জমি আর প্রকৃত লগ্নি নিয়ে প্রশ্ন বিরোধীদের
রাজ্যে শিল্পায়ন নিয়ে আত্মবিশ্বাসী পার্থ
তুন সরকারের তেরো মাসের মধ্যে দু’টি শিল্প বাজেট পেশ হল রাজ্য বিধানসভায়। কিন্তু শিল্পের জন্য জমি কোথা থেকে আসবে সেই প্রশ্নের সমাধান হল না বলেই অভিযোগ বিরোধীদের। গত এক বছরে সুনির্দিষ্ট বিনিয়োগ প্রস্তাব কত, তা নিয়েও সরকারি বক্তব্য অস্বচ্ছ বলে মনে করছেন তাঁরা।
রাজ্য সরকারের তৈরি ‘জমি ব্যাঙ্ক’ থেকে বড় শিল্পের জন্য একলপ্তে বেশি জমি পাওয়ার সম্ভাবনা যে প্রায় নেই, প্রশাসনিক সূত্রেই তা কবুল করা হচ্ছে। রুগ্ণ ও বন্ধ কারখানার জমির তথ্য জোগাড় করতে একটি সংস্থাকে নিয়োগ করা হলেও তারা এখনও চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়নি। এ হেন পরিস্থিতিতে বুধবার বিধানসভায় শিল্প দফতরের বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে ‘আত্মবিশ্বাসী’ শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, “শিল্পের জন্য জমির সমস্যা হবে না।” তবে সেই জমি কোথা থেকে আসবে, তা অবশ্য খোলসা করে বলেননি তিনি।
ঠিক একই ভাবে নতুন সরকারের ১৩ মাসের সময়কালে বাস্তবে কত টাকা বিনিয়োগ হল, তারও কোনও তথ্য দেননি শিল্পমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “এই সময়ে ১৭৬টি প্রস্তাব এসেছে। যাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে ৫৯টি প্রকল্পের জমির ‘লিজ চুক্তি’ হয়ে গিয়েছে। ৬৭টি প্রকল্পের ‘লিজ চুক্তি’ হওয়ার পথে। বাকি ৫০টি প্রকল্পের মালিকদের পাওয়া যাচ্ছে না।” পার্থবাবুর বক্তব্য, “লিজ চুক্তির পরে কাজ শুরু করতে তিন বছর সময় দেওয়া হয়েছে। তাই বিনিয়োগ কত হল, তিন বছর পরেই তার উত্তর দেব।” বিরোধীদের অভিযোগের জবাবে তাঁর মন্তব্য, “মুরগির পেট কেটে এখনই দেখতে চান ক’টা ডিম আছে।”
বিরোধীদের বক্তব্য, রাজ্যের শিল্প ও জমির পরিস্থিতি নিয়ে গত এক বছর ধরে রাজ্য সরকার যা বলে আসছে, এ দিনও শিল্পমন্ত্রীর কথায় ছিল তারই প্রতিধ্বনি। বাজেটে নতুন কোনও দিশা, বা ঘোষণা শোনা যায়নি। ‘সরকারের উদ্যোগ’ আর ‘আহ্বান’-এই থেমে থেকেছে যাবতীয় কথা।
বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “এই ১৩ মাসে বাস্তবে কত টাকা বিনিয়োগ হয়েছে, তা জানতে চাই শিল্পমন্ত্রীর কাছে। যদিও আমার ধারণা, একমাত্র বার্ন স্ট্যান্ডার্ডকে জমি দেওয়া ছাড়া বাকি সবই হয়েছে বামফ্রন্টের আমলে।” জয় বালাজি, আধুনিক, শ্যাম স্টিল, ভূষণ স্টিলের মতো ইস্পাত প্রকল্প, ভিডিওকন, গেঁওখালিতে জাহাজের যন্ত্রাংশ নির্মাণ প্রকল্প, অন্ডালের বিমাননগরী এবং শালবনিতে জিন্দলদের প্রকল্পের জন্য জমি বামফ্রন্টের আমলেই অধিগ্রহণ করা হয়েছিল দাবি করে এই সব প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী তা জানতে চান সূর্যবাবু।
উত্তরে পার্থবাবু বলেন, “জয় বালাজি, অভিজিৎ, আধুনিক, শ্যাম স্টিলএরা কেউ ‘লিজ চুক্তি’ সই করছে না। এদের কেউ কেউ বাম আমলে ‘কোল ব্লক’ পেয়েছে। এখন সিবিআই তার তদন্ত করছে। আর ভূষণ স্টিল এক ইঞ্চি জমি নেয়নি।” সূর্যবাবুকে কটাক্ষ করে পার্থবাবু মন্তব্য করেন, “আমাদের সরকার এমন নয় যে, শুধু ছবি তুলে বাড়ি চলে যাব। এখন ‘পারফর্ম’ করে দেখাতে হবে। এর পর তো আমি ব্যবস্থা নিতে শুরু করব।”
ল্যান্ড ব্যাঙ্ক দিয়ে বড় শিল্পের জমির চাহিদা পূরণ হবে না বলে অভিযোগ করে শিল্পমন্ত্রীর উদ্দেশে সূর্যবাবু বলেন, “আপনাদের নীতি ঠিক করতে হবে। অন্য রাজ্যের সঙ্গে লড়াই করার মতো ‘প্যাকেজ’ তৈরি করতে হবে।” সরাসরি এর উত্তর না দিয়ে পার্থবাবু বলেন, “জমি না পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে যে সব বিনিয়োগকারী আপনাদের কাছে গিয়ে অভিযোগ করছেন, তাঁদের আমার কাছে নিয়ে আসুন। আমরা একসঙ্গে গিয়ে বিষয়টা দেখব। আমি খোলামেলা বলছি, যাঁরা জমির জন্য শিল্প করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করছেন, তাঁদের নিয়ে আসুন। আমরা কৃষকের পেটে লাথি মেরে শিল্প করতে পারব না। আপনারা সিঙ্গুরে সেটাই করেছেন বলেই বিদায় নিয়েছেন।”
মন্ত্রীর দাবি, “ভূমি সংস্কার আইনের ১৪ ওয়াই ধারা সংশোধন করে এর আওতায় অনেক শিল্পক্ষেত্রকে আনা হয়েছে। তাই জমির কোনও সমস্যা হবে না।” তবে শিল্পের জন্য শুধু জমি নয়, পুঁজি এবং শ্রমও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শুধু জমি নিয়ে কেন বলা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.