আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস |
সচেতনতায় প্রচার, হবে সমীক্ষাও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
মঙ্গলবার ছিল আন্তর্জাতিক মাদক-বিরোধী দিবস। এই উপলক্ষে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়েই নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে পুলিশও। কী ভাবে যুব-সমাজের একাংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে, এদের পরিবারের পরিস্থিতি কী রকম, এলাকায় শিক্ষিতের হার কেমন, এ সব খতিয়ে দেখতে খড়্গপুর শহরে সমীক্ষা চালাবে পুলিশ। চলতি সপ্তাহ থেকেই কাজ শুরু হবে। এ ক্ষেত্রে সাহায্য করবে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। প্রাথমিক ভাবে শহরের ৪টি এলাকায় সমীক্ষা চালানো হবে। সমীক্ষক দল বাড়ি বাড়ি পৌঁছবে। বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবে। পরে অন্য এলাকাতেও সমীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। খড়্গপুরের এসডিপিও দীপক সরকার বলেন, “কী ভাবে একাংশ যুবক মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে, তা খতিয়ে দেখতে এই পরিকল্পনা।” সমীক্ষার রিপোর্ট খতিয়ে দেখে কিছু পদক্ষেপ করা হবে বলেও পুলিশ সূত্রে খবর। |
এ দিন মাদক-বিরোধী দিবসে খড়্গপুর, ঘাটাল, মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় নানা কর্মসূচি পালিত হয়। খড়্গপুর শহরের কমলা কেবিনে এক সচেতনতা সভা হয়। উপস্থিত ছিলেন মহকুমাশাসক সুদত্ত চৌধুরী। এক মোটর সাইকেল মিছিল শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে। ঘাটাল শহরে পদযাত্রায় সামিল হয় স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। ছিলেন ঘাটালের মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারী, মহকুমা হাসপাতালের সুপার অনুরাধা দেবও। বিকেলে জেলা পুলিশের উদ্যোগে চন্দ্রকোনা টাউন হলে এক অনুষ্ঠান হয়। আলোচনাসভার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে কৃতীদের সংবর্ধিত করা হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী। একটি সংস্থা ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক ও লেখাপড়ার সরঞ্জাম দেয়। ক্ষীরপাই, দাসপুরেও মাদক-বিরোধী দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। সকালে মেদিনীপুর শহরে স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে সচেতনতামূলক পদযাত্রা হয়। ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কল্যাণ মুখোপাধ্যায়।
জেলা জুড়েই মাদক দ্রব্যের কেনাবেচা বাড়ছে। অনেক স্কুল পড়ুয়াও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। খড়্গপুরের মতো এলাকায় এই সমস্যা সব থেকে বেশি। যুব- সমাজের একাংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ায় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনাও বাড়ছে। মেদিনীপুর-খড়্গপুর শহরে মাঝেমধ্যেই চুরি-ছিনতাই হচ্ছে। মাদক দ্রব্যের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত একাধিক চক্র। অভিযোগ, পুলিশ নিয়মিত নজরদারি না চালানোয় রমরমিয়ে ব্যবসা চলছে। মহিলারাও জড়িয়ে পড়েছেন। মহিলাদের মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন এলাকায় হেরোইন কেনাবেচা চলছে। এই কারবার বন্ধ করতে তল্লাশিও চালানো হচ্ছে। খড়্গপুর শহরের পাঁচবেড়িয়া, দেবলপুর, আজাদবস্তি, মালঞ্চ রোড, জয়নগর, গেট বাজার, গোলবাজার, পুরাতন বাজার, সাঁজোয়াল-সহ খড়্গপুর টাউন ও লোকাল থানা এলাকার বেশ কয়েকটি জায়গায় মাদক দ্রব্য কেনাবেচা হয়। |
খড়্গপুর টাউন ও লোকাল থানা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে জুয়া, সাট্টা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এমনকী বেআইনি মাদকচক্রগুলি ‘অতি’ সক্রিয় হয়ে যুব সমাজকে মাদকাসক্ত করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ। শহরের বিভিন্ন এলাকায় হেরোইন, গাঁজা, চরস প্রভৃতি বিক্রি হয়। অভিযোগ, এক শ্রেণির পুলিশ কর্মীও দুষ্টচক্রের সঙ্গে যুক্ত। পরিস্থিতি পাল্টাতে ‘তৎপর’ হয়েছে পুলিশ। এ জন্য সচেতনতা সভা, মিছিল প্রভৃতি করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কাছেও সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, সমীক্ষার ক্ষেত্রে মূলত ৩টি দিক খতিয়ে দেখা হবে। ১) মাদকাসক্ত যুবকের পরিবারের আর্থিক অবস্থা কেমন। পরিবারের সদস্য কতজন। এর মধ্যে কতজন রোজগার করে। ২) এলাকায় শিক্ষিকের হার কত। ৩) এলাকায় মোট কত জন আসক্ত। আপাতত পাঁচবেড়িয়া, সাঁজোয়াল, পুরাতন বাজার, ভবানীপুর এলাকায় সমীক্ষার কাজ চলবে। পাশাপাশি মাদকাসক্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসারও বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, খড়্গপুর শহরের ২০ জন মাদকাসক্তকে নিয়ে একটি চিকিৎসা শিবির আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ১৫ দিন ধরে এই শিবির চলবে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “কী জন্য যুব-সমাজের একাংশ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে, এ ক্ষেত্রে কী শুধু পরিবারের আর্থিক অবস্থাই দায়ী, না কি অন্য কোনও কারণ রয়েছে, সমীক্ষায় তা জানা যেতে পারে। রিপোর্ট খতিয়ে দেখে পরবর্তীকালে নিশ্চিত ভাবেই কিছু পদক্ষেপ করা হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাদক- বিরোধী প্রচার চালানো হবে। প্রয়োজনে পোস্টারিং করা হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবারের লোকজনদের আরও সচেতন হতে হবে।” পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীর কথায়, “মাদক- বিরোধী দিবসে এ দিন জেলা জুড়ে নানা কর্মসূচি হয়েছে। সাধারন মানুষকে সচেতন করতেই এই সব কর্মসূচি।” |