বর্ষার মধ্যে মালদহ থেকে আজিমগঞ্জের মাঝে যে কোনও জায়গায় লাইনের নিচের মাটি ধসে যে কোনদিন বড়সড় ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর এই আশঙ্কা প্রবলভাবে দেখা দেওয়ায় প্রথম পর্যায়ে মালদহ ডিভিশনের ১৪ কিলোমিটার ধসপ্রবণ এলাকায় মেরামতের কাজ শুরু করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। বর্ষার আগেই এই কাজ শেষ করতে চান রেল কর্তৃপক্ষ। যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে লাইনের দুপাশে বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। প্রথম পর্যায়ের অপেক্ষাকৃত কম ২৮ কিলোমিটার ধসপ্রবণ এলাকায় কাজ শুরু করবে রেল। গত বছর ৩১ জুলাই জামিরঘাটা স্টেশনের কাছে কলকাতামুখী বেঙ্গালুরু-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের সঙ্গে মালদহমুখী আজিমগঞ্জ প্যাসেঞ্জারের মুখোমুখি সংঘর্ষ দু’জন যাত্রীর মৃত্যু হয়। ওই দুর্ঘটনার জেরে প্রায় দু’দিন রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ঘটনাস্থল ঘুরে রেলের চিফ সেফটি কমিশনার তাঁর রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন লাইনের নিচে মাটি ধসে যাওয়ার কারণেই খালতিপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। মালদহ থেকে আজিমগঞ্জ পর্যন্ত বহু জায়গায় লাইন ধসপ্রবণ এলাকার উপর দিয়ে গিয়েছে। ফলে এই এলাকায় ফের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মাসখানেক আগে চিফ সেফটি কমিশনারের এই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই নড়েচড়ে বসে মালদহ ডিভিশনের কর্তারা। কী ভাবে বর্ষার আগে ধস প্রবণ এলাকা মেরামত করে দুর্ঘটনা এড়ানো যায় সেই নকশা তৈরি করে কাজ শুরু করেছে মালদহ ডিভিশন। মালদহ ডিভিশনের ডিআরএম রবীন্দ্র গুপ্তা বলেন, “মালদহ ডিভিশনের ৪৭৮ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ৪২ কিলোমিটার ধসপ্রবণ এলাকা। গত বছর এই ধসপ্রবণ এলাকা খালতিপুরে লাইনের নিচে মাটি ধসে যাওয়ার ফলে ট্রেন দুঘর্টনা ঘটেছিল। ফের যাতে ওই ধসপ্রবণ এলাকায় কোনও ট্রেন দুর্ঘটনা না ঘটে সেই কারণে প্রথম পর্যায়ে এ বছর ১৪ কিলোমিটার ধসপ্রবণ এলাকা মেরামতের কাজ করা হচ্ছে। এর জন্য খরচ হচ্ছে ৪ কোটি টাকা। আগামী বছর বাকি ধসপ্রবণ এলাকায় মেরামতের কাজ করা হবে। রেল ৮ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে।” ডিআরএম জানান, এলাকায় বালি মাটির পাশাপাশি দুপাশে বড় বড় পুকুর খোঁড়ায় লাইন দুর্বল হয়ে পড়েছে। সে জন্য লাইনের দু’পাশের মাটিতে রেল ও শালবল্লা দিয়ে শক্ত করা হচ্ছে। করা হচ্ছে। পাশাপাশি লাইনের নিচের মাটি ধসছে কিনা তা আগাম জানার জন্য প্রতি ৫০ মিটার পর পর লাইনের দুইপাশে চারটি করে ‘ব্যাড ব্যাঙ্ক মার্কার’ বসানো হয়েছে। যে মার্কারে লাল, কালো ও সাদা তিন রং লাগানো হয়েছে। প্রতিদিন যাঁরা লাইন পরীক্ষা করবেন, তাঁরা ওই মার্কারকে লক্ষ্য করবেন। ওই মার্কার মাটির নিচে বসছে কিনা তা রং দেখে বোঝা যাবে। রংয়ের অবস্থানের হেরফের হলেই লাইনের টহলদাররা নিকটবর্তী স্টেশনে জানাবেন। সঙ্গে সঙ্গেই ওই এলাকায় দ্রুত মেরামতের কাজ শুরু করা হবে। ফলে ট্রেন দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে। এ ছাড়া ওই ধসপ্রবণ এলাকা লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের সচেতন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তাঁরা যেন লাইনের পাশে কোন মাটি না কাটেন। মালদহ থেকে ফরাক্কা, ফরাক্কা থেকে আজিমগঞ্জ, সাহেবগঞ্জ থেকে ভাগলপুর এবং সুলতানগঞ্জ থেকে বারিহারপুর এই চারটি জোনে ১৩ থেকে ১৪ টি জায়গাকে ধসপ্রবণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করেছে মালদহ ডিভিশন। |