানেলে মহেশ-বোপান্না জুটি ফের একহাত নেন লিয়েন্ডারকে। জোট-টোটের সম্ভাবনা তো দূর অস্ত! সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও এ দিন সিএবি-তে দাঁড়িয়ে বলে গেলেন, “টেনিস নিয়ে আমি বিশেষ খোজখবর রাখি না। তবে দেশের স্বার্থে সেরা ডাবলস জুটিরই অলিম্পিকে যাওয়া উচিত।” ঘুরিয়ে মহেশদেরই সমর্থন করছেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক।
মহেশদের বিরুদ্ধে পারেনি। কিন্তু পেরেন্ট বডি-কে মারাত্মক আক্রমণ করায় এআইটিএ কি সানিয়ার বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিুমূলক ব্যবস্থা নেবে? সম্ভাবনা কম। কারণ, ফেডারেশনেই অনেকে মনে করছেন, সানিয়া টেনিস কর্তা বা পেজদের তীব্র সমালোচনা করলেও বিবৃতির কোথাও বলেননি, তিনি লিয়েন্ডারের সঙ্গে খেলবেন না। বরং বারবার লিখেছেন, দেশের স্বার্থে তাঁকে যা করতে বলবে জাতীয় টেনিস সংস্থা, তিনি সেটাই করবেন। এতে তাঁর দেশের প্রতি দায়বদ্ধতাই প্রকাশ পেয়েছে। এর পরে তাঁকে কী ভাবে শাস্তি দেওয়া যায়?
ভেস পেজ-ও সানিয়ার বিবৃতিকে ‘এক জন অভিমানী দেশপ্রেমী’র বক্তব্য হিসেবে দেখছেন। বললেন, “সানিয়ার ওই বিবৃতির মধ্যে একটা জিনিস কিন্তু ফুটে বেরিয়েছে। মেয়েটা দেশের কাছে পুরোপুরি দায়বদ্ধ। যেমনটা লিয়েন্ডার পেজ। অনাবশ্যক একটা বিতর্কে অবাঞ্চিত ভাবে নিজের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় সানিয়ার অভিমান হতেই পারে। তবে দেশের প্রতি ওর দায়বদ্ধতা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।” |
|
|
|
|
|