জলপাইগুড়ির গরুমারা জঙ্গলে বেড়াতে গেলে আসতেই হবে ‘যাত্রাপ্রসাদ ওয়াচ টাওয়ার’-এ। চেকপোস্ট থেকে সাত কিলোমিটার দূরে জঙ্গলের গভীরে ঢুকে বন্য জন্তু দর্শনের আদর্শ স্থান এই নজর মিনার। গাছের সবুজ ছায়ার আড়ালে এই নজর মিনার থেকে মূর্তি নদীর ধারে ঘাসের জঙ্গলে বাইসন, গণ্ডার, স্পটেড ডিয়ার কিংবা নদীর ধারে পেখম মেলা ময়ূরের নাচ দেখা যায়। |
এক সময় বনবিভাগে আদর্শ কুনকি হাতি হয়ে উঠেছিল যাত্রাপ্রাসাদ। বহু জঙ্গী হাতিকে ঘায়েল করেছে সে। গরুমারার জঙ্গল এবং সেখানকার বুনোদের সম্পর্কে সমঝদার ছিল বনকর্মীদের বাধ্য এই হাতি। গৌরীপুরের জমিদারের কাছ থেকে কোচবিহারের রাজপরিবার উপহার হিসেবে পেয়েছিল যাত্রাপ্রসাদকে। পরে কোচবিহারের রাজপরিবার হাতিটিকে দান করেছিল জলদাপাড়া অভয়ারণ্যে। সেখান থেকে তার ঠাঁই হয় গরুমারার জঙ্গলে। ১৯৯৬-এর গোড়ার দিকে বয়সজনিত কারণে যাত্রাপ্রসাদের মৃত্যু হলে বনবিভাগ ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এই ওয়াচ টাওয়ারটি তার নামে উৎসর্গ করে। এখানেই শেষ নয়। নজর মিনারের সামনে বসানো হয়েছিল মাহুত সমেত যাত্রাপ্রসাদের ফাইবার গ্লাসের একটি মূর্তিও। কিন্তু বুনো হাতিরা পরিখা পার হয়ে এসে সে মূর্তিটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। গরুমারার বনকর্মীদের বিশ্বাস, অন্য হাতিরা যাত্রাপ্রসাদকে হিংসা করত, সে জন্যই তারা এই কাণ্ডটি ঘটিয়েছিল। যাত্রাপ্রসাদ না থাকলেও তার নামাঙ্কিত এই ওয়াচ টাওয়ারটিতে দৈনিক চার দফায় ১৬০ জন পর্যটক হাজির হন। গরুমারার জঙ্গলে আজও এ ভাবেই যাত্রাপ্রসাদ জানান দিচ্ছে তার অস্তিত্ব।
|
যখন বন্দুকের চল ছিল না, লাঠিই ছিল আত্মরক্ষার মাধ্যম। ব্রিটিশ আমলে লাঠি দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা লড়াই করেছেন। ডাকাতিরও অন্যতম অস্ত্র ছিল লাঠি। আগে গ্রামে গ্রামে লাঠি খেলার শিক্ষা দেওয়া হত। বর্তমানে তা হারিয়ে গিয়েছে। তবু আলো দেখাচ্ছে ভারত সেবাশ্রম সংঘ। সংঘের ছেলেদের লাঠিখেলা শেখানো হয়। সম্প্রতি দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জে ভারত সেবাশ্রম সংঘের বাৎসরিক অনুষ্ঠানে লাঠি খেলার প্রদর্শন অনুষ্ঠিত হল। দুই ঘণ্টা ধরে চলা এই প্রদর্শনী উপস্থিত সকলের নজর কাড়ে।
|
উৎসবের জন্য প্রয়োজন নেই আতস বাজির প্রদর্শনী। প্রয়োজন নেই আলোকমালা দিয়ে মঞ্চসজ্জার। শুধু কথার পিঠে কথা সাজিয়ে তৈরি করা যায় উৎসব প্রাঙ্গণ। সম্প্রতি বালুরঘাটের মন্মথ মঞ্চ এমন ভাবেই সেজে উঠেছিল। এখানে অনুষ্ঠিত হল উত্তরবঙ্গের কবিতা উৎসব। ‘মধ্যবিত্ত’ পত্রিকার উদ্যোগে এই কবিতা উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গের একশো জন নবীন ও-প্রবীণ কবি।
|
রাণা, সুদীপ এবং বাদশা তিন জন মানসিক ভাবে পরিবর্তনকামী (ট্রানজেনন্ডার) নারী। এঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এক জন শিক্ষিকা অযুক্তা। সম্প্রতি এই চার জন মিলে আয়োজন করেছিলেন তাঁতের শাড়ি, কুর্তি, পাঞ্জাবি এবং সালোয়ারের প্রদর্শনী। সমাজ থেকে বিতাড়িত হওয়া নারীদের স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে এই কর্মযজ্ঞ। জলপাইগুড়ি শহরে আয়কর অফিসের উল্টো দিকে পাঁচ দিন ধরে চলেছিল এই প্রদর্শনী।
|
সংস্কৃত ভাষা শিক্ষার একটি কেন্দ্র চালু হল আলিপুরদুয়ারে। মূল উদ্যোক্তা দক্ষিণেশ্বরের ‘রামকৃষ্ণ সংঘ আদ্যাপীঠ’। সহযোগিতায় ভারত সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। একটি আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এখানকার নেতাজি রোড আদ্যাপীঠ শাখা মন্দিরে এর উদ্বোধন করেন সংঘের সহকারী সচিব ব্রহ্মচারী বিবেক ভাই। প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘অনৌপচারিক সংস্কৃত শিক্ষণ কেন্দ্র’। প্রাচীন ভাষাকে রক্ষা করতেই এই উদ্যোগ।
|
কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া নয়। প্রচণ্ড গরমে বালুরঘাটের থানামোড়ে কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে আস্ত একটা বইয়ের জগত খুলে ফেলেছেন স্বপনদা এবং সরযূরবি দাস। নামী ম্যাগাজিনের পাশে এঁরা সাজিয়ে রাখেন স্থানীয় কবির কাব্যগ্রন্থ, মাসিক, পাক্ষিক, সাপ্তাহিক পত্র-পত্রিকা। চলার পথে কেউ কেউ থমকে দাঁড়ান। কাগজে চোখ বুলিয়ে নেন। এখানে সংবাদপত্র পাঠ করতে কোনও বারণ নেই। বিক্রি হবে না জেনেও ফুটপাথে সাজিয়ে রাখেন লিটিল ম্যাগাজিন। প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে এই সব বইকে তাঁরা আগলে রাখেন পলিথিনের আড়ালে। মাথার ওপর ছাদ নেই। সন্ধ্যায় আলো নেই। এ ভাবেই কৃষ্ণচূড়ার নীচে চলে বইপাড়া এবং বইপড়া। ধুলোয়, মাটিতে বসেই কেটে যায় এঁদের বইপাড়া।
|