হাসপাতাল পরিদর্শনে তৃণমূলের সাংসদ, বিক্ষোভে দলের কর্মীরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কাটোয়া |
হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা দলীয় সাংসদের গাড়ি আটকে নানা দাবি-দাওয়ায় বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূলের একাংশ। গাড়ি থেকে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকা নেতা-কর্মীদের কথা শুনতে হল সাংসদ রত্না দে নাগকে। মঙ্গলবার কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে দলের একাংশের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বও।
রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল ফেরানোর জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কমিটির সদস্যেরা রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে পরিকাঠামো ও চিকিৎসা সংক্রান্ত খুঁটিনাটি দেখবেন ও সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করবেন। এই কমিটির অন্যতম সদস্যা হুগলির তৃণমূল সাংসদ রত্না দে নাগ। এ দিন তাঁর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল পরিদর্শন করে। সন্ধ্যায় তাঁরা কালনা মহকুমা হাসপাতালেও যান। |
কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে জরুরি বিভাগ থেকে প্রসূতি বিভাগ, সর্বত্র ঘুরে দেখেন সাংসদ। পুরুষ বিভাগের মেডিসিন ওয়ার্ডের এক রোগীর ছেলে, মুলটি গ্রামের দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংসদের কাছে অভিযোগ, “আমার বাবা রোগ-যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। না দেখেই তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দিয়েছেন চিকিৎসক। হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্সও মিলছে না।” বহির্বিভাগে দাঁড়িয়ে কাটোয়ার বড় মেইগাছির বাসিন্দা হেকমত শেখের অভিযোগ, “কোমরের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছি। ডাক্তার এক্স-রে করতে বলেছেন। কিন্তু আট মাস ঘুরেও এক্স-রে করাতে পারিনি। নির্দিষ্ট দিনে এসে শুনছি, এক্স-রে প্লেট নেই।” কাটোয়ার মাধাইতলার সুবীর সরকারের অভিযোগ, “বহির্বিভাগে দীর্ঘক্ষণ বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেও ডাক্তারের দেখা পাইনি। আপনি আসার কিছু আগে তিনি এলেন।”
এ ভাবে রত্নাদেবী ও তাঁর দুই সঙ্গী যখন এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে যাচ্ছিলেন, সেই সময়ে তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মণ্ডল আজিজুল ও তাঁর কিছু অনুগামী দলীয় পতাকা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও ওই সাংসদের নামে স্লোগান দিচ্ছিলেন। রত্নাদেবী তাঁদের হাসপাতালে স্লোগান দিতে বারণ করেন। এক সময়ে বিরক্ত হয়ে বলেও ফেলেন, “আপনারা স্লোগান দিলে আমি হাসপাতাল পরিদর্শন করব না।” পরে তৃণমূলের ওই কর্মী-সমর্থকেরা সাংসদের কাছে স্মারকলিপি দেন। দলের কাটোয়া শহর সভাপতি পিপুল ঘোষ বলেন, “আমরা মূলত হাসপাতাল সুপার ও দালালচক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছি।”
হাসপাতাল পরিদর্শন সেরে যখন রত্নাদেবী ও অন্য দুই সদস্য কল্যাণ মুখোপাধ্যায় ও জ্বলি চৌধুরী যখন গাড়িতে উঠছেন, সেখানে এসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন আজিজুল মণ্ডল ও তাঁর অনুগামীরা। তাঁদের কথা না শুনলে গাড়ি ছাড়তে দেবেন না বলে দাবি করেন তাঁরা। সাংসদ নেমে এলে তাঁরা অভিযোগ করেন, হাসপাতালের পুরো জায়গা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয়নি। কিছু ফাঁকা জায়গা রয়েছে। সেখানে স্থানীয় লোকজন ওষুধের দোকান খুলেছেন।
বিকেলে কাটোয়া পুরসভায় চিকিৎসক, নার্স ও রোগী কল্যাণ সমিতির একটি বৈঠক হয়। সেখানে সাংসদ পাঁচিল না থাকার বিষয়টি নিয়ে সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চান। রোগী কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা যায়, সুপার বৈঠকে জানিয়েছেন, ১২-১৪ বছর আগে পাঁচিল দেওয়ার সময়েই স্থানীয় লোকজন কাজে বাধা দিয়েছিল। সেই সমস্যা এখনও মেটানো যায়নি। স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় আশ্বাস দেন, স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে পাঁচিলের ফাঁকা অংশ ভরাট করা হবে। বৈঠকে বিধায়ক হাসপাতালের খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ করেন। এ ছাড়া তিনি সিটি স্ক্যান যন্ত্র বসানোর প্রস্তাব দেন। |
রত্নাদেবী বলেন, “৩৪ বছরে অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছিল। এক বছরে তো সব কিছুর সমাধান হতে পারে না। অনেক অসুবিধার কথা শুনলাম। কেন্দ্রীয় বৈঠকে এ সব নিয়ে আলোচনা হবে।” তিনি জানান, এই হাসপাতালে ‘মিউজিক থেরাপি’ পদ্ধতি বেশ ভাল। লেবার রুমেও এই পদ্ধতি প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সাংসদের সামনে দলের কিছু লোকজনের বিক্ষোভে অবশ্য ক্ষুব্ধ তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “রত্নাদেবী দলের নেত্রী হিসেবে নয়, এক জন সাংসদ হিসেবে হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। দলের কয়েক জনের এমন আচরণ করা একেবারেই উচিত হয়নি।” দলের বর্ধমান জেলা পর্যবেক্ষক অলোক দাস বলেন, “আশা করি, বিক্ষোভ দেখানোর মতো পরিস্থিতি হয়নি। তা সত্ত্বেও মণ্ডল আজিজুল কেন এ রকম করলেন, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
|
ছবি তুলেছেন অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়। |