বিস্ফোরণে উড়ল রেললাইন
পুলিশ-ট্রাকে মাওবাদী হানা ধানবাদে, হত ১, জখম ১৩
যৌথবাহিনীর অভিযান বন্ধের দাবিতে ডাকা বন্ধকে ঘিরে ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডব চালাল মাওবাদীরা। ধানবাদ এবং লাতেহারে রেল লাইন উড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি, ধানবাদের তোপচাঁচি এলাকায়, ২ নম্বর জাতীয় সড়কে পুলিশের উপরেও হামলা চালায় তারা। মাওবাদীদের গুলিতে এক কনস্টেবলের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ আরও ১৩ জন পুলিশ কর্মী। এঁদের মধ্যে পাঁচ জনের আঘাত গুরুতর বলে জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশের মুখপাত্র রিচার্ড লাকড়া।
মাওবাদী হানায় আহত পুলিশকর্মীদের চিকিৎসা চলছে ধানবাদের সেন্ট্রাল হাসপাতালে। ছবি: চন্দন পাল
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি ছোট ট্রাকে করে ১৪ জন পুলিশ কর্মী তোপচাঁচি থানা থেকে ধানবাদের দিকে যাচ্ছিলেন। রাত প্রায় সওয়া বারোটা নাগাদ লরিটি বাঁকামোড়ের কাছে আসতেই এলোপাথাড়ি গুলি ছুটে আসে তাঁদের দিকে। পাল্টা-আক্রমণ তো দূরের কথা, পুলিশ কর্মীরা কার্যত কিছু বুঝে ওঠারই সময় পাননি।
গুলি লাগে লরির চালক প্রকাশ চন্দ্র মাহাতোর গায়ে। তবে ঘাবড়ে না গিয়ে তিনি লরির মুখ উল্টোদিকে ঘুরিয়ে ফের তোপচাঁচি থানায় ফিরে আসেন।
থানায় একটি অস্ত্রবাহী ‘বজ্রবাহন’ গাড়ি রাখা ছিল। সেটিতে করে আহতদের ধানবাদের কেন্দ্রীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ধনেশ্বর মাহাতো (৩০) নামে এক পুলিশ কর্মীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। গুলিতে প্রত্যেকেই কমবেশি জখম হয়েছেন। পরে তাঁদের মধ্যে এক এএসআই-সহ পাঁচ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাঁচিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গত রাতে, ধানবাদ শহরে এসেও মাওবাদীরা লিফলেট ছড়িয়ে যায়। ধানবাদের কোর্টমোড়, পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে, স্টেশন বাজার এলাকা ও রবীন্দ্রপ্রসাদ বর্মা চকেও তারা লিফলেট ছড়ায়। বিভিন্ন সংবাদপত্র অফিসেও লিফলেট যায়। মাওবাদীদের দাবি, বিভিন্ন সরকারি স্কুলে যে পুলিশ শিবির রয়েছে, সেগুলি সরাতে হবে। গরিব ও মহিলাদের উপর অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়াও গরিব পুলিশ কর্মীদের চাকরি ছেড়ে তাদের দলে নাম লেখানোর আহ্বানও জানানো হয়েছে এই লিফলেটে। ধানবাদ শহরের বুকে কাল রাতে মাওবাদীদের এই ‘যথেচ্ছ ভ্রমণ’ চিন্তায় ফেলেছে পুলিশ প্রশাসনকে।
বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন। হেহেগড়া স্টেশনের কাছে। ছবি: পিটিআই
শহরে হামলা চালানোর পাশাপাশি এই বন্ধে মাওবাদীদের সহজ লক্ষ্য ছিল রেল লাইন। রেল সূত্রের খবর, গত কাল রাত একটা নাগাদ ধানবাদ এবং লাতেহারে হানা দেয় সশস্ত্র মাওবাদীদের দু’টি বাহিনী। রেলের ধানবাদ ডিভিশনের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক অমরেন্দ্রনাথ দাস জানান, রাত একটা নাগাদ গ্র্যান্ড কর্ড শাখার নিচিতপুর এবং তেঁতুলমারি স্টেশনের মাঝামাঝি ডাউন লাইনে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। শক্তিশালী বিস্ফোরণে রেল লাইনের একাংশ টুকরো টুকরো হয়ে যায়। প্রায় একই সময়ে বিস্ফোরণ ঘটে লাতেহারের হেহেগড়া হল্ট স্টেশনের কাছে। সেখানেও বিস্ফোরণে আপ-ডাউন লাইনের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অমরেন্দ্রবাবু জানান, লাতেহারের হেহেগড়ার স্টেশন ম্যানেজার মনোজ ঠাকুর-সহ দু’জন রেলকর্মীকে গত কাল রাতে অপহরণ করে দুষ্কৃতীরা। দীর্ঘ সময় আটকে রাখার পর আজ বেলা দেড়টা নাগাদ দুষ্কৃতীরা তাদের ছেড়ে দেয়।
এই দু’টি ঘটনায় ধানবাদ ডিভিশনের আপ-ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, নাশকতার জেরে মাঝ পথে থমকে যায় হাওড়া এবং শিয়ালদহ রাজধানী এক্সপ্রেস, দেরাদুন-শিয়ালদহ এক্সপ্রেস, হাওড়া-যোধপুর এক্সপ্রেস, গয়া-ধানবাদ ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস-সহ ধানবাদ ডিভিশনের সমস্ত ট্রেনই। তেঁতুলমারির লাইন মেরামতের কাজ আজ সকাল সওয়া সাতটা নাগাদ শেষ হয়। ট্রেন চলাচল শুরু হয় সাড়ে সাতটা নাগাদ। তবে লাতেহারের হেহেগড়া স্টেশনের কাছে লাইন মেরামত করতে আজ বেলা পৌনে দু’টো বেজে যায়। ওই লাইনে বেলা দু’টোর পর ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। রাজ্য পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ধানবাদের টুন্ডি থানার প্রতাপপুরের কাছে এ দিন ভোরে চড়াও হয় সশস্ত্র এক দল মাওবাদী। প্রতাপপুরের কাছে ধানবাদ-গিরিডি সড়কে একটি ছোট সেতুতেও বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে মাওবাদীরা। কাল রাতে রাজধানী রাঁচির উপকণ্ঠে, খলাড়ি এলাকাতেও তারা নাশকতা চালায় খেলাড়ির কেরাকাট্টায় সশস্ত্র মাওবাদীরা একটি মোবাইল টাওয়ার জ্বালিয়ে দিয়েছে। এই বন্ধে কোনও দূরপাল্লার বাস চলেনি। থমকে যায় পণ্য পরিবহণও। রাজ্যের কয়লা খনিগুলিতেও আজ কাজ হয়নি। কাজ হয়নি লোহারডাগার বক্সাইট খনিতেও। রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় বন্ধ ভালই সাড়া ফেলছে। তবে শহরাঞ্চলে তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি বলে পুলিশ জানিয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.