সংস্কারের অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে লক্ষ্মণ সেনের আমলে তৈরি বলে কথিত দ্বারবাসিনী চণ্ডী মন্দির। ঐতিহ্যবাহী ওই মন্দির সংস্কার করতে কেউ এগিয়ে না আসায় জেলার ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোয দেখা দিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, এখনই যদি ওই মন্দির সংস্কারের কাজে হাত না দেওয়া যায় তবে প্রাচীন স্থাপত্যটি মাটিতে মিশে যাবে। এ ব্যাপারে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের মালদহের অ্যাসিস্ট্যান্ট কনজারভেটার দিলীপকুমার দে বলেন, “আমরা মালদহের গৌড়, আদিনা ও বানগড়ের ২৭ টি সৌধ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করছি। দ্বারবাসিনী চণ্ডী মন্দির সংস্কার করার ব্যাপারে আমাদের কাছে কেউ আবেদন করেননি। যদি কেউ আমাদের ওই মন্দির সংস্কারের আবেদন করেন তবে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের আধিকারিকেরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।” |
দ্বারবাসিনী এমনই একটা মন্দির যেখানে হিন্দু ও মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য চোখে পড়বে। মন্দির নিচের অংশ কালো পাথর দিয়ে তৈরি। যা হিন্দু ঐতিহ্যের নিদর্শন। মন্দিরের উপরের অংশ সুলতানি আমলের ঐতিহ্য মনে করিয়ে দেয়। মালদহের বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ও গবেষক কমল বসাক বলেন, “বতর্মানে আমরা যে গৌড়কে দেখছি সেটা সুলতানি আমলে প্রাচীন বাংলার রাজধানী। কিন্তু সুলতানি আমলের আগে সেন আমলে লক্ষণ সেন মালদহ শহর লাগোয়া সাগরদিঘিকে ঘিরে তাঁর রাজধানী লক্ষণাবতী গড়ে তুলেছিলেন। সেই রাজাধানীর চার দিকে লক্ষণ সেন দ্বারবাসিনীচণ্ডী, পাতালচণ্ডী, জহুরাচণ্ডী, মাধাইচণ্ডী এই চারটি মন্দির তৈরি করেন। দ্বারবাসিনী মন্দির ছিল রাজধানীর পশ্চিমদিকের মন্দির।” মালদহ শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে কাজীগ্রাম পঞ্চায়েত। সেই পঞ্চায়েতের চন্ডীপুর গ্রাম এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই দ্বারবাসিনী মন্দির।
এলাকায় গিয়ে দেখা গেল গড়ের উপরে এই মন্দিরের চারপাশে জঙ্গলে ঢেকে গিয়েছে। মন্দিরের ইট পড়ে যাচ্ছে। কাজীগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রধান অশোক রায় বলেন, “আমাদের পঞ্চায়েত থেকে দ্বারবাসিনী মন্দির সংস্কারের উদ্যোগ হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংস্কারের কাজ শুরু করা যায়নি। এই মন্দিরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সর্বেক্ষণের কাছে আবেদন করা হবে। তাঁরা এগিয়ে না আসলে আমাদের পঞ্চায়েতের একার পক্ষে এই মন্দির সংস্কার করা সম্ভব নয়।” কমলবাবু বলেন, “এই দ্বারবাসিনী মন্দিরের পাশ দিয়ে গঙ্গা নদী প্রবাহিত হত। এই মন্দিরকে ঘিরে প্রচুর জনবসতি ছিল এবং মন্দিরের পাশেই বড় বড় বজরা এসে লাগত। এখনও সেই নিদর্শন মন্দিরের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যদি ভারতীয় পুরাতত্ব সর্বেক্ষণ কিংবা পশ্চিমবঙ্গ পুরাতত্ত্ব দফতর এগিয়ে না আসে তবে দ্বারবাসিনী মাটিতে মিশে যাবে।” |